কূটনৈতিক বিবাদে এর্দোয়ান কেন পিছু হটলেন?
২৭ অক্টোবর ২০২১তুরস্কের ব্যবসায়ী ও দাতা ওসমান কাভালাকে দোষী সাব্যস্ত না করে গত চার বছর ধরে জেলে রাখা হয়েছে৷ তাকে মুক্তি দিতে সম্প্রতি জার্মানি ও যুক্তরাষ্ট্রসহ ১০ দেশের রাষ্ট্রদূত তুরস্কের প্রতি আহ্বান জানিয়েছিল৷ সে কারণে এর্দোয়ান তাদের অবাঞ্ছিত করতে চেয়েছিলেন৷ তবে সোমবার মন্ত্রিসভার এক বৈঠকের পর এর্দোয়ান বলেন, ‘‘দূতাবাসগুলো আমাদের দেশ ও জাতির বিরুদ্ধে কুৎসা রটানোর প্রক্রিয়া থেকে সরে এসেছে৷ আমি বিশ্বাস করি ওই রাষ্ট্রদূতেরা তুরস্কের সার্বভৌমত্ব নিয়ে বিবৃতি দিতে ভবিষ্যতে আরও সতর্ক থাকবেন৷’’
এর্দোয়ানের এই বক্তব্যের পর যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাস একটি টুইট করে৷ এতে বলা হয়, কূটনৈতিক সম্পর্ক বিষয়ে ভিয়েনা কনভেনশনের ৪১ ধারায় কোনো রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে৷ যুক্তরাষ্ট্র এই ধারার প্রতি অঙ্গীকারাবদ্ধ বলেও টুইটে জানানো হয়৷
অভ্যন্তরীণ সমস্যা থেকে নজর সরাতে?
জার্মানির হামবুর্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের তুর্কি রাজনীতি বিষয়ের বিশেষজ্ঞ শার্লটে ইয়োপিয়েন মনে করছেন, তুরস্কের অভ্যন্তরীণ সমস্যা থেকে সাধারণ নাগরিকদের নজর সরানোর চেষ্টা করছেন এর্দোয়ান৷ কারণ গত কয়েকমাস ধরে এর্দোয়ানের জনপ্রিয়তা কমছে৷ স্বাধীন জরিপ সংস্থা আভরাসিয়া বলছে, এর্দোয়ানের একেপি পার্টির সমর্থন এখন ৩০ শতাংশের নীচে৷
এদিকে বিরোধীদের মধ্যে এতদিন বিভাজন দেখা গেলেও বর্তমানে তাদের এক হতে দেখা যাচ্ছে৷ এমন দুটি দল- সিএইচপি ও আইওয়াইআই পার্টির প্রতি সমর্থন এখন ৪০ শতাংশের বেশি দেখা যাচ্ছে৷
এছাড়া এর্দোয়ানবিরোধী আরও কয়েকটি ছোট দলের অস্তিত্ব এবং কুর্দিপন্থি এইচডিপি পার্টির প্রতি সমর্থন প্রায় ১০ শতাংশ হওয়ায় এর্দোয়ান ও তার দল আগামী প্রেসিডেন্ট ও সংসদ নির্বাচনে হারের আশঙ্কায় আছে৷
মূল্যস্ফীতি, দুর্নীতি ও তুর্কি মুদ্রা লিরার অবমূল্যায়ন - এসব কারণে এর্দোয়ানের জনপ্রিয়তা কমছে৷
আগেও এমন করেছেন এর্দোয়ান
ঘরের সমস্যা থেকে নজর সরাতে এর আগেও এর্দোয়ান কূটনৈতিক সংকটকে কাজে লাগিয়েছেন৷ জার্মান সাংবাদিক ডেনিস ইউজেলকে জেলে প্রেরণ এবং প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় অটোমান তুর্কদের হাতে অসংখ্য আর্মেনীয়কে হত্যার বিষয়টি গণহত্যার শামিল কিনা, তা নিয়ে ফ্রান্স ও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে তুরস্কের দ্বন্দ্বের সময়ও এর্দোয়ানকে এমন কৌশল নিতে দেখা গেছে৷ ঐসব দেশ তুরস্ককে নীচে নামানোর চেষ্টা করছে বলে জনগণের সামনে তুলে ধরেন এর্দোয়ান৷ কারণ তিনি জানেন বিদেশি শক্তির সঙ্গে লড়াই জাতীয়তাবাদী অনেক তুর্কিকে নাড়া দেবে৷
ডানিয়েল হাইনরিশ/জেডএইচ