ক্যাসিনো কি বৈধতা পাবে?
২৫ সেপ্টেম্বর ২০১৯বিশ্ব পর্যটন দিবস উপলক্ষে মঙ্গলবার সচিবালয়ে সংবাদ সম্মেলনে পর্যটন সচিব মো. মহিবুল হক বলেন, ‘‘ক্যাসিনো নিয়ে অনেক কথা হচ্ছে, তবে ক্যাসিনো পর্যটকদের জন্য দরকার৷ আমরা তো তাদের জন্য এ ধরনের সুযোগ-সুবিধা দিতে পারছি না৷ আমরা যেখানে এক্সক্লুসিভ ট্যুরিস্ট জোন করবো, সেখানে বিদেশিদের জন্য এসব সুযোগ-সুবিধা থাকবে৷’’
তবে একই দিন বিকালে ঢাকায় এক অনুষ্ঠানে অর্থমন্ত্রী আহম মুস্তাফা কামাল পর্যটন সচিবের কথার জবাবে বলেন, ‘‘ক্যাসিনো হচ্ছে একটা জুয়া৷ জুয়া তো টোটালি ইলিগ্যাল৷ আমাদের দেশে কোনোভাবেই জুয়া চলে না৷’’
পর্যটকদের আকৃষ্ট করতে কক্সবাজারে ক্যাসিনো করা হবে কিনা জানতে চাইলে সাংবাদিকদের অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘‘দেশের বাইরে যে নিয়ম-কানুন আছে, সেগুলো তো আমাদের দেশে চলবে না৷ ক্যাসিনো তো চলতেই পারে না৷ অবৈধ কাজ তো সরকার আইন করে বৈধ করবে না৷’’ পর্যটন সচিব বৃহস্পতিবার ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আমি বিদেশি পর্যটকদের জন্য বিশেষ জোন করে ক্যাসিনো করার প্রয়োজনীয়তার কথা বলেছি৷ এটা আমার নিজস্ব মতামত৷ এটা নিয়ে আমি সরকারকে কোনো প্রস্তাব দেইনি বা সরকারও কোনো উদ্যোগ নিয়েছে বলে আমার জানা নেই৷’’
তাঁর মতে, ‘‘বাংলাদেশে যে বিদেশি পর্যটকরা আসেন, তাঁদের তো রিক্রিয়েশনের সুযোগ দিতে হবে৷ ক্যাসিনো না থাকলে তারা যাবেন কেথায়? যখন তারা কক্সবাজরে যান, তখন তাদের কিছু করার থাকে না৷ আমাদের পাশের দেশগুলোতেও ক্যাসিনো আছে৷ এখন এসব কথা বললে তো সবাই আপনার-আমার বিরুদ্ধে লেগে যাবে৷ আমার অভিমত হচ্ছে, বিশেষ টুরিস্ট জোন করে সেখানে বিদেশিদের পরিচয় নিশ্চিত হয়ে ক্যাসিনোর সুযোগ দেয়া যায়৷’’
তিনি আরো বলেন, ‘‘আমাদের ক্যাসিনোর আইন নেই৷ সরকার চাইলে এটার অনুমোদন দিতে পারে৷ আর এটা বাংলাদেশি নাগরিকদের জন্যও হতে পারে৷ আমি কোনো সমস্যা দেখি না৷ তবে এর বিরুদ্ধে অনেক মত আছে৷ পক্ষেও আছে৷ আমাদের দেশের নাগরিকরা বিদেশে গিয়ে তো ক্যাসিনোতে যান৷’’
বিশেষ পর্যটন জোন প্রয়োজন বলে মনে করেন পর্যটন বিচিত্রার সম্পাদক এবং টুর অপারেটর মহিউদ্দিন হেলাল৷ তিনি বলেন, ‘‘ওইসব এক্সক্লুসিভ পর্যটন জোনে প্রিমিয়াম সুবিধা হিসেবে ক্যাসিনো থাকতে পারে৷ বিদেশি পর্যটকদের আমরা এই সুবিধা না দিলে তাঁরা একবার এই দেশে এসে দ্বিতীয়বার আর আসার চিন্তা করবেন না৷ আর এই ক্যাসিনো সুবিধা যেসব বাংলাদেশি নাগরিকের সক্ষমতা আছে, তারাও নিতে পারেন৷ প্রিমিয়ার সুবিধা সবার জন্য নয়৷ সবাই কি পাঁচতারা হোটেলে যেতে পারেন? যারা পারেন তারা যান৷’’
আইনজীবী মনজিল মোরসেদ বাংলাদেশের নাগরিকদের জন্য এই দেশে ক্যাসিনো বা জুয়ার বিরুদ্ধে৷ তিনি বলেন, ‘‘সংবিধানে স্পষ্ট করেই মদ, জুয়া বন্ধের কথা বলা আছে৷ সামান্য শাস্তি হলেও জুয়ার বিরুদ্ধে আইন আছে৷ ক্যাসিনো তো জুয়া৷ তবে বিদেশি পর্যটকদের জন্য এর ব্যবস্থা করা যায়৷ আইনে তা করার সুযোগও আছে৷ বাংলাদেশে বিদেশিরা তো অনেক সুবিধা পান যা দেশের প্রচলিত আইনে এখানকার নাগরিকরা পান না৷ ফাইভ স্টার হোটেলে তাদের এসব রিক্রিয়েশনের সুযোগ আইনের মধ্যেই দেয়া হয়৷’’
তিনি বলেন, ‘‘তবে এখন যে ক্যাসিনো নিয়ে কথা হচ্ছে সেটা বিনোদনের কিছু নয়৷ একটি চক্র অবৈধভাবে টাকা আয়ের একটা মাধ্যম হিসেবে নিয়েছে৷ তারা ক্লাবে, ঘরে ক্যাসিনো বসিয়েছে৷ এতে দেশের অনেক ক্ষতি হচ্ছে৷ যারা এই ধরনের ক্যাসিনোর কথা বলছেন, তারা ওই অবৈধ অর্থের পক্ষ নিয়েই কথা বলছেন বলে আমার মনে হয়৷ এই ধরনের ক্যাসিনো কোনোভাবেই চলতে পারে না৷ আইনগত বৈধতা দেয়ার প্রশ্নই আসে না৷’’