‘ক্রসফায়ার’ প্রভাবশালীদের বাঁচিয়ে দিল!
২ আগস্ট ২০১৩সোমবার গভীর রাতে গুলশানের শপার্স ওয়ার্ল্ড-এর সামনে গুলি করে হত্যা করা হয় শাসক দল আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন যুবলীগ নেতা রিয়াজুল হক খান মিল্কিকে৷ সিসি টিভি-র ফুটেজে পুরো হত্যাকাণ্ডের ঘটনার রেকর্ড থেকে যায়৷ আর তা সংবাদমাধ্যম প্রকাশ করলে সারা দেশে তীব্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়৷ কারণ ঘাতকরা আবার যুবলীগেরই নেতা৷ তাদের মধ্যে যুবলীগ নেতা জাহিদ সিদ্দিকী তারেককে আহত অবস্থায় উত্তরার একটি হাসপাতালে আটক করে ব়্যাব৷ ব়্যাব দাবি করে যে বুধবার রাত ১০টার দিকে তাঁকে পুলিশের কাছে হস্তান্তরের জন্য নেয়ার পথে কুড়িল এলাকায় তাদের ওপর হামলা করে সন্ত্রাসীরা৷ এরপর উভয় পক্ষের বন্দুক যুদ্ধে তারেক এবং তাঁর সহযোগী শাহ আলম নিহত হন৷ ব়্যাবের দাবি, তারেককে সন্ত্রাসীরা ছিনিয়ে নেয়ার চেষ্টা করছিল৷
ব়্যাবের গোয়েন্দা বিভাগের প্রধান লে. কর্ণেল জিয়উল আহসান ডয়চে ভেলেকে জানান, সিসি টিভি-র ফুটেজে যে ব্যক্তি মিল্কিকে গুলি করছে বলে দেখা যায় সেই হলো তারেক৷ তবে মানবাধিকার সংগঠন অধিকার-এর সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আদিলুর রহমান খান শুভ্র ডয়চে ভেলেকে জানান, এই ‘ক্রসফায়ার'-এর ঘটনা নিয়ে কয়েকটি প্রশ্ন সহজেই তোলা যায়৷ ব়্যাব কেন তারেককে রাতের বেলায় পুলিশের কাছে হস্তান্তর করতে গেল৷ তাঁর মতো একজন ‘অপরাধী'-কে নিয়ে চলাচলের সময় কেন পর্যাপ্ত ফোর্স নেয়া হয়নি৷ আর এতেই বোঝা যায় যে এটা একটি সাজানো নাটক৷
তিনি বলেন, এই হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের মধ্যে তারেকই যে শেষ ব্যক্তি, তা নয়৷ সংবাদমাধ্যমে এরই মধ্যে শাসক দলের আরো অনেক প্রভাবশালীদের কথা বলা হয়েছে নেপথ্যের ইন্ধন দাতা হিসেবে৷ বলা হয়েছে মিল্কি টেন্ডার বাজির বলি হয়েছেন৷ তাই তারেক বেঁচে থাকলে এবং তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে আরো অনেকের নাম জানা যেত৷ বেড়িয়ে আসত নেপথ্যের আরো অনেক ঘটনা৷ হয়ত আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তা জানতো৷ তাই শাসক দলের প্রভাবশালী কাউকে বাঁচাতে অথবা বিব্রতকর পরিস্থিতি থেকে বাঁচাতে এই বন্দুক যুদ্ধের ঘটনা সাজানো হয়েছে৷
আদিলুর রহমান খান বলেন, ক্রসফায়ার সমর্থনযোগ্য নয়৷ ক্রসফায়ার কোনো পক্ষের ন্যায় বিচার নিশ্চিতও করে না৷ তাঁর মতে, এর মাধ্যমে নিহত মিল্কির পরবিারও ন্যায় বিচার থেকে বঞ্চিত হবে৷ কারণ, অনেক তথ্য আর জানা যাবে না৷
এদিকে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান ড. মিজানুর রহমান ডয়চে ভেলেকে জানান, এই প্রশ্ন ওঠা খুবই স্বাভাবিক যে তারেককে ক্রস ফয়ারে দিয়ে মূল অপরাধীদের আড়াল করা হলো কিনা৷ কোনো বড় অপরাধীকে বাঁচাতে এই ক্রসফায়ারের নাটক সাজানো হতে পারে৷ কারণ তারেক বেঁচে থাকলে তাদের নামও প্রকাশ করত৷ তিনি বলেন, তারেকের কাছ থেকে যে তথ্য পাওয়া যেত তা মামলার তদন্তে সহায়তা করত৷ তাঁর কথায়, গত কয়েকদিনে তারেকসহ আরো কয়েকটি ক্রসফায়ারের ঘটনা ঘটেছে৷ এতে মানবাধিকার কমিশন উদ্বিগ্ন৷ কমিশন বৃহস্পতিবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে চিঠি দিয়ে এই উদ্বেগের কথা জানিয়েছে৷ ড. মিজান বলেন, বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়৷ দেখে শুনে মনে হচ্ছে যে, একদল অপরাধীকে আড়াল করতে আরেক দলকে ক্রসফায়ারের বলি করা হচ্ছে৷