মিয়ানমারের ওপর আর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করবে ইইউ?
১৪ ডিসেম্বর ২০২১সম্প্রতি সরকারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র এবং করোনাবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগে সুচি-কে দু বছরের কারাদণ্ড দিয়েছে মিয়ানমারের আদালত৷ এ রায়কে সুচি-কে ক্ষমতা থেকে দূরে রাখার ষড়যন্ত্রের অংশ বিবেচনা করে যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন এবং ক্যানাডা সেনা শাসকদের বিরুদ্ধে আরো কঠোর ‘অবরোধের' ঘোষণা দিয়েছে৷ বিশ্লেষকরা মনে করেন, ক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন এবং ক্যানাডার এই ঘোষণার পর ইউরোপীয় ইউনিয়নও নতুন অবরোধ বা নিষেধাজ্ঞা না দিলে মিয়ানমারের জান্তা সরকারের কাছে তার ভুল বার্তা যাবে৷ জান্তা সরকার হয়ত ধরে নেবে, ইইউ সুচি-র মুক্তি এবং মিয়ানমারে গণতন্ত্রের বিষয়কে আর গুরুত্বপূর্ণ মনে করছে না৷
ইউরোপীয় পার্লামেন্টের ভাইস প্রেসিডেন্ট তাই ইইউ-এর প্রতি মিয়ানমারের সামরিক সরকারের ওপর নতুন করে আরো কিছু নিষেধাজ্ঞা আরোপের আহ্বান জানিয়েছেন৷ এ বিষয়ে ইইউর সিদ্ধান্ত জানার জন্য ইইউর মুখপাত্রের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও ডয়চে ভেলেকে তিনি কিছু বলতে চাননি৷
১৯৬২ সাল থেকে সামরিক শাসনের অধীনে থাকা থাকা মিয়ানমারে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের জন্য দীর্ঘদিন সংগ্রাম করেছেন সুচি৷ ২০২০ সালের সাধারণ নির্বাচনে নোবেলজয়ী এই নেত্রীর দল ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্র্যাসি (এনএলডি)-ই নিরঙ্কুশ জয় পেয়েছিল৷ কিন্তু সামরিক বাহিনী সেই নির্বাচনে ব্যাপক কারচুপি হয়েছে বলে সুচিকে গ্রেপ্তার করে ক্ষমতা দখল করে৷ তারপর বেশ কিছু অভিযোগে অনেকগুলো মামলা করা হয় তার বিরুদ্ধে৷ সব মামলায় সাজা হলে সব মিলিয়ে একশ বছরেরও কারাদণ্ড হতে পারে শান্তিতে নোবেল জয়ী সুচির৷
যুক্তরাজ্যভিত্তিক সংস্থা বার্মা ক্যাম্পেইন-এর পরিচালক মার্ক ফার্মানার মনে করেন, ইইউর উচিত আবার মিয়ানমারের সেনা শাসক এবং তাদের আয়ের প্রধান উৎস হিসেবে ক্রিয়াশীল ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলির বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা৷ ডয়চে ভেলেকে তিনি বলেন, ‘‘ইইউ সর্বশেষ অবরোধটি যে আরোপ করেছিল তা-ও ছয় মাস হয়ে গেছে৷ আবার কোনো অবরোধের ঘোষণা না দিলে (মিয়ানমারের) সেনাবাহিনী মন করবে ইইউ তাদের বিরুদ্ধে আর কোনো ব্যবস্থা নেবে না৷''
গত ফেব্রুয়ারিতে অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলের পর থেকে মিয়ানমারের সেনা শাসকদের বিরুদ্ধে তিনবার অবরোধের ঘোষণা দিয়েছে ইইউ৷ সর্বশেষ ঘোষণাটি এসেছিল গত জুনে৷ কিন্তু বাইরের দেশগুলোর বিভিন্ন পর্যায়ের অর্থনৈতিক অবরোধ বা নিষেধাজ্ঞার ঘোষণায় মিয়ানমারের সেনা শাসকদের অবস্থানে কোনো পরিবর্তন আসেনি৷ সুচি এবং গণতন্ত্রের মুক্তির দাবিতে মিয়ানমারে এখনো চলছে আন্দোলন৷ সেনাবাহিনী এবং পুলিশের হামলায় এ পর্যন্ত ১৩০০ আন্দোলনকর্মী নিহত হয়েছেন৷
ব্রিটেনভিত্তিক শিক্ষাবিদ ক্রিস্টিনা কিরোনস্কা-ও মনে করেন মিয়ানমারের সামরিক সরকারকে চাপে রাখতে হলে আবার নতুন অবরোধের ঘোষণা দিতে হবে ইইউকে৷ মিয়ানমারের বিষয়ে ইইউ-র সাম্প্রতিক নিষ্ক্রিয়তা ও নীরবতায় হতাশা প্রকাশ করে তিনি বলেন, ইইউ আসলে অতীত থেকে শিক্ষা নেয়নি, যদিও ‘‘এক সময় ইইউ বড় কিছু ঘটলে যে বছরে একবার অবরোধ আরোপের ঘোষণা দিতো- সাম্প্রতিক সময়ে সেই নিয়ম থেকে বেরিয়ে আসায় মনে হচ্ছিল ইইউ অতীতের ভুল থেকে শিক্ষা নিয়েছে৷''
বিবৃতিতেই সন্তুষ্ট ইইউ?
গত সপ্তাহের শুরুতে এক বিবৃতিতে ইইউ-র পররাষ্ট্র নীতি বিষয়ক কমিটির প্রধান ইয়োসেপ বোরেল বলেন, ‘‘ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন রাজনৈতিকভাবে প্রভাবিত এই রায়ের তীব্র নিন্দা জানায়৷ সামরিক অভ্যুত্থানের পর এটি মিয়ানমারের গণতন্ত্রের জন্য আরেকটি বড় আঘাত৷'' তারপর থেকে সুচি এবং মিয়ানমারের গণতন্ত্রের বিষয়ে উদ্বেগ বা সামরিক শাসকদের প্রতি অসন্তোষ প্রকাশ করে কোনো বিবৃতিও দেয়নি ইইউ৷
ডেভিড হাট/ এসিবি