1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

মানসিক চাপ

২৩ জুন ২০১২

শিল্পোন্নত দেশগুলিতে কর্মক্ষেত্রে প্রতিযোগিতা বেড়েই চলেছে৷ যোগ্যতা প্রমাণ করতে না পারলে চাকরি টিকিয়ে রাখাই যেন সম্ভব হয় না৷ এর ফলে কর্মীদের মানসিক চাপ বা ‘স্ট্রেস’ বৃদ্ধি পাচ্ছে, দেখা দিচ্ছে নানা রকম মানসিক রোগব্যাধিও৷

https://p.dw.com/p/15KCQ
ছবি: Gina Sanders - Fotolia.com

‘‘আমি আর পারছি না৷ অফিসে এসে পাহাড় সমান কাজ দেখলে মাথা ঘুরে যায়৷'' ইন্টারনেট প্ল্যাটফর্মে এইভাবেই আর্তনাদ ফুটে উঠেছে এক ভুক্তভোগীর কন্ঠে৷ আরেকজন লিখেছে, ‘‘অফিসে এলে এখন আমার অসম্ভব মাথা ধরে, একেবারেই শান্তি পাই না৷'' জার্মানির চাকরিজীবী মানুষদের এই ধরনের অনুযোগ ইদানীং আর কোনো ব্যতিক্রমী বিষয় নয়৷ জার্মান শ্রমিক সমিতির এক সমীক্ষায় জানা গেছে, চাকরি ক্ষেত্রে দক্ষতা প্রমাণ করার চাপ ক্রমেই বেড়ে চলেছে৷ কর্মচারীদের অর্ধেকেরও বেশি চাপের মুখে কাজ করেন৷ ৬৩ শতাংশ একই সময়ের মধ্যে আগের চেয়ে অনেক বেশি কাজ করেন৷ ৭০ এর দশকের তুলনায় চাররিজীবীদের মধ্যে এখন মানসিক রোগের পরিমাণ ১০ গুণের মত বেড়ে গেছে৷

Symbolbild - Überarbeitung
৭০ এর দশকের তুলনায় চাররিজীবীদের মধ্যে এখন মানসিক রোগের পরিমাণ ১০ গুণের মত বেড়ে গেছেছবি: Fotolia/ lichtmeister

স্বাস্থ্যরক্ষার জন্য নেটওয়ার্ক

স্বাস্থ্যবিমাসঙ্ঘ ও স্বাস্থ্যসংক্রান্ত বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানের উদ্যোগে গঠিত একটি নেটওয়ার্ক বিষয়টি নিয়ে মাথা ঘামাচ্ছে৷ নেটওয়ার্কের মুখপাত্র ক্রিস্টিনে রিখটার কর্মীদের মানসিক চাপ অনুভব করার শুরুতেই সতর্ক হওয়ার পরামর্শ দেন৷ তাঁর ভাষায়, ‘‘কারো যদি অনেক দিন ধরে ভালো ঘুম না হয়, কোনো একটি সমস্যা যদি সর্বদাই মাথায় ঘুরতে থাকে, সামাজিক জীবন থেকে নিজেকে সরিয়ে নেয়ার ইচ্ছা জাগে, তাহলে তাকে অবশ্যই ডাক্তারের কাছে যেতে হবে৷''

সামাজিক ও সেবামূলক ক্ষেত্রেই এই সমস্যা বেশি দেখা যায়৷ ক্রিস্টিনে রিখটার আরো জানান, ‘‘এইসব বিভাগের কর্মীরা শুধু মানসিক নয় শারীরিক দিক দিয়েও অত্যন্ত চাপের মধ্যে থাকেন৷ অবশ্য ডাক্তারদের বেশ কাজের চাপ থাকলেও সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষমতা থাকায় নার্সদের তুলনায় তারা তা কম অনুভব করেন৷''
মেয়েরা ভোগেন বেশি

মেয়েরা পুরুষদের তুলনায় মানসিক চাপে ভোগেন বেশি৷ কেননা তাদের পরিবার ও পেশা এই দুইয়ের ভারই সামলে চলতে হয়, যা সব সময় সম্ভব হয় না৷ জার্মান শ্রমমন্ত্রণালয়ের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০০০ সালের তুলনায় ২০১০ সালে দ্বিগুণ মেয়ে মানসিক চাপের কারণে কোনো পেশায় কাজ করতে অক্ষম হয়ে পড়েন৷

