কোনো দলই প্রার্থী চূড়ান্ত করতে পারছে না
২৮ নভেম্বর ২০১৮৯ ডিসেম্বর মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিন৷ ওই দিন দল ও জোট থেকে নির্বাচন কমিশনকে চিঠি দিয়ে তাদের প্রার্থী নিশ্চিত করা হবে৷ বাকিরা বাদ পড়বে৷ এই বাদ পড়ার আশঙ্কায় কেউ কেউ স্বতন্ত্র হিসেবে বুধবার মনোনয়ন পত্র জমা দিয়েছেন৷ দল যদি মনোনয়ন চূড়ান্ত না করে, তাহলে তাঁরা শেষ পর্যন্ত বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে স্বতন্ত্রভাবে নির্বাচন করবেন৷ কিন্তু ভয়ের বিষয় হলো, এই সময়ে দল বা জোট থেকে মনোনয়ন চূড়ান্ত করতে অনেক প্রার্থী তাঁদের শক্তি প্রদর্শন করতে পারেন৷ আর তাতে সংঘাত-সংঘর্ষের আশঙ্কা রয়েছে৷
এবার জোটের অন্যান্য শরিক দলের জন্য ৭০টি আসন রেখে বাকি ২৩০ আসনে ২৫০ জনকে মনোনয়ন দিয়েছে আওয়ামী লীগ৷ ২০টি আসনে দুই জন করে মনোনয়ন দেয়া হয়েছে৷ আর বিএনপি ৩০০ আসনে মনোনয়ন দিয়েছে ৮০০'রও বেশি প্রার্থীকে৷ কোনো কোনো আসনে তারা ৪-৫ জনকেও মনোনয়ন দিয়েছে৷ এর মধ্যে কিছু মনোনয়ন দেয়া হয়েছে মামলার চিন্তা মাথায় রেখে বিকল্প প্রার্থী হিসেবে৷ তবে বিদ্রোহ ঠেকাতে অথবা সিদ্ধান্ত নিতে না পারায় অধিকাংশ আসনেই একাধিক প্রার্থী দেয়া হয়েছে৷ আওয়ামী লীগও যেসব আসনে প্রার্থী নিয়ে সিদ্ধান্তে আসতে পারেনি সেসব আসনে একাধিক প্রার্থীকে মনোনয়ন দিয়েছে৷
কিন্তু সংকট আরো বড় হয়েছে জোট নিয়ে৷ কারণ, আওয়ামী লীগ বা বিএনপি কেউই তাদের জোটের সঙ্গে আসন ভাগাভাগি চূড়ান্ত করতে পারেনি৷ আওয়ামী লীগের সঙ্গে ১৪ দল ছাড়াও আছে এরশাদের জাতীয় পার্টি, বিকল্প ধারা, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি এবং কিছু ইসলামি দল ও জোট৷ তারা তাদের মতো মনোনয়ন দিয়েছে এবং শেষ দিনে তারা মনোনয়ন পত্র দাখিলও করেছে৷ যেমন, ওয়াকার্স পার্টিকে মোট ৫ টি আসন দেয়া হবে৷ তাদের পক্ষে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছে ৩৪ জন৷ জাসদকে দেয়া হতে পারে ২টি আসন৷ তাদের হয়ে মনোনয়ন পত্র দাখিল করেছেন ৫ জন৷ জাতীয় পার্টি কতটি আসন পাবে তা এখনো নিশ্চিত নয়৷ তবে তারা মনোনয়ন দিয়েছে ১১০ জনকে৷
এদিকে বিএনপি বলছে, জোটের শরিকদের আসন তারা পরে ছেড়ে দেবে৷ তাদের আট শতাধিক প্রার্থী ৩০০ আসনেই মনোনয়নপত্র দাখিল করেছে৷ তবে ২০ দলের সঙ্গে তারা আসন বন্টন প্রায় চূড়ান্ত করেছে, কিন্তু জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট-এর গণফোরাম, নাগরিক ঐক্যসহ বাকি শরিকদের সঙ্গে আসন চূড়ান্ত হয়নি৷ জামায়াত শেষ পর্যন্ত ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে নির্বাচনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে৷ জামায়াতকে ২৫টি আসন দিতে চাইলেও তারা আরো বেশি আসনে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছে৷ নাগরিক ঐক্য আসন পেতে পারে ২টি, কিন্তু তারা মনোনয়ন জমা দিয়েছে ৮টি আসনে৷
