ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা কেন্দ্র ‘বন্ধ করছে' উত্তর কোরিয়া
১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৮উত্তর কোরিয়ার রাজধানী পিয়ংইয়ংয়ে কিম ও দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট মুন জায়ের বৈঠকে প্রতিবেশী দুই দেশের বিবদমান অনেকগুলো বিষয়ে মতৈক্য হয়েছে৷
তিনদিনের সফরে পিয়ংইয়ংয়ে আছেন দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট মুন৷ চলতি বছরে কিমের সঙ্গে তৃতীয় দফায় হচ্ছে তাঁর এই বৈঠক৷ গত জুনে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে কিম জং উনের বৈঠকের পর উত্তর ও দক্ষিণ কোরিয়ার মধ্যে বৈরিতা অবসানের চেষ্টা চলছে৷
বুধবার এক যৌথ বিবৃতিতে দুই কোরিয়ার নেতারা বেশ কয়েকটি বিষয়ে মতৈক্যের কথা তুলে ধরেন:
কোরীয় উপদ্বীপকে ‘পরমাণু অস্ত্র ও পরমাণু হুমকিমুক্ত একটি শান্তির জনপদে' রূপান্তরে একমত হয়েছেন তাঁরা৷
দুই দেশের প্রতিরক্ষা প্রধানরা জানিয়েছেন, একটি বাফার জোন এবং উড্ডয়ন নিষিদ্ধ এলাকা প্রতিষ্ঠা করা হবে৷ পাশাপাশি দুই দেশের বেসামরিক এলাকা পানমুনজোম গ্রামে তল্লাশি চৌকি প্রত্যাহার এবং স্থল মাইন তুলে নেওয়া হবে৷
‘নিকট ভবিষ্যতেই' সিউল সফরের অঙ্গীকার করেছেন কিম৷ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষে দুই কোরিয়া বিভক্ত হওয়ার পর দক্ষিণ কোরিয়ার রাজধানীতে উত্তরের কোনো নেতার এটাই হবে প্রথম সফর৷
মুন বলেছেন, বিদেশি পর্যবেক্ষকদের সামনে একটি গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেপণাস্ত্র স্থাপনা ‘স্থায়ীভাবে' নষ্ট করতে রাজি হয়েছে উত্তর কোরিয়া৷ এছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের কিছু পদক্ষেপ নেওয়ার শর্তে দেশটির প্রধান নিয়ংবিয়ন পরমাণু কমপ্লেক্স বন্ধ করতে রাজি হয়েছে তারা৷ তবে শর্তগুলো স্পষ্ট করা হয়নি৷
উভয় পক্ষই ২০৩২ সালের গ্রীষ্মকালীন অলিম্পিকের সহ-আয়োজক হতে রাজি হয়েছে৷
১৯৫০ থেকে ১৯৫৩ সাল পর্যন্ত চলা যুদ্ধে নিহত সৈন্যদের দেহাবশেষ খুঁজে পেতে যৌথভাবে অনুসন্ধান চালানো হবে বলে দুই দেশের প্রতিরক্ষা প্রধানরা জানিয়েছেন৷
সিঙ্গাপুরে ট্রাম্প-কিমের বৈঠকে উত্তর কোরিয়ার পরমাণু কর্মসূচি নিয়ে যে আলোচনার সূচনা হয়েছিল, তা এগিয়েছে বুধবারের এই বৈঠকে৷
গত বছর জাতিসংঘের মাধ্যমে উত্তর কোরিয়ার ওপর যে আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে, তার থেকে মুক্তি এবং আনুষ্ঠানিকভাবে ১৯৫০-১৯৫৩ কোরীয় যুদ্ধের অবসানের মধ্য দিয়ে একটি শান্তি চুক্তি চাইছে পিয়ংইয়ং৷ অপরদিকে উত্তর কোরিয়ায় ‘চূড়ান্তভাবে পরমাণু নিরস্ত্রীকরণ' চায় ওয়াশিংটন৷
উত্তর কোরিয়া পরমাণু নিরস্ত্রীকরণ চুক্তিতে ফিরতে মত দেওয়ার ত্রয়োদর্শ বর্ষপূর্তি ছিল বুধবার৷ এর মধ্যে ছয় দফায় পরমাণু অস্ত্র পরীক্ষা এবং দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা চালিয়েছে তারা৷
প্রাথমিক প্রতিক্রিয়া
নিউ ইয়র্কভিত্তিক রাজনৈতিক ঝুঁকি বিষয়ক পরামর্শক প্রতিষ্ঠান ইউরেসিয়া গ্রুপ বলেছে, বুধবারের এই বৈঠক ‘চমকপ্রদ শিরোনাম উপহার দেবে, কিন্তু উত্তর কোরিয়ার পরমাণু নিরস্ত্রীকরণ পদক্ষেপ এগিয়ে নিতে করবে সামান্যই'৷
মঙ্গলবার দক্ষিণ কোরিয়ার রক্ষণশীল ধারার পত্রিকা চোজান ইলবোর সম্পাদকীয়তে লেখা হয়েছে, ‘‘নেতাদের মধ্যকার চমক জাগানিয়া ঘটনাবলীতে অনেক মানুষই এখন হতাশ৷''
উত্তর কোরিয়া নিয়ে সংকটের সমাধানে এই অগ্রগতিকে ‘খুব আকর্ষণীয়' বলে অভিহিত করেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প৷ তবে তিনি বলছেন, ‘চূড়ান্ত সমঝোতার' জন্য উত্তর কোরিয়ার দিক থেকে পরমাণু স্থাপনা ধ্বংস এবং বিদেশিদের পর্যবেক্ষণের অনুমতি দেওয়ার অঙ্গীকার করতে হবে৷
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও আগামী ২৭ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে এ বিষয়ে অগ্রগতি তুলে ধরবেন বলে মন্ত্রণালয়ের এক মুখপাত্র জানিয়েছেন৷
জাপান সফররত ব্রিটেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জেরেমি হান্ট বলেছেন, উত্তর কোরিয়ার পরমাণু নিরস্ত্রীকরণের বিষয়ে স্পষ্ট প্রমাণ পেলেই তারা দেশটির ওপর জারি করা অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা শিথিল করতে প্রস্তুত৷উত্তর কোরিয়ার ঘনিষ্ঠ মিত্র চীন ওই বৈঠক শুরুর আগে বলেছে, নিরাপত্তা পরিষদের ‘যথা সময়ে' উত্তর কোরিয়ার ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারে পদক্ষেপ নেওয়া উচিত৷
‘‘সংঘাত এখন শেষ প্রান্তে,'' বলেন জাতিসংঘে চীনের রাষ্ট্রদূত মা ঝেআক্সু৷
এএইচ/এসিবি (এপি/এএফপি)