1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

কাশ্মীর উপত্যকায় বন্যা

অনিল চট্টোপাধ্যায়, নতুন দিল্লি১২ সেপ্টেম্বর ২০১৪

কাশ্মীর উপত্যকায় ভয়াবহ বন্যার সম্ভাব্য কারণ হিসেবে অভূতপূর্ব বৃষ্টিপাত, জলবায়ু পরিবর্তন, পরিকল্পনাহীন নগরায়ন ও বিপর্যয় মোকাবিলার উপযুক্ত প্রস্তুতির অভাবকেই চিহ্নিত করেছে দিল্লির ‘সেন্টার ফর সায়েন্স অ্যান্ড এনভায়রনমেন্ট'৷

https://p.dw.com/p/1DAYr
Bildergalerie Indien Pakistan Überschwemmungen 07.09.2014
ছবি: Tauseef Mustafa/AFP/Getty Images

সেন্টার ফর সায়েন্স অ্যান্ড এনভায়রনমেন্ট বা সিএসই-এর বিশ্লেষণ অনুযায়ী, জলবায়ু পরিবর্তনজনিত চরম আবহাওয়ার এক বিধ্বংসী রূপ এই বন্যা৷ তার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে নজীরহীন বৃষ্টিপাত, জল নিকাশি ব্যবস্থাপনার গলদ, পরিকল্পনাহীন নগরায়ন এবং বিপর্যয় মোকাবিলার জন্য উপযুক্ত প্রস্তুতির অভাব – সংবাদমাধ্যমকে এ কথাই বলেছেন সিএসই-এর মহাপরিচালক সুনীত নারায়ন৷

তিনি বলেন, কাশ্মীর উপত্যকায় এর আগেও বন্যা হয়েছে৷ কিন্তু আগের তুলনায় এবার জম্মু-কাশ্মীরের বন্যা পরিস্থিতি আরো খারাপের দিকে যাবার কারণ পরিকল্পনাহীন উন্নয়ন, বিশেষ করে নদী উপকূলে৷ গত ১০ বছরে শ্রীনগরের ৫০ শতাংশেরও বেশি লেক, পুকুর ও জলাভূমি অবৈধভাবে দখল করে ঘরবাড়ি, রাস্তাঘাট বানানো হয়েছে৷ এর থেকে বাদ যায়নি ঝিলাম নদীর উপকূল এলাকাও৷ ফলে নদীখাদের জল নিকাশি ক্ষমতা কমে গেছে৷ স্বভাবতই ঐ সব এলাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে সবথেকে বেশি৷

Bildergalerie Indien Pakistan Überschwemmungen 07.09.2014
‘বিপর্যয়ের মোকাবিলা করার জন্য তৈরি ছিল না জম্মু-কাশ্মীর সরকার’ছবি: picture-alliance/dpa/Farooq Khan

বিজ্ঞান ও পরিবেশ গবেষণা কেন্দ্রের কর্তাব্যক্তিরা মনে করেন, এই ধরণের বন্যা বিপর্যয়ের মোকাবিলা করার জন্য তৈরি ছিল না জম্মু-কাশ্মীর সরকার৷ ছিল না বন্যার আগাম সতর্কতা জারি করার কোনো ব্যবস্থা৷ বন্যার পূর্বাভাষ দেবার জন্য তিনি জাতীয় ‘অ্যাকশন প্লানের' প্রয়োজনীয়তার কথা বলেন৷ বলেন, কাশ্মীরের বিধ্বংসী বন্যা আবারো মনে করিয়ে দিল যে, জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাত ভারতে কত ভয়ংকর হতে পারে৷

গত ১০ বছরে প্রবল বর্ষণ ভারতে বিপর্যয় ঘটিয়েছে বহুবার৷ জম্মু-কাশ্মীরের ভয়াবহ বন্যা তার সাম্প্রতিকতম সংযোজন৷ সিএসই-এর উপ-মহাপরিচালক চন্দ্রভূষণ বলেন, গবেষকরা এই ধরণের দুর্যোগের একটা তালিকা তৈরি করেছেন৷ তাতে রয়েছে ২০০৫ সালে মুম্বই-এর বন্যা, ২০১০ সালে লাদাকের লেহ শহরের হড়পা বান এবং ২০১৩ সালে হিমালয় রাজ্য উত্তরাখণ্ডের বন্যা ও ভূমিধস৷ তাই সরকারের উচিত সব উন্নয়ন নীতি ও কর্মসূচিতে জলবায়ু পরিবর্তনের ইস্যুটিকে অগ্রাধিকার দেয়া৷ শহরের পরিকাঠামো থেকে কৃষি, জল সরবরাহ থেকে এনার্জি পরিকাঠামো নির্মাণের সময় জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাতের কথা মাথায় রাখা অত্যন্ত জরুরি৷ অন্যথায় এই ধরণের বিপর্যয়ে মারা যাবে হাজার হাজার মানুষ, ক্ষতি হবে হাজার হাজার কোটি টাকা৷ কাশ্মীর উপত্যকায় অসময়ে প্রবল বৃষ্টিপাতের দরুণ বন্যা পরিস্থিতি এতটা খারাপ হয়েছে৷ অনেক জায়গায় গত ২৪ ঘণ্টায় বৃষ্টি হয়েছে ২০০ মিলিমিটার, মাসিক গড় বৃষ্টিপাতের চেয়ে যা প্রায় ৪০০ শতাংশ বেশি৷