এদিকে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের আহ্বায়ক ড. কামাল হোসেন বা তাঁর মেয়ে ব্যারিস্টার সারা হোসেন নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন না৷ আর বিকল্পধারার ডা. বদরুদ্দোজা চৌধুরী আগেই নির্বাচনে প্রার্থী না হওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন৷ ফেনীর একটি এবং বগুড়ার ২টি আসনে খালেদা জিয়ার পক্ষে মনোনয়নপত্র জমা দেয়া হলেও তিনি যে প্রার্থী হতে পারছেন না তা সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগের রায়ে নিশ্চিত হওয়া গেছে৷ তিনটি আসনেই বিকল্প প্রার্থী আছে৷ আর বিএনপি'র পাঁচ নেতা আমানউল্লাহ আমান, ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন, ওয়াদুদ ভূঁইয়া, মো. মশিউর রহমান এবং মো. আব্দুল ওহাব প্রার্থী হতে পারছেন না৷ তাঁদের আসনগুলোতেও একাধিক বিকল্প প্রার্থী আছে বিএনপি'র৷
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. শান্তনূ মজুমদার বলেন,‘‘দু'টি বড় দলই কৌশল হিসেবে একই আসনে একাধিক প্রার্থীকে মনোনয়ন দিয়েছে৷ আসলে তারা শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত নিশ্চিত হতে চাইছে৷ বিএনপি চাইছে, তারা যদি নির্বাচন থেকে বেরিয়ে আসতে চায়, তাহলে যেন বেরিয়ে আসতে পারে৷ আর আওয়ামী লীগও চাইছে ভালো অবস্থানে থাকতে৷ তবে এতে করে সমস্যা হবেই৷ যাঁরা দলের হয়ে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন, তাঁদের মধ্যে যাঁরা শেষ পর্যন্ত পাবেন না, তাঁরা হতাশ হবেন৷ তাঁরা তো একটা সমস্যার সৃষ্টি করবেনই৷''
আর সুশাসনের জন্য নাগরিক সুজন-এর প্রধান ড. বদিউল আলম মজুমদার মনে করেন,‘‘যেখানে একাধিক প্রার্থীর সমর্থন কাছাকাছি, সেখানে চূড়ান্ত মনোনয়ন পেতে তাঁরা শক্তি প্রদর্শন করতে পারেন, দ্বন্দ্ব-সংঘাত হতে পারে৷ আর যেখানে বিদ্রোহী প্রার্থী আছে, সেখানে ঝুঁকি আরো বেশি৷বিএনপি'র এত বেশি প্রার্থী হওয়ার কারণ তাদের ঝুঁকি আছে, মামলা আছে৷ ফলে যাতে বাতিল হলেও শেষ পর্যন্ত প্রার্থী থাকে৷ আওয়ামী লীগও ঝুঁকি বিচেনায় কিছু আসনে একাধিক প্রার্থী দিয়েছে৷ আরেকটি কারণ, যাতে বিদ্রোহী প্রার্থী না হতে পারে৷ কারণ, দলের মনোনয়ন নিয়ে যাঁরা মনোনয়পত্র দাখিল করেছেন, তাঁরা কিন্তু আর বিদ্রোহী প্রার্থী হতে পারবেন না৷ প্রত্যাহারের শেষ দিনে দল যাঁকে প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন কমিশনে চিঠি দেবে, তিনিই প্রার্থী হবেন৷ বাকিদের মনোনয়নপত্র বাতিল হয়ে যাবে৷''