ক্যানসার মোকাবিলায় ইমিউন থেরাপি
৬ এপ্রিল ২০১৫জলিদ সেহুলি বার্লিনের ‘শারিটে' হাসপাতালে স্ত্রীরোগ বিভাগের অধ্যাপক৷ সেহুলি বলেন, ‘‘যে কোনো ডাক্তারের দৈনন্দিন জীবনে অন্যতম কঠিন কাজ হলো রোগীকে ক্যানসারের খবর দেওয়া এবং তার অসহায় প্রতিক্রিয়া দেখা৷ তারপর তাকে প্রয়োজনীয় তথ্য দিয়ে, আশ্বাস দিয়ে পথ দেখাতে হয়৷''
এই পথের প্রথম পদক্ষেপ হলো অপারেশন৷ ডাক্তাররা টিউমার টিস্যু যতটা সম্ভব বিচ্ছিন্ন করার চেষ্টা করেন৷ এরপর কেমোথেরাপির মাধ্যমে ক্যানসারের বাকি কোষ নষ্ট করতে হয়৷ কিন্তু তার ফলে সুস্থ কোষেরও ক্ষতি হয়৷ অপারেশন ও কেমোথেরাপির মাধ্যমে নিরাময় সম্ভব নয়, শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতাকেই সেই কাজ করতে হয়৷ সেহুলি বলেন, ‘‘আমরা জানি, অপারেশন ও কেমোথেরাপি কার্যকর হয়, কিন্তু তার প্রভাব হয় সাময়িক৷ টিউমারটিকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে, তার আবার বেড়ে ওঠা বন্ধ করতে তার আশেপাশে প্রতিরোধ প্রক্রিয়ার প্রয়োজন হয়৷''
তাই অপারেশনের ঠিক পরেই ল্যাবে টিউমার টিস্যু পরীক্ষা করা হয়৷ গবেষকরা এর মধ্যে জানতে পেরেছেন, যে মানুষের ইমিউন সিস্টেম-ই টিউমার মোকাবিলা করতে পারে৷ কিন্তু সবার আগে টিউমার-কে শত্রু হিসেবে চিহ্নিত করতে হবে৷ ক্যানসারের মোকাবিলায় নতুন ইমিউন থেরাপির মূলমন্ত্র হলো এটি৷ একটি উপায় হলো ইনফিউশনের মাধ্যমে অ্যান্টিবডি-কে জাগিয়ে তোলা৷ অ্যান্টিবডি টিউমার কোষে ‘ডকিং' করে দুটি প্রতিরোধী কোষকে কাছে টেনে নেয়৷
তারা টিউমারের মোকাবিলা শুরু করে আরও প্রতিরোধী কোষ আকর্ষণ করে৷ এর ফলে টিউমার নষ্ট হয় না বটে, কিন্তু বশে এসে যায়৷ সাময়িক পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হিসেবে রোগীদের শরীরে জ্বরের মতো প্রতিক্রিয়া দেখা যায়৷ সেহুলি বলেন, ‘‘হোস্ট অরগ্যানিজমের তেমন ক্ষতি না করেও ইমিউন থেরাপির মাধ্যমে ক্যানসারের সুনির্দিষ্ট চিকিৎসা যে সম্ভব, গত কয়েক বছরে স্পষ্ট হয়ে গেছে৷''
ইমিউন থেরাপি এখনো পরীক্ষামূলক স্তরে রয়েছে৷ বছরখানেক আগে ক্যানসার ধরা পড়ার পর এক রোগী এই পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছেন৷ তিনি প্রতি বছর নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করাতেন৷ তারপর শিরায় রক্ত জমাট বাঁধতে শুরু করলো৷
অপারেশন, কেমোথেরাপির পর এবার ইমিউন থেরাপি৷ এখন আশার আলো দেখা যাচ্ছে৷ সেই রোগী স্বীকার করেন, ইমিউন থেরাপি এখনো চূড়ান্ত পর্যায়ে আসেনি৷ অনেকটা বানের জলের খড়-কুটা আঁকড়ে ধরার মতো৷ তবে আমার উপকার হচ্ছে৷
জলিদ সেহুলির জন্য নতুন ইমিউন থেরাপি খড়-কুটার থেকে অনেক বড় বিষয়৷ টিউমার সংক্রান্ত তথ্যভাণ্ডারে পাঁচ হাজারেরও বেশি রোগীর টিউমার টিস্যু মাইনাস ১৮০ ডিগ্রি তাপমাত্রায় সংরক্ষিত আছে৷
ইমিউন থেরাপির ক্ষেত্রে অগ্রগতি ঘটলে আগে এই টিস্যুর উপর পরীক্ষা চালিয়ে জানা যাবে, কোনো রোগীর ক্ষেত্রে তা কাজে লাগবে কি না৷ সেহুলি বলেন, ‘‘আমার কোনো সাধ পূরণ করা গেলে বলতাম, ক্যানসার সম্পর্কে কিছু বদ্ধমূল ধারণা আগে দূর করা হোক৷ কারণ মানুষের অস্তিত্বের শুরু থেকেই এই রোগ থাকা সত্ত্বেও অনেক ভুল ধারণা প্রচলিত রয়েছে৷ গবেষণার সাহায্যে আমরা প্রত্যেক রোগীর বিশেষ প্রয়োজন অনুযায়ী সুনির্দিষ্ট চিকিৎসা দিতে পারি, সেটাই আমি চাই৷''
জলিদ সেহুলির আশা, ক্যানসার রোগীরা নতুন ইমিউন থেরাপির মাধ্যমে আরও ভালোভাবে এই রোগের সঙ্গে ঘর করতে পারবেন৷ ভবিষ্যতের এই দিশা আজই বাস্তব হয়ে উঠতে শুরু হয়ে গেছে৷