মিউনিখের টেকনিক্যাল ইউনিভার্সিটির ‘সেন্টার ফর ডিজিজ ম্যানেজমেন্ট' বিভাগের দেয়া তথ্য মতে, কর্মীদের মানসিক অসুস্থতার কারণে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান বছরে ৮ থেকে ২০ বিলিয়ন ইউরো ক্ষতির সম্মুখীন হয়৷ বছর দুয়েক আগে ইউরোপের ১৮টি দেশ চাকরিজীবীদের মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতির জন্য বিশেষ পদক্ষেপ নেয়ার ব্যাপারে এক বিবৃতিতে স্বাক্ষর করে৷ এ প্রসঙ্গে ক্রিস্টিনে রিখটার বলেন, ‘‘স্বাস্থ্য খাতে এক ইউরো বিনিয়োগ করলে আড়াই গুণ লাভ হয়ে ফিরে আসে৷ কর্মীদের স্বাস্থ্যের দিকে নজর দিলে প্রতিফলও ভালো পাওয়া যায়৷ জার্মানির অনেক প্রতিষ্ঠান যোগ্য কর্মীর অভাবে অসুবিধায় পড়েছে৷''
প্রয়োজন সুনির্দিষ্ট আইন কানুনের

Symbolbild - Überarbeitung
মেয়েরা পুরুষদের তুলনায় মানসিক চাপে ভোগেন বেশিছবি: Fotolia/ Franck Boston

জার্মান শ্রমিক সমিতি ইগে মেটাল শ্রমিকদের স্বাস্থ্য রক্ষার জন্য যথাযথ আইন কানুন প্রণয়নের দাবি জানিয়েছে৷ ইগে মেটালের ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য হানস ইউর্গেন উর্বান বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের মানসিক চাপ প্রতিহত করার জন্য বিশেষ উদ্যোগ নেয়ার ওপর জোর দেন৷ তাঁর ভাষায়, ‘‘‘ওয়ার্ক কাউন্সিল'-এর সদস্যদের এমনভাবে প্রশিক্ষণ দিতে হবে, যাতে তারা কর্মীদের মানসিক চাপের ঝুঁকি অনুভব করতে পারেন এবং প্রতিরোধের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারেন৷ এছাড়া রাজনীতিকদের কাছে আমাদের দাবি, তারা যেন মানসিক চাপ বিরোধী নীতিমালা চালু করেন৷''

তবে আইন কানুন ও নীতিমালা প্রণয়ন করলেও এসবের বাস্তবায়ন খুব সহজ নয়, জানান ক্রিস্টিনে রিখটার৷ কর্মচারীদের স্বাস্থ্যরক্ষায় সচেষ্ট নেটওয়ার্কের পক্ষ থেকে কর্মীদের স্বাস্থ্যরক্ষায় বিশেষ নজর দেয়ার জন্য প্রতি বছর কোনো একটি প্রতিষ্ঠানকে পুরস্কার দেয়া হয়৷ বেশ কয়েক বার ডিটারজেন্ট প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান হেনকেল পুরস্কার পেয়েছে৷ এই প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের মানসিক সমস্যায় পরামর্শ দেয়া হয়৷ এছাড়া মানসিক চাপ দূর করার জন্য নানা ধরনের সেমিনারেরও আয়োজন করা হয়৷ ক্রিস্টিনে রিখটার বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বে থাকা ব্যক্তিদের প্রতি আহ্বান জানান, স্ব স্ব সংস্থার কর্মীদের স্বাস্থ্যরক্ষার বিষয়টির ওপর লক্ষ্য রাখতে৷ তাঁর কথায়, ‘‘কর্মীদের কাছে এই বার্তাই পৌঁছে দিতে হবে যে, রাত ৮ টার পরে তারা অফিসের কাজ থেকে একেবারে মুক্ত, চাকরি সংক্রান্ত ই-মেল ও এসএমএস নিয়ে ব্যস্ত হতে হবে না তাদের৷ মাথায় কাজের বোঝা না থাকলে নিজের ও পরিবারের প্রতি মনোযোগী হতে পারবেন তারা, কমবে মানসিক চাপও৷''

প্রতিবেদন: ক্লাউডিয়া হেনেন / আরবি

সম্পাদনা: দেবারতি গুহ

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য