করোনা টিকা রপ্তানিকে ঘিরে ইইউ-ব্রিটেনের সংঘাত
১৮ মার্চ ২০২১ধীর গতিতে করোনার টিকাদান কর্মসূচির জন্য প্রবল চাপের মুখে রয়েছে ইউরোপীয় কমিশন৷ অথচ টিকা কোম্পানিগুলির সঙ্গে দরকষাকষি করে ছোটবড় সব সদস্য দেশের জন্য ন্যায্য দামে যথেষ্ট পরিমাণ টিকা কেনা ও বণ্টনের দায়িত্ব নিয়েছিল ইউরোপীয় ইউনিয়নের নির্বাহী প্রতিষ্ঠান৷ কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ফন ডেয়ার লাইয়েন বুধবার বিষয়টি সম্পর্কে বক্তব্য রাখেন এবং ভবিষ্যতে ইইউ সদস্য দেশগুলির জন্য যথেষ্ট পরিমাণ টিকার সরবরাহ নিশ্চিত করতে কড়া পদক্ষেপের ইঙ্গিত দেন৷
টিকা কেনার জন্য বিভিন্ন কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষরের সময়ে ইইউ কমিশন একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়কে যথেষ্ট গুরুত্ব দেয় নি৷ এই সব কোম্পানির উৎপাদন কেন্দ্র একাধিক দেশে ছড়িয়ে রয়েছে৷ ফলে চাহিদা মেটাতে কোম্পানিগুলি একাধিক দেশে করোনা টিকা রপ্তানিও করছে৷ দেখা যাচ্ছে, চুক্তি অনুযায়ী ইইউ যথেষ্ট পরিমাণ টিকা হাতে না পেলেও ইউরোপীয় ইউনিয়নে উৎপাদিত টিকা দিব্যি বাইরে পাঠানো হচ্ছে৷ বিশেষ করে ব্রিটেন এর ফলে বিশেষভাবে উপকৃত হচ্ছে৷ গত জানুয়ারি মাস থেকে ইইউ-র বাইরে টিকা রপ্তানির জন্য আলাদা অনুমতির নিয়ম চালু হলেও বাস্তবে সবসময়ে তাতে ফল পাওয়া যাচ্ছে না৷ ফেব্রুয়ারি মাসের শুরু থেকে ইইউ-তে তৈরি প্রায় চার কোটি দশ লাখ টিকা ৩৩টি দেশে রপ্তানি করা হয়েছে বলে ইইউ কমিশন জানিয়েছে৷ সমালোচকদের মতে, রপ্তানি বন্ধের মতো কড়া পদক্ষেপের বদলে চুক্তি ভাঙার দায়ে কোম্পানিগুলির বিরুদ্ধে মামলা করা উচিত৷
বলা বাহুল্য, এমন পরিস্থিতিতে ইইউ দেশগুলিতে ক্ষোভ বাড়ছে৷ সমালোচনার মুখে ইইউ কমিশন প্রেসিডেন্ট রপ্তানির ক্ষেত্রে আরও কড়া নিয়ম চালু করার ইঙ্গিত দিয়েছেন৷ তাঁর মতে, যে সব দেশে টিকা রপ্তানি হচ্ছে, সে সব দেশও একই রকম উদারতা না দেখালে কড়া পদক্ষেপ নেওয়া হতে পারে৷ অর্থাৎ সেই দেশ টিকা রপ্তানি নিষিদ্ধ করলে ইইউ-ও পালটা পদক্ষেপ নেবে৷ তবে পারস্পরিক বোঝাপড়া থাকায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সংঘাতের আশঙ্কা নেই৷ সরাসরি নাম করে ব্রিটেনের প্রতি সতর্কতার বার্তা দেওয়া হয়েছে৷
প্রাক্তন সদস্য দেশ হিসেবে ব্রিটেন ইউরোপীয় ইউনিয়নে তৈরি প্রায় এক কোটি টিকার ডোজ হাতে পেলেও সে দেষ থেকে ইইউ-তে টিকা রপ্তানি করতে দিচ্ছে না বলে অভিযোগ উঠছে৷ চলতি মাসে ইইউ শীর্ষ সম্মেলনে সে বিষয়ে সিদ্ধান্তের ইঙ্গিত দিয়েছেন ফন ডেয়ার লাইয়েন৷ তবে টিকা রপ্তানির ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞার মতো চরম সিদ্ধান্তের বদলে প্রাপ্য টিকার ন্যায্য বণ্টনের ডাক দিয়েছেন তিনি৷
ব্রিটেন অবশ্য এমন গুরুতর অভিযোগের মুখে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে৷ সে দেশের স্বাস্থ্যমন্ত্রী ম্যাট হ্যানকক বলেন, কোম্পানিগুলির সঙ্গে ব্রিটেনের যাবতীয় চুক্তি অনুযায়ী তিনি টিকা সরবরাহ প্রত্যাশা করেন৷ এক বিবৃতির মাধ্যমে তিনি আরও মনে করিয়ে দেন, যে ব্রিটিশ সরকারের অর্থে চালিত গবেষণার ফলে অ্যাস্ট্রাজেনিকা-অক্সফোর্ড টিকা তৈরি হয়েছে৷ তাঁর সরকারই ব্রিটেন এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নে ‘সাপ্লাই চেন’ বা সরবরাহের শৃঙ্খলা গড়ে তুলতে সহায়তা করেছে৷ টিকা কোম্পানিগুলি চুক্তির শর্ত পূরণ করতে যেখানে সম্ভব উৎপাদন করছে বলে ব্রিটিশ স্বাস্থ্যমন্ত্রী মনে করেন৷ তিনি ফন ডেয়ার লাইয়েনের মন্তব্যের ভিত্তিতে ইইউ-র স্পষ্ট অবস্থান জানতে চেয়েছেন৷ উল্লেখ্য, চলতি মাসের শুরুতে ব্রিটিশ সরকার সে দেশ থেকে টিকা রপ্তানির ক্ষেত্রে বাধা সৃষ্টির অভিযোগ অস্বীকার করেছিল৷ ইইউ এ বিষয়ে ব্রিটিশ সরকারের বক্তব্য জানতে চাইলেও এখনো কোনো জবাব পায় নি৷
এসবি/কেএম (ডিপিএ, রয়টার্স)