শরণার্থী সংকট
১৩ আগস্ট ২০১৫নেদারল্যান্ডস – সবচেয়ে কড়া অ্যাসাইলাম নীতি
মানবাধিকার সংগঠনগুলির তীব্র সমালোচনা সত্ত্বেও নেদারল্যান্ডস ২০১০ সালে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) সবচেয়ে কড়া ‘অ্যাসাইলাম' আইন পাশ করে৷ রাজনৈতিক আশ্রয়ের প্রতি তিনটি আবেদনের মধ্যে দু'টি বাতিল হয়ে থাকে৷ আবেদন বাতিল হওয়ার পর আবেদনকারীকে ২৮ দিনের মধ্যে নেদারল্যান্ডস ছাড়তে হবে৷
উদ্বাস্তুদের সর্বনিম্ন সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হয়, যার নাম হয়ে দাঁড়িয়েছে ‘‘বিছানা, স্নান, রুটি''৷ ডর্মিটরিতে এক রাত ও পরদিন সকালে প্রাতরাশের পর কেন্দ্রটি ছেড়ে অন্যত্র যেতে হবে৷ যাদের রাজনৈতিক আশ্রয়ের আবেদন প্রত্যাখ্যাত হয়েছে, তারা দেশ ছেড়ে না গেলে, কালে সবরকমের সাহায্য হারায় – অর্থাৎ তাদের বাস কিংবা খাবার-দাবারের কোনো সংস্থানই করা হয় না৷
২০১৩ সালে নেদারল্যান্ডস প্রথম ইইউ দেশ হিসেবে উদ্বাস্তুদের সোমালিয়া ফেরত পাঠাতে শুরু করে৷ তা সত্ত্বেও নেদারল্যান্ডসে শরণার্থীদের সংখ্যা বেড়ে চলেছে৷ চলতি বছরের প্রথম সাত মাসে ২৬,৬০০ উদ্বাস্তু নেদারল্যান্ডসে পদার্পণ করেছে – যা কিনা গোটা ২০১৪ সালের চেয়ে বেশি৷ তাদের অধিকাংশই এসেছে সিরিয়া থেকে – ৩৮ শতাংশ – বাকিরা ইরিট্রিয়া থেকে৷
সুইডেন – তালিকার শীর্ষে
সুইডেনের অ্যাসাইলাম নীতি অপেক্ষাকৃত উদার বলে ধরা হয়৷ ইইউ দেশগুলির মধ্যে দেশের জনসংখ্যার অনুপাতে সবচেয়ে বেশি উদ্বাস্তু নিয়ে থাকে সুইডেন৷ রাজনৈতিক আশ্রয়প্রার্থীদের কাছে জার্মানির পরেই অভীপ্স গন্তব্য হলো সুইডেন৷ ২০১৪ সালে ৮১,৩০০ শরণার্থী সুইডেনে রাজনৈতিক আশ্রয়ের আবেদন করেন – যাদের মধ্যে ৩০,৬০০ জনকে সঙ্গে সঙ্গে গ্রহণ করা হয়৷
অভিবাসীদের যত শীঘ্র সম্ভব শ্রম বাজারে অন্তর্ভুক্ত করা হলো সুইডিশ সরকারের লক্ষ্য৷ এ জন্য অভিবাসীদের ভাষাশিক্ষা ও সাংস্কৃতিক পাঠক্রমের ব্যবস্থা করা হয় – সেই সঙ্গে চাকুরির প্রস্তুতি ও ইন্টার্নশিপ৷ ওদিকে বাসস্থান, অর্থাৎ ফ্ল্যাটের অভাব; অভিবাসীদের মধ্যে বেকারত্ব অনেক বেশি৷ সব মিলিয়ে সুইডিশ সমাজও শরণার্থীদের প্রশ্নে দ্বিধাবিভক্ত, রাজনীতিতেও যার প্রতিফলন ঘটতে শুরু করেছে৷
অস্ট্রিয়া – শরণার্থীদের প্রিয়
অস্ট্রিয়ার জনসংখ্যা মাত্র ৮৪ লক্ষ৷ উদ্বাস্তুদের কাছে আল্পস পর্বতমালার কোলঘেঁষা দেশটি ইউরোপের সবচেয়ে আকর্ষণীয় গন্তব্যগুলির মধ্যে পড়ে৷ চলতি বছরের প্রথম ছ'মাসে ২৭ হাজারের বেশি উদ্বাস্তু এখানে রাজনৈতিক আশ্রয়ের আবেদন করেছেন – তাদের অধিকাংশই এসেছেন সিরিয়া, আফগানিস্তান বা ইরাক থেকে৷
