কোথায় ক্রিস্টিয়ানো রোনাল্ডো?
২৩ জুন ২০১৪জার্মানি পর্তুগালকে হারাল ৪-০ গোলে, টোমাস ম্যুলারের হ্যাট্রিকে; জার্মানির দ্বিতীয় খেলা ছিল ঘানার বিরুদ্ধে৷ সে খেলাতে জার্মানি হারতে হারতে বেঁচে গেছে, কোচ ইওয়াখিম ল্যোভ বিপদ দেখে বাস্টিয়ান শোয়াইনস্টাইগার ও মিরোস্লাভ ক্লোজেকে বিকল্প হিসেবে নামানোর ফলে৷ মাঠে নামার চার সেকেন্ডের মধ্যে সুযোগসন্ধানী ক্লোজে শুধুমাত্র পা ঠেকিয়ে জার্মানির দ্বিতীয় গোলটি করেন৷ খেলার স্কোর দাঁড়ায় ২-২৷
অপরদিকে পর্তুগাল বলতে ফিফার ওয়ার্ল্ড প্লেয়ার অফ দ্য ইয়ার ক্রিস্টিয়ানো রোনাল্ডোর কথা মনে হওয়াই স্বাভাবিক৷ বলতে কি, একা কুম্ভ রক্ষা করে নকল বুঁদির গড়, রবি ঠাকুর লিখে গেছেন বটে, কিন্তু একা কুম্ভ নকল বুঁদির গড় জয় করতে পারে কিনা, সেটা কোথাও লেখা নেই৷ এছাড়া কোচ ইয়ুর্গেন ক্লিন্সমানের দলকে নকল বুঁদির গড় মনে করাটাই ভুল, সেটা তারা এ যাবৎ প্রতিটি খেলাতে প্রমাণ করে দিয়েছে৷
গত রবিবারের খেলাও তার কোনো ব্যতিক্রম ছিল না৷ তা-তে আশ্চর্য হবার কিছু নেই: মার্কিন দলের আর কিছু থাক বা না থাক, তাদের টিম এবং ফাইটিং স্পিরিট প্রবাদপ্রতিম৷ সেই সঙ্গে যোগ হয়েছে ক্লিন্সমানি কায়দার অ্যাটাকিং ফুটবল, সহজ, সরল, ঋজু, নির্ভীক এবং দ্রুত৷ পর্তুগিজরা তাদের যাবতীয় অভিজ্ঞতা ও চাতুর্য দিয়ে সে পাগলা ঘোড়াকে সামলাতে পারেনি৷ বিশেষ করে তাদের ভীষ্মদেব যখন শরশয্যায়: রোনাল্ডোর হাঁটুর চোট সেরেছে কি সারেনি, কে বলবে?
বলবে এই বিশ্বকাপের ইতিহাস: রোনাল্ডোকে অ্যামেরিকার বিরুদ্ধে যেরকম খেলতে দেখা গেছে, বার দুই ঝলসে উঠে অপরূপ ড্রিবল করতে দেখা গেছে, তা-তে তিনি চোটমুক্ত – কিন্তু তাঁর নেওয়া গোলের শটগুলো? সেগুলো ছিল চটজলদি, বেখাপ্পা, ওয়াইড অফ দ্য টার্গেট৷ এ তো আমাদের চেনা রোনাল্ডো নন৷ তবুও খেলার ৩০ সেকেন্ড বাকি থাকতে একটি অসাধারণ পাস দিলেন রোনাল্ডো, মাঠের ডান সীমান্ত থেকে কেটে একেবারে ডান দিকের গোলপোস্টে৷ বিকল্প খেলোয়াড় সিলভেস্ত্রে ভ্যালেরা উড়ে এসে হেড করে সেটাকে গোলে ঢুকিয়ে দিলেন৷ এ এমন একটি পাস, যার সম্বন্ধে ক্লিন্সমান স্বয়ং বলেছেন: ‘‘মাঠে আমাদের তিন-তিনটে সেন্টার-ব্যাক থাকা সত্ত্বেও তারা রোনাল্ডোর ঐ ক্রসটা আটকাতে পারেনি৷ ওটা ছিল খুব ভালো একটা ক্রস৷''
জার্মানিতে খেলাটা দেখানো হচ্ছিল মাঝরাতে৷ তা সত্ত্বেও যারা রাত জেগে খেলাটা দেখেছেন – এবং যাঁদের মনে রোনাল্ডো সম্পর্কে সামান্যতম প্রেম-প্রীতি-ভালোবাসা আছে কিংবা ছিল – তাঁরা বলবেন, ক্যাপ্টেন হিসেবে রোনাল্ডো তাঁর দলকেই গুরুত্ব দিয়েছেন, নিজের গোল করাটাকে নয়৷ দ্বিতীয়ত, রেয়াল মাদ্রিদের খেলোয়াড় হিসেবে রোনাল্ডো তাঁর সতীর্থদের কাছ থেকে যে ধরনের পাস পেয়ে থাকেন, তাঁদের সাথে তিনি যেভাবে বল বিনিময় করে বিদ্যুৎগতিতে পোনাল্টি এরিয়ায় ঢুকে যান, সে ধরনের সমব্যথী তিনি এই পড়তি-ঝড়তি পর্তুগাল দলে পাননি এবং পেতে পারেন না: নানি ও এডার-এর বারংবার বল কিংবা পাস মিস করা যার প্রমাণ৷
তাই রোনাল্ডোকে শেষমেষ অপর এক বিশ্বসেরা খেলোয়াড়ের অনুকরণে একটা শেষ ম্যাজিক দেখাতে হয়েছে – যেমন দেখিয়েছেন লিওনেল মেসি গত শনিবার ইরানের বিরুদ্ধে খেলায়৷ মহাকাব্যের নায়কদের অজপাড়াগাঁয়ের যাত্রাপালায় নামালে যেমন হয়, তেমনই যেন বন্যপ্রকৃতি কিংবা সুপ্ত প্রতিভা গর্জন করে, বিনামেঘে বজ্রপাত ঘটিয়ে মেসি-রোনাল্ডোদের মান রেখেছে৷
এসি/ডিজি (ডিপিএ, এপি)