কর্মক্ষেত্রে মহিলাদের উন্নতি করা শক্ত
১৮ অক্টোবর ২০১৪এককালে মহিলাদের মোটামুটি গৃহকর্ম ও সন্তান প্রতিপালনে সীমাবদ্ধ থাকতে হতো৷ রক্ষণশীল মনোবৃত্তির পুরুষরা আজও যুক্তি দেখান: একজন মহিলার স্থান গৃহে, সন্তানের কাছে৷ কিন্তু সময় বদলাচ্ছে৷ মহিলারা আজ সর্বত্র শ্রমজীবনে আরো বড় ভূমিকা গ্রহণ ও পালন করছেন৷ তা সত্ত্বেও পদোন্নতির সময় তাঁদের উপেক্ষা করা হয় এই যুক্তি দেখিয়ে যে, সন্তানের জন্ম দিতে ও শিশুসন্তানের প্রতিপালনে তাঁদের কর্মজীবনের বেশ কয়েকটা বছর চলে যায় – যখন তাঁরা কোম্পানির কাজে পুরো সময় কিংবা মনোযোগ দিতে পারেন না৷ এই মনোভাবের ফলশ্রুতি: পশ্চিমা বিশ্বেও কোম্পানির বোর্ডরুমে প্রধানত পুরুষদেরই পাওয়া যাবে৷ সিনিয়র ম্যানেজমেন্ট তাঁদের ‘‘মেনস ক্লাব''-এ যোগদানের জন্য প্রধানত পুরুষদেরই মনোনয়ন করে থাকেন৷ পরে গল্ফ খেলার সময় বিজনেসের কথাবার্তা বলা যায় – নয়ত খেলার পর লাউঞ্জে ড্রিংকস-এর সময়েও ‘ডিল' ঠিক করে ফেলা যায়৷ বলতে কি, বহুক্ষেত্রে পুরো ‘ডিল' অর্থাৎ ব্যবসায়িক বোঝাপড়াটা সম্পন্ন হয় ‘মেন ওনলি' পুরুষদের ক্লাবে, মহিলাদের যেখানে প্রবেশাধিকার পর্যন্ত নেই৷
‘কোটা' আসতে চলেছে
জার্মানিতে শিল্প-বাণিজ্যের কর্তা-ব্যক্তিরা বেশকিছুদিন আগে স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে এই প্রতিশ্রুতি দেন যে, মহিলা কর্মকর্তাদের সংখ্যা বাড়ানো হবে৷ সে প্রতিশ্রুতি সত্ত্বেও, সাম্প্রতিক পরিসংখ্যানে ঠিক তার উল্টোটাই দেখা গেছে: জার্মান শিল্পসংস্থাগুলির সর্বোচ্চ পর্যায়ে মহিলাদের সংখ্যা বাড়ছে না, বরং কমছে৷ জার্মানির জনসংখ্যার অর্ধেকের বেশি মহিলা, কিন্তু কোম্পানির পরিচালক পর্যায়ে মাত্র ৫ দশমিক ৮ শতাংশ মহিলাকে পাওয়া যাবে৷ শেয়ারবাজারে নাম লেখানো কোম্পানিগুলির ক্ষেত্রে পরিস্থিতি কিছুটা বদলেছে, কেননা ২০১৬ সাল থেকে বোর্ড অফ ডাইরেক্টর্স-এর ৩০ শতাংশ হতে হবে মহিলা – এই কোটা আইন করে বেঁধে দেওয়া হয়েছে৷ তার সুফল: ইতিমধ্যেই জার্মানির ‘লিস্টেড' কোম্পানিগুলির বোর্ডরুমে মহিলাদের অনুপাত ১০ শতাংশ থেকে বেড়ে ১৮ শতাংশে দাঁড়িয়েছে৷
‘কাচের ছাদ'
খোদ মাইক্রোসফ্ট-এর সিইও সত্য নাদেলা সম্প্রতি মন্তব্য করেছেন যে, প্রযুক্তিক্ষেত্রে কর্মরত মহিলাদের বেতনবৃদ্ধি দাবি করা উচিত নয় – যে মন্তব্যের ফলে ব্যাপক বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে৷ নাদেলার এই মন্তব্য থেকেই বোঝা যায়, কর্পোরেট দুনিয়ায় মহিলারা যখন অসাম্য দূর করার চেষ্টা করেন, তখন তাঁদের কী ধরনের বাধার সম্মুখীন হতে হয়৷ মহিলারা নাদেলার পরামর্শ মতো এই ব্যবস্থাপনায় বিশ্বাস রাখবেন কেন, যে ব্যবস্থাপনা তাঁদের কোনো আশা পূর্ণ করেনি? তাঁদের পুরুষ সতীর্থদের মতো বেতনবৃদ্ধি দাবি না করে, তাঁরা নীরব থাকবেন কেন? মহিলাদের জন্য এই ‘গ্লাস সিলিং' – ওপরে ওঠার পথে স্বচ্ছ কাচের মতো অদৃশ্য ছাদ বা অনতিক্রম্য প্রতিবন্ধক থাকবে কেন?
আসল কথা হলো, আধুনিক বিশ্বে মহিলাদের প্রতি এ ধরনের বৈষম্যের কোনো স্থান নেই৷ কর্মদক্ষতা এবং কোম্পানির সাফল্যে তাঁদের অবদানের মাপকাঠিতে তাঁদের বিচার করা উচিত, ‘জেন্ডার' অথবা সেই জেন্ডার-সংক্রান্ত মান্ধাতার আমলের পুরুষালি মনোভাব দিয়ে নয়৷
পশ্চিমা বিশ্বে বৈবাহিক জীবন সম্পর্কে সাম্প্রতিক জরিপ থেকেও দেখা গেছে যে, গৃহকর্মের একটা বৃহদাংশ আজও মহিলাদের উপর ন্যস্ত, যেহেতু পুরুষরা নিয়মিতভাবে তাদের কাজের ভাগটা এড়িয়ে যান অথবা ভালোভাবে করেন না৷ অর্থাৎ যেমন কর্মক্ষেত্রে, তেমনই গৃহকর্মে একটা বড় পরিবর্তনের সময় এসেছে৷