ফাঁসির সময় নিয়ে বিতর্ক
৯ ডিসেম্বর ২০১৩এদিকে, মৃত্যু পরোয়ানা জারির প্রতিবাদে সোমবার সারাদেশে সকাল-সন্ধ্যা হরতাল পালন করছে জামায়াত৷
একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনাল রবিবার বিকেলে মৃত্যু পরোয়ানা জারি করে৷ এরপর তা বিকেলেই ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে পৌঁছে দেয়া হয়৷ নিয়ম অনুযায়ী রাতেই কনডেম সেলে কাদের মোল্লাকে মৃত্যু পরোয়ানা পড়ে শোনানো হয়৷ এখন তার ফাঁসি কখন কার্যকর হবে তা নিয়ে রাষ্ট্র এবং আসামি পক্ষের মধ্যে শুরু হয়েছে বিতর্ক৷
কাদের মোল্লার আইনজীবী তাজুল ইসলাম ডয়চে ভেলেকে জানিয়েছেন, আইন অনুযায়ী ফাঁসির পরোয়ানা জারির পর ২১ দিনের আগে এবং ২৮ দিনের পরে দণ্ড কার্যকর করা যাবে না৷ আর রিভিউ পিটিশনের সুযোগ পেলে তা নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত দণ্ড স্থগিত থাকবে৷ তিনি আরো জানান, কাদের মোল্লা রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষা চাওয়ার জন্য ৭ দিন সময় পাবেন৷ এই সব আইনি প্রক্রিয়া শেষ না করে কাদের মোল্লার দণ্ড কার্যকর করা হলে সেটা হত্যাকাণ্ডেরই শামিল হবে বলে জানান তাজুল ইসলাম৷
তবে অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল এম কে রহমান ডয়চে ভেলেকে জানিয়েছেন কাদের মোল্লা রিভিউয়ের কোনো সুযোগ পাবেন না৷ কারণ মানবতাবিরোধী আন্তর্জাতিক অপরাধ আইনে এই সুযোগ নেই৷ এই সুযোগ সাধারণ দণ্ড বিধির জন্য প্রযোজ্য৷ ২১ থেকে ২৮ দিনের মধ্যে ফাঁসি কার্যকর করার যে বিধান আছে তাও ট্রাইব্যুনাল আইনের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়৷ আর রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষা চাইতে হয় কারা কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে৷ কিন্তু তিনি যদি প্রাণভিক্ষা না চান তাহলে সাতদিন অপেক্ষা করার প্রয়োজন পড়ে না৷ কাদের মোল্লা প্রাণভিক্ষা চাইবেন না বলে এর আগে তার পরিবারের সদস্যরা সংবাদ মাধ্যমকে জানিয়েছিলেন৷
তবে কারা কর্তৃপক্ষ বলছে সোমবার কাদের মোল্লার কাছে তা জানতে চাওয়া হবে৷ তিনি প্রাণভিক্ষা চাইলে তার আবেদন কারা কর্তৃপক্ষ রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠাবেন৷
একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আবদুল কাদের মোল্লাকে গত ৫ই ফেব্রুয়ারি প্রথমে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয় ট্রাইব্যুনাল৷ এরপর এই রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্র এবং আসামি উভয়পক্ষ আপিল করে৷ গত ১৭ সেপ্টেম্বর আপিল বিভাগের রায়ে কাদের মোল্লাকে ফাঁসির দণ্ড দেয়া হয়৷ সেই ৯৭০ পৃষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ রায় ৫ ডিসেম্বর প্রকাশ করা হয়৷
ফেব্রুয়ারিতে কাদের মোল্লার যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের রায়কে কেন্দ্র করেই গড়ে ওঠে গণজাগরণ মঞ্চ৷ তাদের আন্দোলনের মুখেই আন্তর্জাতিক মানবতাবিরোধী অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইন সংশোধন করে রাষ্ট্রপক্ষের আপিলের সুযোগ দেয়া হয়৷ এর আগে শুধুমাত্র আসামিপক্ষের আপিলের সুযোগ ছিল৷
গণজাগরণ মঞ্চ কাদের মোল্লার মৃত্যু পরোয়ানা জারির পর রবিবার রাতে শাহবাগে আলোর মিছিল করেছে৷ গণজাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র ডা. ইমরান এইচ সরকার ডয়চে ভেলেকে বলেছেন কাদের মোল্লার ফাঁসির রায় কার্যকর হওয়ার মধ্য দিয়ে মুক্তিযুদ্ধে বিজয় আরো স্বার্থকতার দিকে এগিয়ে যাবে৷ স্বাধীনতা হয়ে উঠবে অর্থবহ৷
জামায়াতে ইসলামী বলেছে সরকার পরিকল্পিতভাবে বিচারের নামে রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড চালাতে যাচ্ছে৷ এর প্রতিবাদে সোমবার হরতাল ডেকেছে দলটি৷