ভারতের কেন্দ্রীয় আবহ বিভাগ কিন্তু মুম্বই, লেহ, উত্তরাখণ্ড ও জম্মু-কাশ্মীরে বন্যার জন্য জলবায়ু পরিবর্তনকে কারণ বলে মনে করেনি৷ বিজ্ঞান ও পরিবেশ গবেষণা সংস্থার বলেছে, সরকারের পরিবেশ, অরণ্য ও জলবায়ু মন্ত্রণালয়ও নাকি এ ধরণের বন্যা বিপর্যয়ের কারণ নিয়ে কোনো উচ্চবাচ্য করেনি৷ বেশিরভাগ জলবায়ু পরিবর্তন সমীক্ষায় পূর্বাভাষ দেয়া হয়েছে যে, আগামী দশকগুলিতে বিশ্বে উষ্ণায়নের মাত্রা বাড়তে থাকবে আর বৃষ্টি ও বন্যার মতো ঘটনার আঘাত ভারতের ওপর হবে তীব্রতর৷ এর প্রতিকার হিসেবে সিএসই-এর সুপারিশ – বৃষ্টির পূর্বাভাষ, আগাম সতর্কতা জারি, বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী শক্তিশালী করা, এবং স্থানীয় ও রাজ্যস্তরে জলবায়ু গবেষণায় বিনিয়োগ বাড়ানো ইত্যাদি৷

পাশাপাশি কাশ্মীরের বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে শুরু হয়েছে রাজনৈতিক টানাপোড়েন৷ কেউ কেউ মনে করেন, মোদীর চটজলতি কাশ্মীরে যাওয়া এবং ১০০০ কোটি টাকা প্যাকেজ সাহায্য ঘোষণার পেছনে কাজ করেছে কাশ্মীর বিধানসভার আসন্ন নির্বাচন৷ সেটা মেনে নিলেও একথা অনস্বীকার্য, মোদী সরকার যেভাবে দ্রুতগতি কাশ্মীরের বন্যা পরিস্থিতে ঝাঁপিয়ে পড়েছেন, তা প্রশংসার দাবি রাখে৷ বন্যাত্রাণ সাহায্য নিয়ে তড়িঘড়ি নেমে পড়েছে অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলিও৷ তবে ত্রাণ ও উদ্ধার কাজে গাফিলতির অভিযোগে কাশ্মীরের ওমর আবদুল্লা সরকার পড়েছে তীব্র জনরোষের মুখে৷ ভারতীয় সেনা ও বিমানবাহিনী অবশ্য অবিরাম ত্রাণ ও উদ্ধার কাজ চালিয়ে যাচ্ছে, যা কাশ্মীরিদের মন থেকে সেনাবাহিনীর নেতিবাচক ভাবমূর্তি কিছুটা হলেও হয়ত দূর করতে সক্ষম হবে৷

কাশ্মীর উপত্যকায় ইতিমধ্যেই মোতায়েন করা হয়েছে ৩০ হাজার সেনাকর্মী এবং ৮০টি ভারি মালবাহী বিমান ও হেলিকপ্টার৷ ব্যাপকভাবে বিতরণ করা হচ্ছে জলের বোতল, খাবার প্যাকেট, বেবিফুড, তাঁবু এবং কম্বল৷ পাঠানো হয়েছে ৭০টি আর্মি মেডিকেল টিম৷ শেষ পাওয়া খবর অনুযায়ী, এ পর্যন্ত উদ্ধার করা হয়েছে ৭৭ হাজার মানুষকে৷ কিন্তু এখনও জলবন্দি হয়ে রয়েছেন আরো প্রায় লাখ খানেক মানুষ, যাঁদের মধ্যে আছেন ৯ জন জার্মান পর্যটক৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য