‘‘বলিউড এর নতুন হটগার্ল!! দেখুন তার ইউটিউব তোলপাড় করা একটি হট ভিডিও ক্লিপ!'' – এই শিরোনামযুক্ত একটি নিউজের লিংক, সঙ্গে এক নারীর তিনটি ছবি, যার একটিতে তার স্তন প্রায় অনাবৃত৷ বাংলাদেশের এক আলোচিত মডেলের পরীক্ষিত ফেসবুক পাতা থেকে পোস্ট করা এই লিংকে আগ্রহ নিয়ে, ভুল করে কিংবা কৌতূহল বসে অনেকে ক্লিক করতে পারেন৷ কিন্তু ক্লিকের পর তারা কী দেখবেন জানেন?
সুনির্দিষ্ট লিংকটিতে ক্লিক করে দেখা গেলো, অগুনতি অনলাইন বিজ্ঞাপনে ঠাসা একটি পাতায় শিরোনামটি আরো কয়েকবার লেখা রয়েছে, আর রয়েছে একটি ইউটিউব ভিডিও, যার সঙ্গে শিরোনামের কোনো সম্পর্কই নেই৷ ভিডিওটি হচ্ছে ভারতে কিভাবে মেয়েদের অভিনয়ের নামে প্রতারণার শিকার করা হচ্ছে সেই বিষয়ে সচেতনতামূলক একটি সস্তা তথ্যচিত্র৷ আর তাতে অনাবৃত স্তনের মেয়েটারও কোনো উপস্থিতি নেই৷
প্রশ্ন আসতে পারে, এমন লিংক তাহলে কেন শেয়ার করা হয়? উদ্দেশ্য সস্তায় কিছু পয়সা কামানো৷ লিংক যে পাতায় চলে যাচ্ছে, সেখানে থাকা বিজ্ঞাপনে কেউ যদি ক্লিক করেন তাহলে ওয়েবসাইটটির মালিক কিছু টাকা পাবেন, আর ইউটিউব ভিডিওটি দেখলে সেখানে প্রদর্শিত বিজ্ঞাপন থেকে টাকা পাবেন, যিনি সেটা পোস্ট করেছেন সেই ব্যক্তি৷
এই পুরো প্রক্রিয়ায় যার সঙ্গে প্রতারণা করা হচ্ছে, তিনি হচ্ছেন যে লিংকে ক্লিক করেছেন সেই ব্যক্তি৷ যে ফেসবুক পাতা থেকে লিংকটি পোস্ট করা হয়েছে, সেটির অনুসারীর সংখ্যা ১৫ লাখের বেশি৷ ফল বোঝাই যায়, সেখান থেকে প্রকাশিত নিউজের লিংকে ক্লিক করা মানুষের সংখ্যা নেহাত কম নয়৷
বাংলা অনলাইন দুনিয়ায় ভুয়া শিরোনাম আর ছবি দিয়ে নিউজ বানানো ওয়েবসাইটের সংখ্যা এখন অনেক৷ এ সব সাইট দীর্ঘমেয়াদি হয়না, তবে যেটুকু সময় চালু থাকে, ততক্ষণে মানুষকে বিভ্রান্ত করে, বোকা বানিয়ে, অনেক সময় ভাইরাস বা ক্ষতিকর প্রোগ্রাম ডাউনলোডে বাধ্য করে ভালোই পয়সা কামিয়ে নেয়৷
এত গেলো অখ্যাত অনলাইন পত্রিকার কথা, এবার মোটামুটি বিখ্যাত একটি পত্রিকার দিকে তাকানো যাক৷ বাংলাদেশে সম্প্রতি এক পুলিশের স্ত্রীকে হত্যা করা হয়েছে৷ আলোচিত সেই হত্যাকাণ্ডের প্রতি মানুষের আগ্রহ অনেক৷ হঠাৎ জানা গেল, সেই পুলিশকে রাতের আধারে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নিয়ে গেছে গোয়েন্দারা৷ ব্যস, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শুরু নানারকম জল্পনা-কল্পনা৷ এরই মধ্যে নামকরা অনলাইন পত্রিকাটিতে প্রকাশ করা হলো, ‘‘চাচাতো ভাই সাইফুলকে নিয়ে স্ত্রী খুনের ছক বাবুল আক্তারের!'' ফেসবুকে মুহূর্তের ছড়িয়ে গেল খবরটা৷ সেই পুলিশের সমালোচনায় সোচ্চার হলেন অনেকে৷ অথচ কোন রকম বিশ্বাসযোগ্য সূত্র ছাড়াই এই নিউজ প্রকাশ করে পত্রিকাটি, যদিও সেই পুলিশকে কিছুক্ষণ পরেই ছেড়ে দেয় গোয়েন্দারা৷
অনলাইন পত্রিকাটি এই শিরোনাম অবশ্য খানিক পরে বদলে ফেলেছে, তবে যতক্ষণ সেই শিরোনাম ছিল, ততক্ষণে অনেক মানুষ তাদের লিংকে ক্লিক করেছে, আর তাতে তাদের অনলাইন রেটিং বেড়েছে, বেড়েছে বিজ্ঞাপনের রেট৷
ফেসবুকে এরকম বিভ্রান্তিকর, প্রতারণামূলক শিরোনাম প্রতিনিয়তই দেখা যায়৷ অখ্যাত, বিখ্যাত, পরীক্ষিত বিভিন্ন পাতা থেকে সেসব প্রকাশ করা হয় শুধুমাত্র কিছুটা বাড়তি ক্লিক পাবার আশায়৷ অথচ এই অনৈতিক চর্চা মানুষের কতটা ক্ষতি করছে, কতটা নেতিবাচক প্রভাব তাদের উপর পড়ছে, তা নিয়ে এ সব পত্রিকায় কাজ করা মানুষদের কোনো মাথাব্যথা নেই৷ প্রশ্ন হচ্ছে, তাদের নৈতিকতা শেখাবে কে?
আপনার কি কিছু বলার আছে? লিখুন নীচের মন্তব্যের ঘরে৷