করোনা সংক্রমণের রেকর্ড ভাঙলো ইউরোপ
২০ জুলাই ২০২১দেড় বছরেরও বেশি সময় ধরে করোনা ভাইরাস বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে৷ তবে ইউরোপ মহাদেশে করোনার রমরমা বিশেষভাবে নজর কাড়ছে৷ চরম ছোঁয়াচে ডেল্টা ভেরিয়েন্টও সেখানে জাঁকিয়ে বসেছে৷ এবার মোট পাঁচ কোটি আক্রান্তের রেকর্ড ছুঁলো ইউরোপ৷ মোট মৃত্যুর সংখ্যা প্রায় ১৩ লাখ৷ অর্থাৎ গোটা বিশ্বে করোনা সংক্রমণের প্রায় ২৭ শতাংশ এবং মৃত্যুর প্রায় ৩১ শতাংশের ভাগীদার এই মহাদেশ৷ শুধু রাশিয়ায়ই আক্রান্তের সংখ্যা ষাট লাখ পেরোতে চলেছে৷ সংবাদ সংস্থা রয়টার্সের হিসেব অনুযায়ী, প্রতি আট দিন অন্তর সেখানে নতুন করে দশ লাখ মানুষ করোনায় আক্রান্ত হচ্ছেন৷
দেরিতে হলেও করোনা টিকাদানের ক্ষেত্রে বিশ্বের বাকি অনেক অঞ্চলের তুলনায় যথেষ্ট সাফল্য সত্ত্বেও করোনার গ্রাস থেকে পরিত্রাণ পাচ্ছে না ইউরোপ৷ ফলে গ্রীষ্মের শেষে আবার লকডাউন ও জনজীবন স্তব্ধ করতে অন্যান্য পদক্ষেপের আশঙ্কা বাড়ছে৷ পুঁজিবাজারেও সেই আশঙ্কার প্রভাব দেখা যাচ্ছে৷ সোমবার প্রায় দুই শতাংশ দরপতন ঘটেছে৷ বিশেষ করে গ্রীষ্মের ছুটির মরসুমে বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটন ক্ষেত্রে প্রত্যাশিত আয় বাস্তবে সম্ভব হবে না বলে বিনিয়োগকারীরা আশঙ্কা করছেন৷ বিশ্বের অন্য প্রান্তেও পুঁজিবাজারের উপর চাপ বাড়ছে৷
করোনা সংক্রমণ বেড়ে চলায় ইউরোপের বেশ কিছু দেশ ইতোমধ্যেই আবার কিছু কড়া পদক্ষেপ নিতে শুরু করেছে৷ ফ্রান্স আগস্ট মাস থেকে অনেক ক্ষেত্রে ইমিউনাইজেশন ছাড়পত্র বাধ্যতামূলক করতে চলেছে৷ এভাবে অবশিষ্ট মানুষের উপর টিকা নেবার জন্য বাড়তি চাপ সৃষ্টি করতে চায় সরকার৷ তবে এমন পদক্ষেপের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ-বিক্ষোভও দেখা যাচ্ছে৷ স্বাস্থ্যকর্মীদের জন্য করোনা টিকা বাধ্যতামূলক করছে সে দেশ৷ নেদারল্যান্ডস আবার নতুন করে হোম অফিসের নিয়ম চালু করছে৷ তাছাড়া বার, রেস্তোরাঁ ও নাইটক্লাবেও বিধিনিয়ম আবার ফিরে আসছে৷ গ্রিসেও অনেক ক্ষেত্রে টিকার প্রমাণপত্র বাধ্যতামূলক করা হচ্ছে৷
সোমবার ইংল্যান্ড ‘ফ্রিডম ডে’ উদযাপন করে করোনা সংক্রান্ত প্রায় সব বিধিনিষেধ তুলে নিয়েছে৷ একই দিনে সংক্রমণের গড় হার ৫০,০০০ পেরিয়ে গেছে৷ দেশবাসীর উপর এমন ‘বেপরোয়া’ পরীক্ষার বিরুদ্ধে সোচ্চার হচ্ছেন অনেক বিশেষজ্ঞ৷ ইউরোপের অন্য অনেক দেশের মতো সেখানেও শেষ পর্যন্ত আবার বিধিনিয়ম ফিরিয়ে আনতে হবে বলে অনেকে পূর্বাভাষ দিচ্ছেন৷
কয়েক সপ্তাহ আগে সংক্রমণের হার কমতে থাকলেও জার্মানি করোনা সংক্রান্ত মৌলিক বিধিনিষেধ শিথিল না করার সুফল পাচ্ছে৷ বধ্য জায়গায় মাস্ক ও সামাজিক দূরত্বের কড়া নিয়মের কারণে ইউরোপের অনেক দেশের তুলনায় জার্মানির করোনা পরিস্থিতি অনেক ভালো৷ দশ-বারো দিন ধরে সংক্রমণের হার বেড়ে চললেও ইনসিডেন্সের মাত্রা সবে দশ অতিক্রম করেছে৷ তবে সংক্রমণের হার আরও বাড়বে বলে কর্তৃপক্ষ আশঙ্কা করছে৷ বিশেষ করে আক্রান্তদের মধ্যে ডেল্টা ভেরিয়েন্টের অনুপাত বেড়ে চলায় এমনটা অবশ্যম্ভাবী৷ টিকাদান কর্মসূচির গতি বাড়িয়ে হেমন্ত কালের আগে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা চালানো হচ্ছে৷
এসবি/এসিবি (রয়টার্স, এএফপি)