কলকাতার অবৈধ নির্মাণ ভাঙতে যোগীর বুলডোজার!
২৯ জুলাই ২০২৩মহানগরে বিভিন্ন বেআইনি নির্মাণ নিয়ে বারবার প্রশ্ন উঠেছে। এ নিয়ে আদালতে আইনি লড়াইও চলছে। তেমনি একটি নির্মাণ সংক্রান্ত মামলা শুক্রবার ওঠে বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের এজলাসে। তার পর্যবেক্ষণে কঠোর মন্তব্য করেন বিচারপতি।
নেপথ্যে যে মামলা
মানিকতলা এলাকার এক বাসিন্দা বছর পাঁচেক আগে হাইকোর্টে মামলা করেন। অভিযোগ, তার প্রতিবেশী অবৈধ নির্মাণ করেছেন। পুরসভায় বিষয়টি জানিয়েও সুরাহা হয়নি। আদালতের নির্দেশে ওই নির্মাণ পুরসভা ভেঙে দেওয়ার পরও ফের নয়া নির্মাণ করা হয় বলে অভিযোগ।
২০২১ সালে ফের আদালতে আর্জি জানান মানিকতলার ওই বাসিন্দাই। বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় বেআইনি ভবনটি ভাঙার নির্দেশ দেন। এরপর ডিভিশন বেঞ্চেও একই রায় বহাল থাকে। কিন্তু দু'বছর কেটে গেলেও সেই রায় কার্যকর হয়নি বলে আদালত অবমাননার অভিযোগ জানান মামলাকারী। এ ব্যাপারে পুলিশকেও জানিয়ে লাভ হয়নি বলে দাবি।
আদালতে নির্দেশ না মানার পিছনে রাজনৈতিক দলও অপরাধচক্রের যোগ রয়েছে বলে মামলাকারীদের অভিযোগ। বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় বলেছেন, "পুলিশ ও পুরসভাকে নিয়ে আমি কিছু বলব না। আমি জানি তাদের বাইরের চাপের মুখে কাজ করতে হয়।" এ কথা বললেও পুলিশ ও পুরসভার প্রতি আস্থা প্রকাশ করেছে আদালত।
কলকাতার সাবেক মেয়র বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য শাসকদলের দিকে আঙুল তুলেছেন। তিনি ডয়চে ভেলেকে বলেন, "স্থানীয় কাউন্সিলরদের একটা অংশ বেআইনি নির্মাণের সঙ্গে জড়িত। পুরসভার আধিকারিকদের একাংশ এই দুর্নীতির সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছেন। সেজন্যই অবৈধ নির্মাণ বাড়ছে। অভিযোগ উঠলে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না।"
প্রসঙ্গ বুলডোজার
বিচারপতির মুখে শোনা গিয়েছে উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথের কথা। যোগী অবৈধ নির্মাণ ভাঙতে ব্যাপকভাবে বুলডোজারের ব্যবহার করছেন। 'বুলডোজার বাবা' বলা হচ্ছে এই বিজেপি নেতাকে। বুলডোজারকে 'শান্তি ও উন্নয়নের প্রতীক' বলে তকমা দিয়েছেন তিনি। মানিকতলার মামলায় বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় সেই যোগীর কাছ থেকে বুলডোজার ভাড়া করার নিদান দেন।
আদালতে উপস্থিত আইনজীবীদের উদ্দেশে এ কথা বলেছেন বিচারপতি। প্রতিক্রিয়া দিয়েছে রাজ্যের শাসক দল। বিজেপি শাসিত রাজ্যের প্রসঙ্গ ওঠায় তৃণমূল কংগ্রেসের মুখপাত্র কুণাল ঘোষ বলেন, "বুলডোজার যদি দরকার হয়, তা হলে রাজ্য সরকারের বুলডোজার আছে। এর মাধ্যমে উত্তরপ্রদেশের দিকে এগিয়ে যেতে চাইছেন অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়।"
বুলডোজারের প্রসঙ্গ ক্ষোভের জেরেই বিচারপতির মন্তব্যে উঠে এসেছে বলে মনে করেন বিকাশরঞ্জন। তার বক্তব্য, "সম্প্রতি কলকাতা পুরসভায় একটি অস্তিত্বহীন জমিতে নির্মাণের বরাত পেয়েছেন এক প্রোমোটার। এটা দেখেই বোঝা যাচ্ছে দুর্নীতি কোন পর্যায়ে পৌঁছেছে।"
রাজ্যের সাবেক পুলিশকর্তা নজরুল ইসলাম বলেন, "প্রশাসন, পুরসভা, পুলিশ, শাসক দলের নেতাদের একাংশের যোগসাজশ না থাকলে বেআইনি নির্মাণ হতে পারে না। নির্দিষ্টভাবে মানিকতলার মামলার সারবস্তু আমি জানি না। তবে এ ধরনের অবৈধ বাড়িঘর শহরে কিংবা শহরের বাইরে গজিয়ে উঠছে চোখের সামনেই।"
পরিবেশে কুপ্রভাব
পরিবেশ আন্দোলনের কর্মীরাও রাজনীতির দিকে আঙুল তুলছেন। প্রবীণ পরিবেশকর্মী সুভাষ দত্ত বলেন, "উন্নয়ন মানে শুধু কংক্রিটের ঘর তৈরি করে থাকা নয়। এর সঙ্গে পরিকাঠামো তৈরি জরুরি। এই ভারসাম্য থাকে না বলে প্রকৃতি, পরিবেশ, মানুষ, ভবিষ্যৎ সবই বিপন্ন হয়। রাজনৈতিক কারণে পরিকল্পিত উন্নয়ন হয় না।"
অবৈধ নির্মাণ নিয়ে আইনি লড়াই চলছে। বৈধ নির্মাণেও নাভিশ্বাস উঠছে শহরের। পরিবেশকর্মী নব দত্ত ডয়চে ভেলেকে বলেন, "জলাশয় বোজানো হচ্ছে। ভূগর্ভস্থ জল কমছে। কলকাতা পুরসভার নথিভুক্ত পুকুর ছিল আট হাজার। এখন আছে তিন
হাজারের কিছু বেশি। গাছও কমেছে অনেক। এভাবে চললে কংক্রিটের জঙ্গল হয়ে উঠবে শহর।"