আফগানিস্তানে জার্মান সেনাবাহিনী
২০ মার্চ ২০১৩মামলার শুনানি শুরু হচ্ছে বুধবার বন শহরের প্রাদেশিক আদালতে৷ ২০০৯ সালের তেসরা সেপ্টেম্বরের রাতে উত্তর আফগানিস্তানের কুন্দুস প্রদেশের ছোট্ট একটি গ্রামের ঘটনা৷ কাছের শুকিয়ে আসা কুন্দুস নদীবক্ষে দু'টি তেলের ট্যাংকার আটকা পড়েছিল৷ তেসরা সেপ্টেম্বরের দিন দুপুর নাগাদ এই দু'টি ট্যাংকারকে একটি ভুয়ো চেকপয়েন্ট থেকে অপহরণ করে তালেবান যোদ্ধারা৷ ঘটনায় একটি ট্যাংকারের ড্রাইভার প্রাণ হারায়৷
জার্মান সেনাবাহিনী তখন কুন্দুসে নিযুক্ত৷ ট্যাংকার দু'টি চড়ায় আটকে আছে, এ'খবর পেয়ে জার্মান কর্নেল গেয়র্গ ক্লাইন ধরে নেন যে, তালেবান যোদ্ধারা তেল বোঝাই ট্যাংকারগুলোকে গাড়িবোমা হিসেবে ব্যবহার করার ষড়যন্ত্র করছে৷ তিনি ন্যাটোর জঙ্গি বিমানকে ট্যাংকার দুটি বিনষ্ট করার নির্দেশ দেন৷ ন্যাটোর বিমান থেকে নিক্ষিপ্ত বোমায় প্রাণ হারায় ৯১ থেকে ১৪১ জন মানুষ৷ সংখ্যাটা নিশ্চিত করা সম্ভব নয়, কেননা বিভিন্ন তরফে বিভিন্ন পরিসংখ্যান দেওয়া হয়ে থাকে৷
ঠিক কী ঘটেছিল, তা আজও স্পষ্ট নয়
বিমান হানায় যারা প্রাণ হারায়, তারা ছিল প্রায় সবই সাধারণ মানুষ, গ্রামবাসী, যারা ট্যাংকারগুলি থেকে কিছু তেল সরানোর আশায় সেগুলির কাছে জড়ো হয়েছিল৷ কিন্তু তার আগের ঘটনাবলী নিয়ে আজও বিতর্ক আছে৷ কুন্দুসের জার্মান কমান্ডো হেডকোয়ার্টার্স থেকে নাকি ন্যাটোকে বলা হয়েছিল, তারা শত্রুর সঙ্গে মোকাবিলায় নিযুক্ত, যদিও ট্যাংকারগুলির ধারেকাছে কোনো জার্মান সৈন্য ছিল না৷ তবে কিছু পরিচিত, ফেরারি তালেবান নেতাকে নাকি ট্যাংকারগুলির কাছে দেখা গিয়েছিল বলেও জানানো হয়৷
ন্যাটোর বিমান থেকে তোলা ছবিতে ট্যাংকারগুলির চারপাশে বেসামরিক জনতার ভিড় দেখা যাচ্ছে, কিন্তু জার্মান অধিনায়করা বিমান আক্রমণের নির্দেশ দেওয়ার আগে এই ‘এরিয়াল ফোটোগ্রাফ'-গুলি দেখেছিলেন কিনা, তা স্পষ্ট নয়৷ শুধু এ'টুকু নিশ্চিত যে, মার্কিন বিমান থেকে স্থানীয় সময় রাত ১টা বেজে ৪৯ মিনিটে ট্যাংকার দু'টির দিকে দু'টি বোমা নিক্ষেপ করা হয়৷
জার্মানির কাছ থেকে ক্ষতিপূরণের দাবি
নিহতদের আত্মীয়-স্বজনেরা এক জার্মান আইনজীবীর মাধ্যমে বন'এর প্রাদেশিক আদালতে মামলা দায়ের করেছেন ফেডারেল জার্মান প্রজাতন্ত্রের বিরুদ্ধে৷ দাবি: ক্ষতিপূরণ৷ কুন্দুসের বিমান আক্রমণে যে ১৩৭ জন নিহত হয়েছে, বাদীপক্ষের আইনজীবী করিম পোপল তাদের প্রত্যেকের জন্য বিশ থেকে পঁচাত্তর হাজার ইউরো ক্ষতিপূরণ দাবি করছেন৷ তাঁর যুক্তি: কর্নেল ক্লাইন পরিকল্পিতভাবে এই ১৩৭ জনের মৃত্যু ঘটিয়েছেন৷
মামলায় জার্মান ফেডারাল জার্মান প্রজাতন্ত্রের প্রতিভূ হিসেবে বিবাদী করা হয়েছে জার্মান প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়কে৷ মন্ত্রণালয়ের উকিল মার্ক সিমার'এর লক্ষ্য হল, মামলা যেন সরাসরি বাতিল হয়৷ অন্যদিকে পোপল নিহতদের মোট ৭৯ জন আত্মীয়স্বজনের হয়ে মামলা করছেন, বলে তিনি জানিয়েছেন৷ কুন্দুসের বিমান হানায় এই সব পরিবারের মোট ১৩৭ জন সদস্য নিহত হয়েছেন, বলে পোপল দাবি করেছেন৷ ‘‘কিশোর এবং শিশুরাই প্রধানত প্রাণ হারিয়েছে,'' বলে পোপল ডয়চে ভেলে'কে জানিয়েছেন৷ ‘‘রাত দুপুরে ঘরের দোরগোড়ায় দু'টো লরি দাঁড়িয়ে৷ তাদের তো কৌতূহল হবেই৷''
দোষী কি নির্দোষী
পোপল'এর মতে কর্নেল ক্লাইন ২০০৯ সালের সেপ্টেম্বরের ঘটনার জন্য দায়ী৷ ক্লাইনের বিরুদ্ধে একটি শাস্তিমূলক প্রক্রিয়া বাতিল করা হয়েছে, কিন্তু পোপল ও তাঁর সতীর্থেরা তার বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছেন এবং প্রসঙ্গটি জার্মান সাংবিধানিক আদালতে নিয়ে যাওয়ার কথা বলেছেন৷ ‘‘ক্লাইন ভুল আচরণ করেছেন৷ তিনি নিজেই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন এবং তিনি বেসামরিক জনতাকে দেখেও ছিলেন৷ তবুও তিনি জেনেশুনে এবং পরিকল্পিতভাবে বোমা আক্রমণের নির্দেশ দিয়েছিলেন, যদিও বৈমানিকরা প্রথমে তা করতে অস্বীকার করে৷'' অপরদিকে কর্নেল ক্লাইন জার্মান সরকারের নামে কাজ করেছেন, কাজেই জার্মান সরকারকে দায়িত্ব নিতে হবে এবং ক্ষতিপূরণ দিতে হবে, বলেন পোপল৷
অপরদিকে বিবাদী পক্ষের উকিল মার্ক সিমার'এর দৃষ্টিতে ক্লাইন ন্যাটোর হয়ে কাজ করেছেন৷ তাঁর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও ছিলেন ন্যাটোর অফিসার৷ বন'এর প্রাদেশিক আদালতের বিচারের এক্তিয়ারও মানতে রাজি নন তিনি৷ এছাড়া ফেডারাল কৌঁসুলি স্বয়ং কর্নেল ক্লাইন'এর বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক প্রক্রিয়া বাতিল করেছেন৷ কাজেই তিনি কোনো বেআইনি কাজ করে থাকতে পারেন না, এই হল সিমারের যুক্তি৷