1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

করোনা আতঙ্কের গ্রাসে ভারত

১৬ মার্চ ২০২০

করোনা আতঙ্কে কাঁপছে ভারত। সবমিলিয়ে ১১৬ জন আক্রান্ত হয়েছেন। মারা গিয়েছেন ২ জন। কিন্তু প্রায় প্রতিটি রাজ্যেই করোনার আতঙ্ক গ্রাস করেছে। করোনার জন্য সুপ্রিম কোর্টও অত্যন্ত জরুরি বিষয় ছাড়া যে কোনও মামলার বিচার বন্ধ রেখেছে।

https://p.dw.com/p/3ZUlR
ছবি: DW/A. Ansari

শুরু হয়েছিল দিল্লি দিয়ে, এখন ভারতের অনেক রাজ্যেই স্কুল, কলেজ, সিনেমা হল ৩১ মার্চ পর্যন্ত বন্ধ করে দেওয়া হল। করোনা আতঙ্কে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাজ্য সরকারগুলি। পশ্চিমবঙ্গেও স্কুল ও কলেজ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। কর্ণাটক, পাঞ্জাব, মহারাষ্ট্র, ওড়িশা, গোয়া, অসম, বিহারেও তাই হয়েছে। ওড়িশাতে সিনেমা হল, সুইমিং পুল, জিমও বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। বিহারে কোচিং ইনস্টিটিউট, পার্ক, চিড়িয়াখানা বন্ধ। পাঞ্জাবে সিনেমা হলের পাশাপাশি রেস্তোরাঁ ও ক্লাবও বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। একই ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে মহারাষ্ট্রেও। সেখানেও সিনেমা, থিয়েটার, সুইমিং পুল, পার্ক বন্ধ। গোয়ায় ক্যাসিনো, পাব, মাল্টিপ্লেক্স সব বন্ধ।

দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল ঘোষণা করেছেন,  পঞ্চাশজনের বেশি লোককে নিয়ে সাংস্কৃতিক, ধর্মীয় বা অন্য কোনও ধরনের অনুষ্ঠান করা যাবে না। বিয়েবাড়িকে আপাতত ছাড় দেওয়া হয়েছে। কিন্তু বন্ধ থাকবে যাবতীয় স্পা, জিম, নাইট ক্লাব। শপিং মল বন্ধ করার কথাও বিবেচনা করা হচ্ছে। দিল্লির বিভিন্ন রাস্তায় মোবাইল হাত ধোওয়ার জায়গা থাকবে। সেখানে সাবান রাখা থাকবে এবং তা দিয়ে হাত ধুয়ে নিতে পারবেন লোকেরা। তাছাড়া বড় বাড়িগুলির তলায় গার্ড বা রক্ষীদের কাছে স্যানিটাইজার রাখা থাকবে। এ ছাড়া তিনটি হোটেল বিদেশিদের জন্য রাখা হচ্ছে। যে সব বিদেশি কোয়ারেনটাইনে থাকতে চান, তারা সেখানে পয়সা দিয়ে থাকতে পারবেন।    

বাংলাদেশের অবস্থা ভারতের থেকে কিছুটা ভালো। তবে সেখানেও আরও দুইজন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। সবমিলিয়ে সেখানে পাঁচজন আক্রান্ত হলেন। বাংলাদেশেও সব স্কুল, কলেজ বন্ধ করার দাবি উঠেছে। সরকার সেই দাবি বিবেচনা করে দেখছে।

করোনা আতঙ্কের ফলে ভারতের সুপ্রিম কোর্ট সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তারা কেবলমাত্র অত্যন্ত জরুরি মামলারই বিচার করবে। সাধারণত সুপ্রিম কোর্টে ১৪টা বেঞ্চ বসে। কিন্তু সোমবার থেকে ছয়টা বেঞ্চ বসছে। করোনা রুখতে সরকার বেশি লোকের জমায়েত চায় না। সেই বিজ্ঞপ্তির কথা মাথায় রেখে সর্বোচ্চ আদালত ঠিক করেছে, আইনজীবী, মামলাকারী, আদালতের কর্মী, সাংবাদিক, দর্শনার্থীদের স্বার্থে শুধুমাত্র অত্যন্ত জরুরি বিষয়েই শুনানি হবে। যারা মামলায় সওয়াল করবেন, একমাত্র সেই আইনজীবীরাই আদালতকক্ষে থাকবেন। আর মামলাকারী একজন থাকতে পারবেন। সোমবার যেমন প্রতিটি বেঞ্চে বারোটি করে মামলা রাখা আছে। তার মধ্যে নির্ভয়ার ধর্ষক মুকেশ কুমারের আবেদনও আছে। বিচারপতিরা ছয়টি করে মামলার শুনানির পর আধঘণ্টা বিশ্রাম নেবেন। আদালত চত্বরে সব ক্যান্টিন, কাফে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। মামলাকারীদের জ্বর আছে কি না, তা দেখার জন্য দেহের তাপমাত্রা পরিমাপের ব্যবস্থাও করা হয়েছে।

