করোনা সংক্রমণ কমছে ডেঙ্গু বাড়ছে
২৪ আগস্ট ২০২১দেশে এক সপ্তাহে করোনায় মৃত্যু ২৭ ভাগ কমেছে৷ আর সংক্রমণও কমেছে ৩৪ ভাগ৷ সব মিলিয়ে করোনা পরিস্থিতির উন্নতি দেখা যাচ্ছে বাংলাদেশে৷ কিন্তু প্রশ্ন হলো এটা স্থায়ী হবে কী না৷ কারণ ভারতে ডেল্টা প্লাস সংক্রমণ বাড়ছে৷ সেখানে অক্টোবরে করোনার আরকটি নতুন ওয়েভের আশঙ্কা করা হচ্ছে৷
২৪ ঘন্টায় বাংলাদেশে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ১১৪ জন৷ আর করোনায় আক্রান্ত বলে সনাক্ত হয়েছেন পাঁচ হাজার ২৪৯ জন৷ আর ২৪ ঘন্টায় সনাক্তের হার শতকরা ১৫.১২ ভাগ৷ এপর্যন্ত গড় সনাক্তের হার ১৬.৮৯ ভাগ৷
এদিকে হাসপাতালেও চিকিৎসার জন্য রোগীদের ভিড় আগের তুলনায় কমছে৷ ঢাকার সরকারি কোভিড হাসপাতালের ৩৮২টি আইসিইউ বেডের মধ্যে ৪৫টি খালি আছে৷ চার হাজার ২৭২টি কোভিড বেডের মধ্যে দুই হাজার ৪৪৩টি খালি আছে৷
বাংলাদেশে স্বাস্থ্যবিধি মানার শর্তে একমাত্র শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ছাড়া আর সব কিছুই খুলে গেছে৷ প্রাথমিক থেকে উচ্চ শিক্ষার সব প্রতিষ্ঠান খুলে দেয়ার প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে৷ প্রধানমন্ত্রী নিজেও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দেয়ার জন্য বলেছেন৷
কিন্তু ভারতে অক্টোবর মাসে আবার নতুন করোনা ওয়েভের আশঙ্কা করা হচ্ছে৷ সেখানে ডেল্টা প্লাস ভেরিয়েন্টের সংক্রমণ বাড়ছে৷ বাংলাদেশে করোনার দ্বিতীয় ওয়েভ শুরু হয় ডেল্টা ভেরিয়েন্ট দিয়েই৷ সীমান্ত এলাকা দিয়ে এই ভেরিয়েন্ট সারাদেশে ছড়িয়ে পড়ে৷ তাই প্রশ্ন উঠেছে বাংলাদেশে করোনা সংক্রমণ কমে আসার এই হার স্থায়ী হবে কী না৷ আর সেটা স্থায়ী করতে হলে করণীয় কী?
করোনা সংক্রান্ত জাতীয় পরামর্শক কমিটির সদস্য এবং বিএসএমইউর সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম মনে করেন," করোনা সংক্রমণ আরো কমবে৷ গত বছরও এই সময়েই সংক্রমণ কমে গিয়েছিলো৷ তবে এর কারণ কী সে সম্পর্কে আমাদের কোনো গবেষণা নেই৷ গত বছর করতে চেয়েছিলাম, পারিনি৷ তবে এবার একটা গবেষণা শুরু করেছি৷ এখনও ফল হাতে পাইনি৷”
তিনি আরো মনে করেন,"এবার কিছু সতর্কতা অবলম্বন করলে এখানে আর হয়তো করোনা বাড়বে না৷ ভ্যাকসিন যদি দ্রুত দিয়ে দেয়া যায় তাহলে অনেক ভালো হবে৷ আর স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে৷ এটা আরো কড়াকড়ি করতে হবে৷”
ভারতে আবার ওয়েভ শুরু হলে বাংলাদেশেও হবে কী না জানতে চাইলে তিনি বলেন,"এবার সেরকম হবে বলে মনে করি না৷ তবে আমাদের উচিত হবে সীমান্ত বন্ধ করে দেয়া৷”
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. লেলিন চৌধুরী বলেন," আমাদের এখনই খুশি হওয়ার কিছু নাই৷ অক্টোবরে আরেকটি ওয়েভ আসতে পারে৷ সেটা ঠোকতে হলে আমাদের এখনই ব্যবস্থা নেয়া প্রয়োজন৷”
এদিকে আগস্ট মাসের প্রথম ২২ দিনে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন পাঁচ হাজার ৩৮৩ জন৷ আর জানুয়ারি থেকে এপর্যন্ত হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন আট হাজার ৪১ জন৷ সেই বিবেচনায় শুধু আগস্ট মাসের ২২ দিনেই মোট আক্রান্তের ৬৭ ভাগ আক্রান্ত হয়েছেন৷ চলতি বছরে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হিসাবে মারা গেছেন ৩৮ জন৷ এখন হাসপাতালে ভর্তি আছেন এক হাজার ৭৭ জন৷ তাদের মধ্যে ঢাকার সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি আছেন ৯৮৮জন৷ আশঙ্কার কথা হলো এবার যারা ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হচ্ছেন তাদের শতকরা ৫০ ভাগই শিশু৷
ডেঙ্গুর এই খারাপ পরিস্থিতি বিবেচনা করে ঢাকার ছয়টি হাসপাতালকে ডেঙ্গু রোগীদের চিকিৎসার জন্য নির্দিষ্ট করে দেয়া হয়েছে৷ অন্যান্য হাসপাতালেও চিকিৎসা চলবে৷ গত ২৪ ঘন্টায় হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ২১২ জন৷
লেলিন চৌধুরী বলেন," ডেঙ্গুর এই পরিস্থিতির জন্য আমাদের দায়িত্বহীনতাই দায়ী৷ এবার বছরের শুরু থেকেই বিশেষজ্ঞরা বলে আসছিলেন যে এবার ডেঙ্গু ভয়বহ হবে৷ কারণ এডিস মশার উপস্থিতি অনেক বেশি পাওয়া যাচ্ছিল৷ কিন্তু কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি৷ ডেঙ্গু মশার চার ভাগের তিন ভাগই হচ্ছে সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত স্থাপনায়৷ আর এক ভাজ বাসাবাড়িতে৷ নগরবাসিকে সচেতন হতে হবে৷ কিন্তু বাকি তিন ভাগ মশার দায় কার? মেয়র নগরবাসীকে দায়ী করছেন৷ কিন্তু তারা কি দায়িত্ব পালন করেছেন?''
বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকেরা বলছেন করোনা এবং ডেঙ্গুর উপসর্গ প্রায় একই রকম হওয়ায় বিভ্রান্তি বাড়ছে৷ তাই এখন করোনা এবং ডেঙ্গুর টেস্ট একই সঙ্গে করানো জরুরি৷