কারাগারেই থাকতে হচ্ছে খালেদা জিয়াকে
১২ ডিসেম্বর ২০১৯জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্টের মামলায় খালেদা জিয়ার জামিন নাকচ করেছেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ৷ আরেকটি মামলা আপিল বিভাগে থাকলেও এখনো জামিন আবেদন করা হয়নি৷ আইনজীবীরা বলছেন সর্বশেষ আপিল বিভাগ জামিন না দেয়ায় খালেদা জিয়ার আপাতত জামিনে মুক্তির সম্ভাবনা কম৷ তবে সুযোগ একেবারে শেষ হয়ে যায়নি৷
জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় জমিন আবেদন এর আগে নাকচ করেন হাইকোর্ট৷ আর সেই আদেশকেই বৃহস্পতিবার বহাল রেখেছেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ৷ আইনজীবীরা বলছেন, ফলে রিভিউ আবেদন করার সুযোগ ছাড়া আপিল বিভাগে আর কোনো আইনি সুযোগ নেই৷ তবে এই মামলাটির আপিল শুনানি এখনো হাইকোর্টে শুরু হয়নি। শুরু হলে সেখানে আবার জামিন আবেদনের সুযোগ থাকবে৷
২০১৮ সালের ২৯ অক্টোবর জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় খালেদা জিয়াকে সাত বছরের সশ্রম কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ড দেন আদালত৷ এটি ছিলো দ্বিতীয় মামলার রায়৷ প্রথম মামলার রায় হয় ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি৷ জিয়া অর্ফানেজ ট্রাস্টের ওই মামলায় খালেদা জিয়াকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড ও জরিমানা করা হয়৷ রায়ের পর ওইদিনই তাকে কারাগোরে পাঠানো হয়৷ কিন্তু এই মামলার পাঁচ বছরের সাজার বিরুদ্ধে দুদকের রিভিশন আবেদনে গত বছরের ৩০ অক্টোবর তার সাজা বাড়িয়ে ১০ বছর করেন হাইকোর্ট৷ ফলে দুই মামলায় এখন খালেদা জিয়া ১৭ বছরের দণ্ড নিয়ে কারাগারে আছেন৷
খালেদা জিয়ার আইনজীবী অ্যাডভোকেট সাগর হোসেন লিয়ন জানান, ‘‘জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্টের মামলায় আমাদের আপিল গ্রহণ করেছে হাইকোর্ট। সাধারণভাবে আপিল শুনানির জন্য গ্রহণ করলে জামিন দেয়ার রীতি আছে৷ কিন্তু আমরা পেলাম না৷ এখন আমরা সিদ্ধান্ত নেব আপিল বিভাগে রিভিউ করব কিনা৷ তবে হাইকোর্টে আপিল শুনানি শুরু হলে আমরা আবার জামিন আবেদনের সুযোগ পাব৷ হাইকোর্টে আবার জামিন আবেদনে কোনো বাধা নেই৷''
এদিকে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্টের মামলায় শাস্তি বাড়ানোর বিরুদ্ধেও আপিল বিভাগে আপিলের আবেদন করা হয়েছে খালেদা জিয়ার পক্ষে৷ সাগর হোসেন লিয়ন জানান, ‘‘আমরা এখনও আবেদনটি মেনশন করিনি৷ মেনশন করলে তারপর শুনানির মাধ্যমে ঠিক হবে আপিলের গ্রহণযোগ্যতা৷ তখন ওই মামলায়ও জামিন আবেদনের সুযোগ থাকবে৷''
একই ধরণের আইনি ব্যাখ্যা দিয়ে সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট মো. আসাদুজ্জামান বলেন, ‘‘আপিল যখন হাইকোর্টে পেন্ডিং থাকে তখন বার বার জামিন চাওয়া যায়৷ তাতে জামিন আবেদন যতবারই নাকচ হোক না কেন৷ ফলে জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্টে মামলায় আপিল বিভাগে রিভিউ ছাড়াও খালেদা জিয়ার পক্ষে হাইকোর্টে আবারো জামিন চাওয়া যাবে৷ এতে আইনগত কোনো বাধা নেই৷ কারণ ওই মামলাটির আপিল হাইকোর্টে এখনও পেন্ডিং আছে৷''
তিনি বলেন, ‘‘তবে আপিল নিষ্পত্তি হয়ে গেলে এখতিয়ার আপিল বিভাগের কাছে চলে যাবে৷ তখন সেখানে আবার জামিন চাওয়া যাবে৷''
তবে এই মামলায় দুদকের আইনজীবী খুরশিদ আলম খান বলেন, ‘‘জামিন যেকোনো সময়ই চাওয়া যায়৷ এই মামলায় খালেদা জিয়ার জামিন নাকচ করেছে আপিল বিভাগ৷ এটা সর্বোচ্চ আদালত৷ তারা হাইকোর্টের আদেশ বহাল রেখেছেন৷ ফলে ফের হাইকোর্টে জামিন আবেদন করলেও জামিন পাওয়ার সম্ভাবনা ক্ষীণ৷ মেরিট বিবেচনা করলে তিনি এই মামলায় আর জামিন পাবেন বলে মনে হয় না৷ তবে তিনি আপিল বিভাগের আদেশের ব্যাপারে রিভিউ আবেদন করতে পারেন৷''
তিনি বলেন, ‘‘আমরা এখন এই মামলায় হাইকোর্টে আপিল শুনানি শুরুর পদক্ষেপ নেব৷''
কারাগারে আটক খালেদা জিয়া অসুস্থতার কারণে ১ এপ্রিল থেকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন৷ খালেদার আইনজীবীরা তার চিকিৎসার জন্যই জামিন চাচ্ছিলেন৷ আপিল বিভাগ জামিন না দিলেও খালেদা জিয়ার সম্মতি সাপেক্ষে উন্নত চিকিৎসার নির্দেশ দিয়েছেন৷
খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে মোট ৩৬টি মামলার মধ্যে ৩৪টি মামলায়ই তিনি জামিন পেয়েছেন৷ তার আইনজীবীরা আশা করছিলেন এই দু'টি মামলায় জামিন পেলেই তিনি মুক্তি পাবেন৷ কিন্তু আপাতত তাদের সে আশা পুরণ হচ্ছে না৷
আর প্যারোলের মুক্তির বিষয়টি পুরোপুরি সরকারের এখতিয়ার বলে আইনজীবীরা জানা৷ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয় চাইলে বিশেষ কোনো কারণে আটক কাউকে সাময়িকভাবে এই প্যারোল মুক্তি দিতে পারে৷ খালেদা জিয়ার জন্য এই প্যারোল চেষ্টাও এখন পর্যন্ত সফল হয়নি৷
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় খালেদা জিয়ার বড় ছেলে তারেক রহমান প্যারেলে মুক্তি নিয়েই চিকিৎসার জন্য দেশের বাইরে গিয়ে আর ফিরে আসেননি৷ পরে তার প্যারোল বাতিল করা হয়৷