কর না কালো টাকা, দুর্গাপুজো নিয়ে তরজা
১৮ আগস্ট ২০১৯দুর্গাপুজো কমিটিগুলিকে আয়কর বিভাগের নোটিস পাঠানোকে কেন্দ্র করে পশ্চিমবঙ্গে রাজনৈতিক তরজা তুঙ্গে৷ তৃণমূলের অভিযোগ, বিজেপি পূজা বন্ধ করে দিতে চায়৷ বিজেপির বক্তব্য, দুর্নীতির টাকা পূজায় খরচ হয় বলে হিসেব চেয়েছে আয়কর বিভাগ৷
পশ্চিমবঙ্গের সবচেয়ে বড় উৎসব দুর্গাপুজোর কাউন্টডাউন শুরু হয়ে গিয়েছে৷ প্রতিমা ও মণ্ডপ নির্মাণের কাজ চলছে৷ সেই উৎসবে রাজনীতির আঁচ লেগেছিল আগেও৷ ফের পূজা ঘিরে রাজনৈতিক টানাপোড়েন রাজ্যে ক্ষমতাসীন তৃণমূল কংগ্রেস ও কেন্দ্রের শাসক বিজেপির মধ্যে৷ গত লোকসভা নির্বাচনের প্রচারে এই বিরোধের ভূমিকা করে গিয়েছিলেন বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি অমিত শাহ ও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী৷ দুজনই অভিযোগ তুলেছিলেন, পশ্চিমবঙ্গে দুর্গাপূজা করতে দিচ্ছে না তৃণমূল৷ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পাল্টা প্রশ্ন তুলেছিলেন, এই বাংলায় যে ৩০ হাজার দুর্গাপূজা হয়, সেটা কি বিজেপি করে?
এই বিরোধ নয়া মাত্রা নিয়েছে কেন্দ্রীয় অর্থ মন্ত্রকের অধীন আয়কর বিভাগের নির্দেশে৷ তারা কলকাতার বড় বড় পূজা কমিটিকে নোটিস পাঠিয়ে তাদের খরচের হিসেব দিতে বলেছে৷ মুখ্যমন্ত্রী এ বিষয়ে ট্যুইট করে বলেন, ‘আয়কর বিভাগ অনেক পূজা কমিটিকে কর দেওয়ার জন্য নোটিস পাঠিয়েছে৷ আমরা আমাদের জাতীয় উৎসব নিয়ে গর্ব করি৷ কোনো পূজাতে ট্যাক্স বসানো হোক আমি চাই না৷ এটা সংগঠকদের উপর বাড়তি বোঝা হবে৷ তাই দুর্গাপূজা কমিটির উপর কোনো ট্যাক্স বসানো চলবে না৷’’
পশ্চিমবঙ্গে দুর্গাপূজা নিছক আর উৎসবে সীমাবদ্ধ নেই৷ একে ঘিরে কলকাতা-সহ জেলার বিভিন্ন শহরে বিপুল আয়োজন হয়৷ লেনদেন হয় কোটি কোটি টাকার৷ প্রতিমা, মণ্ডপ, আলোকশিল্পী থেকে শুরু করে সাধারণ ব্যবসায়ীরাও পূজার মরশুমের দিকে তাকিয়ে থাকেন৷ কেন্দ্রের আয়কর বিভাগ সরাসরি পূজার সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তি যেমন প্রতিমা শিল্পী, মণ্ডপ নির্মাতা, আলোর ব্যবস্থাপক, পুরোহিত, ঢাকীদের কাছ থেকে টিডিএস (ট্যাক্স ডিডাকটেড অ্যাট সোর্স) আদায় করতে বলেছে৷ অর্থাৎ, এঁদের যখন প্রাপ্য টাকা দেওয়া হবে, তখন পূজা কমিটিকেই টিডিএস কেটে নিতে হবে৷ সেই হিসেব দেওয়ার দায় বর্তাবে কমিটির উপর৷ আয়কর বিভাগের এই নোটিসের মধ্যে অন্যায় কিছু দেখছেন না বিজেপি নেতারা৷ রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ বলেন, ‘‘তৃণমূল বেআইনি অর্থলগ্নি সংস্থার মাধ্যমে যে বিপুল টাকা আত্মসাৎ করেছে, সেই টাকায় অনেক পূজা কমিটি ফুলেফেঁপে উঠেছে, উৎসবের চাকচিক্য অনেক বেড়ে গিয়েছে৷ কালো টাকাকে সাদা করার চেষ্টা হচ্ছে পুজোর মাধ্যমে৷ যদি আইনি পথে সব খরচ হয়, তাহলে হিসেব দিতে আপত্তি কিসের?'' মুখ্যমন্ত্রীর পূজা বন্ধের চক্রান্তের অভিযোগে তিনি বলেন, ‘‘দুর্গাপূজার বিসর্জনের জন্য অনুমতি আদায় করতে হাইকোর্টে মামলা করতে হয়েছিল ওঁর আমলে৷ পূজা উনি সুষ্ঠু ভাবে হতে দিলে কি তা করতে হত?''
আয়কর নোটিসের বিরুদ্ধে তৃণমূলের শাখা সংগঠন বঙ্গজননী ব্রিগেড আন্দোলনে নেমেছে৷ তারা এ সপ্তাহে কলকাতার রাস্তায় ধরনায় বসেছিল৷ সেখান থেকে বিজেপিকে আক্রমণ করেন তৃণমূলের নেতা-মন্ত্রীরা৷ তৃণমূল সাংসদ কাকলি ঘোষদস্তিদার বলেন, ‘‘কমিটি পূজার আয়োজন করবে না ট্যাক্স দেবে৷ বিজেপিই বলেছিল, আমরা নাকি পূজা করতে দিই না৷ এখন কারা পুজো বন্ধের চক্রান্ত করছে৷ এটা বাঙালি সংস্কৃতির উপর আঘাত, ধর্মের উপর আঘাত৷ কোনো কমিটি ট্যাক্স দেবে না৷''
এই বিতর্কের পরিপ্রেক্ষিতে আয়কর বিভাগ একটি প্রেস বিবৃতি জারি করে জানিয়েছে, কর দেওয়ার জন্য কমিটিগুলিকে কোনো নোটিস পাঠানো হয়নি৷ এ সম্পর্কে অসত্য প্রচার করা হচ্ছে৷ যে সব ঠিকাদার সংস্থা পূজা থেকে আয় করে তারা কর ফাঁকি দিচ্ছে৷ সে কারণে তাদের দেওয়া টাকা থেকে আগাম কর আদায়ের কথা বলা হয়েছে৷ এই ব্যাখ্যায় তরজা অবশ্য থামছে না৷ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কেন্দ্রের সিদ্ধান্তকে ‘পূজা জিজিয়া কর' বলে তকমা দিয়েছেন৷ বিজেপি নেতারা পাল্টা বলছেন, লোকসভা ভোটে ধাক্কা খেয়ে অতীতে বিসর্জন স্থগিত করে দেওয়া তৃণমূল এখন পূজার পক্ষে সওয়াল করার সুযোগ খুঁজছে৷