তবে দেশের ন'টি রাজ্যের মধ্যে তিনটি রাজ্য তাদের কোটা অনুযায়ী উদ্বাস্তু নিয়েছে, অন্য রাজ্যগুলি গড়িমসি করছে৷ কাজেই অস্ট্রিয়া সরকার সংবিধান সংশোধন করে রাজ্যগুলিকে উদ্বাস্তু নিতে বাধ্য করতে চান৷ ফলে কিছু কিছু রাজ্যে বহিরাগত বিরোধী প্রতিবাদ দানা বেঁধেছে, দক্ষিণপন্থি ফ্রিডম পার্টি যার সুবিধা নিচ্ছে৷
পোল্যান্ড শুধু খ্রিষ্টানদের নিতে চায়
পোল্যান্ডে যারা রাজনৈতিক আশ্রয়ের আবেদন করেন, তারা আসেন মূলত ইউক্রেন, রাশিয়া ও তাজিকিস্তান থেকে৷ আবেদনকারীদের প্রায় অর্ধেক রাশিয়ার নাগরিক, যাদের মধ্যে প্রায় ৯১ শতাংশ জাতিতে চেচেন৷ গত বছর মোট ৮,০২০ জন উদ্বাস্তু পোল্যান্ডে রাজনৈতিক আশ্রয়ের আবেদন করেন, তাদের প্রায় এক-চতুর্থাংশ এসেছিলেন ইউক্রেন থেকে৷ ২০১৪ সালে পোল্যান্ড মাত্র ৩২৫ জন রুশিকে রাজনৈতিক আশ্রয় দেয়; সেই সঙ্গে ১৩০ জন সিরীয় রাজনৈতিক আশ্রয় পান৷
পোল্যান্ড উদ্বাস্তুদের প্রতি যে আচরণ করে, মানবাধিকার সংগঠনগুলি তার বিশেষ সমালোচনা করেছে৷ উদ্বাস্তুদের জন্য সৃষ্ট অভ্যর্থনা কেন্দ্রগুলি প্রাক্তন সেনা ছাউনি কিংবা শ্রমিকদের ছুটি কাটানোর আবাসিক কেন্দ্রগুলিতে হওয়ার ফলে বহিরাগতরা স্থানীয় জনগণের সঙ্গে মেলামেশার কোনো সুযোগ পান না৷ অপরদিকে উদ্বাস্তুরাও পোল্যান্ডকে ট্র্যানজিটের জন্যই ব্যবহার করে থাকেন, অর্থাৎ তারা এখান থেকে পশ্চিমের কোনো সমৃদ্ধ দেশে যেতে চান৷
পোল্যান্ড সম্প্রতি ইটালি ও গ্রিস থেকে আরো দু'হাজার উদ্বাস্ত নেবার কথা ঘোষণা করেছে৷ কিন্তু গত জুলাই মাসের একটি জরিপ অনুযায়ী দেশের ৭০ শতাংশ মানুষ কোনো মুসলিম বা আফ্রিকান দেশ থেকে আগতদের নিতে চান না৷ অপরদিকে সিরীয় উদ্বাস্তুরা স্বাগত, কেন না তারা খ্রিষ্টান৷
স্পেন – নো এন্ট্রি টু ইউরোপ
আফ্রিকায় স্পেনের দু'টি ছিটমহল – সেউটা ও মেলিয়া – আফ্রিকার উদ্বাস্তুদের ইউরোপে আসার প্রচেষ্টার কেন্দ্রস্থল হয়ে দাঁড়িয়েছিল৷ কিন্তু গত তিন মাসে স্পেনের উপর চাপ কমেছে৷ ইউরোপীয় ইউনিয়নের সীমান্ত সুরক্ষা সংস্থা ফ্রন্টেক্স-এর পরিসংখ্যান অনুযায়ী ২০১৪ সালে প্রায় আট হাজার উদ্বাস্তু বেআইনিভাবে স্পেনে ঢোকেন – ২০০৬ সালে যে সংখ্যা ছিল প্রায় ৪০ হাজার৷
এর কারণ মরক্কোর সঙ্গে একটি সীমান্ত নিয়ন্ত্রণ সহযোগিতা চুক্তি – জানিয়েছে স্পেনের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়৷ তার সঙ্গে যোগ হয়েছে সেনেগাল, মৌরিটানিয়া ও নাইজেরিয়ার সঙ্গে ডিপোর্টেশন বা বহিষ্কার চুক্তি৷ এছাড়া যেহেতু বর্তমানে প্রধানত সিরিয়া ও ইরাক থেকেই উদ্বাস্তুরা ইউরোপে আসছেন – ভূমধ্যসাগরের পূর্বাঞ্চল ও বলকান দেশগুলি হয়ে – ফলে স্পেন তাদের যাত্রাপথে পড়ছে না৷