কর্মক্ষেত্রে নারীদের যত চ্যালেঞ্জ
বাংলাদেশে কর্মক্ষেত্রে নারীদের অংশগ্রহণ বেড়ে চলেছে দিন দিন৷ তার পরেও কর্মক্ষেত্রে নানা চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হচ্ছেন নারীরা৷ ডয়েচে ভেলের পক্ষ থেকে কথা বলা হয়েছিল বিভিন্ন পেশায় যুক্ত কয়েকজন নারীর সঙ্গে৷
মাকসুদা আক্তার, ব্যাংকার
ব্যক্তিগতভাবে আমার দীর্ঘ ১৫ বছরের কর্মক্ষেত্রে মেয়েদের যে চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে দেখেছি তা হলো, একজন পুরুষ সহকর্মীকে বাসায় পৌঁছে তাদের গৃহস্থালির কাজকর্ম বা সন্তানদের সামলানোর বিষয়ে মনোযোগ দিতে হয়না৷ কিন্তু কর্মক্ষেত্রে একজন পুরুষ সহকর্মীর মতো একজন নারী কর্মীকেও সমান সময় অতিবাহিত করতে হয়৷ নারীকর্মীদের কর্মক্ষেত্রে সহনশীল মাত্রার কর্ম ঘণ্টা নির্ধারণ ও তার বাস্তব রূপ দেয়া আমার দাবি৷
ডা. তানজিয়া তামান্না, চিকিৎসক
শিক্ষানবিশ চিকিৎসক হিসেবে একটি সরকারি হাসপাতালে যখন কাজ করেছি তখন নানারকম সমস্যা মোকাবিলা করেছি৷ রোগীর সাথে আসা লোকজন প্রায়শই অনাকাঙ্ক্ষিত বক্তব্য ছুড়ে দিত৷ রাতে ডিউটি থাকলে হোস্টেল থেকে হাসপাতাল যেতে এবং ফিরে আসতে সবসময়ই একটা অজানা ভয় কাজ করতো৷ বর্তমানে বাচ্চা নিয়ে অফিস চালাতে গিয়ে প্রতি মুহূর্তে কর্মক্ষেত্রে একটি চিল্ড্রেন্স সেন্টারের প্রয়োজন বোধ করি৷
আফসানা সিয়াম, শিক্ষক
রাস্তায় চলতে ইভটিজিং-এর শিকার হই, অনেকসময় ক্লাসেই কিছু ছাত্রও এ কাজটি করে৷ ম্যাসেঞ্জারে অনেক আজে বাজে টেক্সট পাই৷ আমার মতে, মাতৃত্বকালীন ছুটিটা পর্যাপ্ত দেয়া প্রয়োজন৷ বেশিরভাগ বেসরকারি স্কুলে মাতৃত্বকালীন ছুটি সাধারণত ২ মাস দেয়া হয়৷ এটা বাড়ানো উচিত৷ এছাড়া পরিবার সামলাতে হয়, যেমন ছেলে মেয়ে অসুস্থ হলে ছোট-খাট ছুটি প্রয়োজন হয়৷ কর্মজবীবী নারীদের প্রতি প্রতিষ্ঠানের সহমর্মিতা দেখানো উচিত৷
জয়ীতা রায়, আলোকচিত্র সাংবাদিক
আমার কাজের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো সবসময়ই আমাকে ছেলেদের সঙ্গে কাজ করতে হয়৷ তাই সবসময় আমাকে প্রমাণ করতে হয় আমি তাদের সমানই কাজ করতে পারি৷ এছাড়া দূরে কোথাও বড় কোনো ঘটনা ঘটলে জায়গাটিতে পৌঁছুতে, যেমন কীভাবে যাব কিংবা কার সঙ্গে যাব এরকম অনেক অনেক চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হতে হয় আমাকে৷ আমি চাই, সব জায়গায় সবসময় মেয়েরা যেন স্বাধীনভাবে সম্মানের সঙ্গে চলার পরিবেশ পায়৷
সানজিদা আফরিন, উন্নয়নকর্মী
কাজের জায়গায় না হলেও দেখা যায় স্টেকহোল্ডারদের সাথে আমরা বিভিন্ন বৈষম্যমূলক আচরণ পাই৷ মেয়েদের কাজের জন্য ওয়ার্ক ফ্রম হোম, চাইল্ড ফ্রেন্ডলি স্পেস রাখা অথবা ফ্লেক্সিবল ওয়ার্কিং রোস্টার, এ ধরনের সুযোগ সুবিধা নিশ্চিত করা গেলে ভালো হয়৷
সাজু বেগম, পোশাক শ্রমিক
তাঁর কাছে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ, যা বেতন পান তা দিয়ে মাসের দিনগুলো পার করা৷ এছাড়া পোশাক শ্রমিক বলে অনেকেই ছোট করে দেখে, যা তাঁকে সবসময়ই কষ্ট দেয়৷ সাজু বেগমের চাওয়া, পোশাক শ্রমিকদের থাকার জন্য কোনো জায়গার ব্যবস্থা করা৷ তাহলেই কেবল স্বল্প বেতনে ভালোভাবে বেঁচে থাকা সম্ভব বলে মনে করেন তিনি৷
শেফালি আক্তার, সরকারি চাকুরে
কর্মজীবী হিসেবে শেফালি আক্তারের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ অফিস এবং বাড়ি দুটিই সমানভাবে সামলানো৷ এছাড়া কর্মক্ষেত্রে অনেক সময় পুরুষ সহকর্মীরাও তাদের অনেক কাজ চাপিয়ে দেয়ার চেষ্টা করেন৷ তাঁর মতে, প্রতিটি সরকারি অফিসে ডে কেয়ার সেন্টার থাকা উচিত৷
আলেয়া বেগম, গৃহকর্মী
গৃহকর্মী হিসেবে আলেয়া বেগম যে চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হন তা হলো নিত্য বকাঝকা ও দুর্ব্যবহার৷ অনেক সময় খুব ছোট ছোট ব্যপারেও গৃহকর্ত্রীরা খুবই দুর্ব্যবহার করেন৷ কোনো ছুটির দিন না থাকাটাও তাঁর কাছে অনেক চ্যালেঞ্জের৷ তাঁর মতে, প্রত্যেক গৃহকর্মীর জন্যই সপ্তাহে অন্তত একটি দিন ছুটি দেয়া উচিত৷
মুক্তা বেগম, দিন মজুর
ইটের ভাটায় দিনমজুরের কাজ করেন মুক্তা বেগম৷ কর্মক্ষেত্রে তাঁর সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো পুরুষদের সমান কাজ করলেও তাঁকে মজুরি দেয়া হয় একজন পুরুষের অর্ধেকের একটু বেশি৷ সকল ক্ষেত্রে মজুরি বৈষম্য দূর করাই তাঁর দাবি৷
কুলসুম আক্তার, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী
ব্যবসায় যেহেতু তাঁকে একটু বেশি সময় দিতে হয় তাই তাঁর কাছে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো পরিবার সামলানো৷ তাঁর মতে, শিশুদের স্কুলগুলোর সময়সূচি এমন হওয়া উচিত যাতে দিনের বড় একটা সময় সন্তানদের স্কুলে রাখতে পারেন৷ এছাড়া প্রতিটি এলাকায় শিশুদের দেখভালের জন্য পর্যাপ্ত ডে কেয়ার সেন্টার গড়ে তোলা উচিত সরকারি উদ্যোগেই৷