সুপ্রিম কোর্টের এই নির্দেশই বুঝিয়ে দিচ্ছে, আতঙ্ক কোন জায়গায় পৌঁছেছে। বস্তুত দিল্লির সাধারণ জনজীবন পুরোপুরি বিপর্যস্ত। রাস্তায় যানবাহন কম। বাজারে ভিড় নেই। মেট্রো রেলও কার্যত শুনশান। কিছু কেনার হলে লোকে হোম ডেলিভারিতে অর্ডার দেওয়াই পছন্দ করছেন। বিভিন্ন খুচরো ব্যবসার সংস্থা ক্রেতাদের এসএমএস করে জানিয়েছে, হোম ডেলিভারির ক্ষেত্রেও শারীরীক ছোঁয়া বর্জন করতে হবে। এমনিতে রাজধানীর যে সব জায়গায় ভিড় হয়, পাইকারি বাজার থেকে শুরু করে চাঁদনী চক বা করোল বাগের মতো এলাকা, সেখানেও লোকের সংখ্যা কম। দিল্লির অনেক অফিসই কর্মীদের বাড়ি থেকে কাজ করার নির্দেশ দিয়েছে। যাত্রী না থাকায় বহু ফ্লাইট বাতিল হয়ে যাচ্ছে। এমনকী, এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহের ফ্লাইটও বাতিল করে দিচ্ছে বেসরকারি বিমান সংস্থাগুলি। লোকে ঘরের বাইরে বেরতে চাইছেন না। বেরলেও দ্রুত ফিরে আসছেন। এই অবস্থায় বেড়াতে যাওয়া কমে গিয়েছে। ভিসা বাতিলের জন্য বিদেশিরাও ভারতে আসতে পারছেন না। ফলে যে সব জায়গায় পর্যটকের ভিড় থাকত, সেখানে এখন কার্যত কোনও লোক নেই। এর প্রভাব অর্থনীতিতে প্রবলভাবে পড়বে বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। ইতিমধ্যে শেয়ার বাজারে করোনার প্রভাব দেখা গিয়েছে। সোমবারও ভারতের শেয়ার বাজার ১৬০০ পয়েন্ট পড়েছে। ডলারের তুলনায় টাকার দাম আরও ৪১ পয়সা কমেছে।

এই আতঙ্কের জেরে একের পর এক অনুষ্ঠান বাতিল করা হচ্ছে। নিখিল ভারত বঙ্গ সাহিত্য সম্মেলন তাদের তিনদিনের বৈঠক বাতিল করেছে। এখানেই ৬ এপ্রিল শেখ মুজিবুর রহমানের শতবর্ষ পালন করার কথা ছিল। বাংলাদেশ থেকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী সহ ৫০ জনের দল আসার কথা ছিল। কিন্তু ১৫ এপ্রিল পর্যন্ত সব ভিসা বাতিল হয়ে যাওয়ায় তাঁদের আসার সম্ভাবনা নেই। তার ওপর করোনার আতঙ্ক। তাই সেই সংস্থার বাৎসরিক সম্মেলন আপাতত বাতিল করা হয়েছে। চিত্তরঞ্জন ভবনের বাংলা বইমেলা পিছিয়ে সেপ্টেম্বরে করা হবে বলে ঠিক হয়েছে। বেঙ্গল অ্যাসোসিয়েশনের বাংলা বইমেলাও সম্ভবত পিছিয়ে যাচ্ছে। বস্তুত রাজধানী শহরে স্বাভাবিক জনজীবন অনেকটাই বিপর্যস্ত। একই অবস্থা দেশের অন্য শহরগুলিতে।

এখনও পর্যন্ত ভারতে ১১৬ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। তার মধ্যে সব চেয়ে বেশি লোক আক্রান্ত হয়েছেন মহারাষ্ট্রে। সেখানে ৩৩ জন আক্রান্ত। তারপরেই আছে কেরালা। সেখানে ২২ জনের করোনা হয়েছে।দিল্লিতে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন সাতজন। তার মধ্যে দুই জন ভাইরাস মুক্ত হয়েছেন। সবমিলিয়ে মারা গিয়েছেন দুই জন। ইরান থেকে আরও ৫৩ জন ভারতীয় ছাত্র ও শিক্ষককে ফিরিয়ে আনা হয়েছে। করোনায় আক্রান্ত অন্য দেশগুলির তুলনায় ভারতের পরিস্থিতি কিছুটা ভালো। কিন্তু ভারতের মতো দেশে দ্রুত করোনা ছড়ানোর আশঙ্কা আছে বলেই এই ধরনের সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। তাতে অবশ্য আতঙ্ক আরও বাড়ছে। কোনও কোনও বিশেষজ্ঞের দাবি, আগামী দুই সপ্তাহে ভারতে করোনার প্রভাব সব চেয়ে বেশি দেখা যাবে। তাই বার্তি সতর্কতা অবলম্বন করছে প্রশাসন।

জিএইচ/এসজি(পিটিআই, এএনআই)