ক্লান্ত হাসিনা- দুর্বল বাংলাদেশ
১১ অক্টোবর ২০১৯প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফর নিয়ে বিরোধীরা এখনও প্রায় একই সুরে কথা বলার চেষ্টা করছে৷ বিশেষ করে তিস্তা চুক্তি না হওয়ার পরও ত্রিপুরার সাব্রুমের মানুষের জন্য ফেনী নদীর পানি দেয়ার সমালোচনা হচ্ছে৷
তবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলছেন, ‘‘কেউ পান করার জন্য পানি চাইলে তা না দিলে কেমন দেখায়৷'' এছাড়া সামান্য পানি দেওয়া হয়েছে বলেও জানান তিনি৷ পানি বিশেষজ্ঞদের মধ্যে অনেককেও বলতে দেখলাম, ১.৮২ কিউসেক পানি দেয়ার যে চুক্তি হয়েছে, তাতে বাংলাদেশের তেমন ক্ষতি হওয়ার কথা নয়৷
হয়ত তাঁরা ঠিকই বলছেন৷ কিন্তু আমার কাছে মনে হচ্ছে, পানির পরিমাণ এখানে মুখ্য নয়৷ মূল হচ্ছে, আমরা তাদের কাছ থেকে পানি না পেলেও তাদের পানি দিলাম৷ বিষয়টা এখানে প্রতীকী৷
তিস্তার পানি না পাওয়ায় যেখানে বাংলাদেশের অনেক মানুষ সমস্যায় পড়ছেন, সেখানে ত্রিপুরার সাব্রুমে সমস্যায় আছেন মাত্র কয়েক হাজার মানুষ৷
এবার ভারত সফরে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তিস্তা চুক্তির ব্যাপারে নতুন কোনো কথা শোনেননি৷ অনেকদিন ধরেই ভারত যেমনটা আশার কথা শুনিয়ে আসছিল, এবারও সেটাই হাসিনাকে শুনিয়েছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী৷
অথচ তিস্তা চুক্তি হওয়ার পথে যিনি মূল বাধা, পশ্চিমবঙ্গের সেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির সরকার সাম্প্রতিক নির্বাচনের পর কিছুটা দুর্বল হয়ে পড়েছে৷ এই অবস্থায় মোদীর পক্ষে মমতাকে তিস্তার ব্যাপারে রাজি করানো হয়ত সহজ ছিল৷ কিন্তু তেমনটা দেখা গেল না৷
তাহলে টানা তিনবার ক্ষমতায় এসে হাসিনা কি ক্লান্ত হয়ে পড়েছেন? ভারতকে যথেষ্ট চাপ দেয়ার মতো শক্তি পাচ্ছেন না কেন? ২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসার পর তিনিই তো তিস্তা চুক্তি না হলে ভারতকে ট্রানজিট না দেয়ার হুমকি দিয়েছিলেন৷ ঢাকায় ভারতের সেই সময়কার হাইকমিশনারকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ডেকে নিয়ে বাংলাদেশের এমন মনোভাবের কথা জানানো হয়েছিল৷
এছাড়া প্রথমবার ক্ষমতায় থাকার সময়ই ভারত ও মিয়ানমারের সঙ্গে সমুদ্রসীমা নিয়ে বিরোধ মেটাতে আন্তর্জাতিক আদালতে গিয়েছিলেন হাসিনা৷ ছিটমহল নিয়ে বিরোধ মেটানোর উদ্যোগ নিয়ে সফলও হয়েছিলেন তিনি৷
আর ১৯৯৬ সালে হাসিনা ক্ষমতায় থাকার সময়ই ফারাক্কা চুক্তি হয়ছিল৷
কিন্তু এখন কী এমন হলো যে, ভারতের সঙ্গে আর জোর করা যাচ্ছেনা! এক হতে পারে, এতদিন ক্ষমতায় থেকে হাসিনা ক্লান্ত হয়ে পড়েছেন৷ কারণ ক্ষমতায় থাকা নিশ্চিত করতে অনেক কিছু সামলাতে হয়, অনেক কৌশল নিতে হয়, অনেক ষড়যন্ত্রের মোকাবিলা করতে হয়৷ দিনের পর দিন সেটা করে যাওয়াটা অবশ্যই ক্লান্তির৷
আর নয়তো বিতর্কিত নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসার কারণে মানসিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়েছেন হাসিনা৷ ফলে এখন আর জোর করে কথা বলার মতো শক্তি পাচ্ছেন না৷
কারণ যেটিই হোক, হাসিনার এমন অবস্থার কারণে দরকষাকষিতে বাংলাদেশ দুর্বল হয়ে পড়ছে৷ আমজনতার কাছে এই বিষয়টিই চিন্তার৷
প্রিয় পাঠক, আপনার কি কিছু বলার আছে? লিখুন নীচের মন্তব্যের ঘরে৷