‘ক্যাম্পগুলোতে রোহিঙ্গাদের ভবিষ্যৎ নেই’
১৭ মার্চ ২০১৯১৯৭৩ সালে মিয়ানমারে এক রোহিঙ্গা পরিবারে জন্ম নেন রাজিয়া৷ যদিও বেড়ে উঠেছেন বাংলাদেশেই৷ ২০১৪ সাল থেকে এই আইনজীবী রোহিঙ্গাদের মানবাধিকার নিয়ে কাজ করছেন৷ চলতি বছর তিনি যুক্তরাষ্ট্রের ইন্টারন্যাশনাল উইম্যান অফ কারেজ অ্যাওয়ার্ড বিজয়ী হয়েছেন৷ রয়টার্সকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে রাজিয়া বাংলাদেশে বসবাসরত রোহিঙ্গাদের পরিস্থিতি নিয়ে তাঁর মতামত তুলে ধরেন৷
রাজিয়া মনে করেন, ক্যাম্পে রোহিঙ্গাদের জীবনের আশা-আকঙ্খা ক্রমশ ফিকে হয়ে আসছে৷ তিনি বলেন, ‘‘হ্যাঁ, এটা ঠিক যে তারা খাবার পাচ্ছে৷ কিন্তু সেটাই যথেষ্ট নয়৷ এটা ঠিক চিড়িয়াখানার মতো যেখানে মানুষ খাবার আর বেড়ে ওঠার সুযোগ পাচ্ছে৷ কিন্তু সেখানে কোনো ভবিষ্যৎ নেই৷''
২০১৪ সাল থেকে রাজিয়া রোহিঙ্গা নারী ও শিশুদের নিয়ে সরাসরি কাজ করতে শুরু করেন৷ ২০১৬ সালে তিনি মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে যৌন নির্যাতনের শিকার কয়েকশ' রোহিঙ্গার সাক্ষাৎকার নিয়ে দু'টি প্রতিবেদন প্রকাশ করেন৷ যার প্রেক্ষিতে ক্যাম্পগুলোতে নারীদের কাউন্সেলিংয়ের জন্য ২০১৭ সালে তিনি রোহিঙ্গা উইম্যানস ওয়েলফেয়ার সোসাইটি নামে একটি সংগঠন গড়ে তোলেন৷ গৃহ নির্যাতন ও বাল্য বিবাহের মতো সমস্যা দূর করতে স্বেচ্ছাসেবীদের প্রশিক্ষণও দিয়ে থাকে তাঁর এই সংগঠন৷
‘‘রোহিঙ্গা নারীদের আপনি সুযোগ আর একটু নিরাপত্তা দিয়ে দেখুন, তাঁরা আপনাকে অবাক করে দেবে,'' বলছিলেন সুলতানা৷ ‘‘আমি যখন প্রথম কাজ শুরু করি তখন সবমিলিয়ে পাঁচজনকে আমার এই উদ্যোগে যোগ দিতে আগ্রহী হয়৷ এখন আমাদের সাথে ৬০ জন স্বেচ্ছাসেবী রয়েছেন, যাঁরা অসাধারণ কাজ করছেন৷ তাঁরা আমাকে বাল্যবিবাহ, পারিবারিক নির্যাতন, কিংবা ক্যাম্পগুলোতে পাচারের ঝুঁকি সম্পর্কে অবহিত করে থাকেন৷''
ভয়ের অনুভূতি
সুলতানা মনে করেন ক্যাম্পে কোনো ধরনের আশা না থাকায় পাচারের মতো ঘটনা বাড়ছে৷ এই অপারাধের বিরুদ্ধে বাংলাদেশকে কঠোর পদক্ষেপ নেয়ারও আহ্বান জানান তিনি৷ পুলিশের নথিও বলছে একশ'রও বেশি রোহিঙ্গাকে শুধু এই বছরই পাচার হওয়া থেকে উদ্ধার করা হয়েছে৷
‘‘ক্যাম্পের বাসিন্দারা পাচারের সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে তথ্য দিতে চায় না৷ কেননা এ জন্য হত্যার শিকার হোক সেটা কেউ চাইবে না৷ তাঁদের মধ্যে একটা ভয়ের অনুভূতি রয়েছে৷'' বলছিলেন রাজিয়া৷ ‘‘পাচার বন্ধ করাটা খুব কঠিন, কেননা উন্নততর জীবনের জন্য তাদের একটি বড় অংশই মরিয়া হয়ে আছে৷''
রাজিয়া জানান, ক্যাম্পে বসবাসরত তরুণদের রোহিঙ্গা পরিচিতি ধরে রাখতে সাহায্য করাই তাঁর পরবর্তী পরিকল্পনা৷
‘‘যুক্তরাষ্ট্র সরকার আমাকে রোহিঙ্গা হিসেবে চিহ্নিত করেছে, এটা একটা বড় ব্যাপার৷ যেখানে রোহিঙ্গাদের স্বীকৃতির বিষয়টিই আন্তর্জাতিক অঙ্গনে দীর্ঘদিন ধরে উপেক্ষিত,'' বলছিলেন তিনি৷
এফএস/ডিজি (রয়টার্স)
প্রতিবেদনটি কেমন লাগলো? আপনার মন্তব্য লিখুন নীচের ঘরে৷