করোনার রেকর্ড বৃদ্ধির মধ্যেই কড়াকড়ি উঠলো
৪ মে ২০২০ভারতে লকডাউনেরকড়াকড়ি কমানো হলো ঠিক সেই সময়ে, যখন সব চেয়ে বেশি লোক করোনায় আক্রান্ত হচ্ছেন। মৃতের সংখ্যাও লাফিয়ে বাড়ছে। গত ২৪ ঘণ্টায় করোনায় মারা গিয়েছেন ৮৩ জন। আক্রান্ত হয়েছেন দুই হাজার ৪৮৭ জন। এই অবস্থায় দেশের সবুজ ও কমলা তালিকাভুক্ত এলাকা খুলে দেওয়ার ফলে এই সংখ্যাটা দ্রুত বাড়তে পারে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন। সবুজ এলাকা মানে যেখানে গত ২১ দিনে করোনা হয়নি। লাল এলাকা মানে যেখানে করোনা প্রচুর হচ্ছে। এর বাইরে থাকা এলাকাগুলি হলো কমলা, অর্থাৎ, যেখানে করোনা হচ্ছে, তবে কম। অথবা কিছুদিন করোনায় নতুন করে কেউ আক্রান্ত হননি। সবুজ ও কমলা এলাকাগুলিতে প্রায় স্বাভাবিক কাজকর্ম শুরু হয়ে যাচ্ছে। বাস, ট্যাক্সি সহ যানবাহনও চলবে। তবে বিমান, রেল, মেট্রো চলবে না। কমলা এলাকাতে অল্প কিছু কড়াকড়ি থাকছে। তুলনায় অনেক বেশি কড়াকড়ি থাকছে লাল এলাকাগুলিতে। দেশের ৭৩৩টা জেলার মধ্যে ১৩০টি লাল, ৩১৯টি সবুজ ও বাকিগুলি কমলা। সরকারি অফিসও এ বার কম কর্মী নিয়ে খুলছে।
আসলে বিরোধটা দেখা দিয়েছে লোকের রুটি-রুজি বনাম করোনার মধ্যে। কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের হাতে পয়সা না থাকা বনাম রোগ নিয়ন্ত্রণের মরিয়া চেষ্টার মধ্যে। অর্থনীতির বেহাল অবস্থা বনাম মহামারির আশঙ্কার মধ্যে। তাছাড়া চল্লিশ দিন ধরে পুরো দেশ লকডাউনের মধ্যে থেকেছে। তারপর তা আর কতদিন বাড়ানো সম্ভব, সেই প্রশ্নও ছিলো। এই অবস্থায় সেই সব জাযগায় কড়াকড়ি বহাল রাখা হয়েছে, যেখানে করোনা পরিস্থিতি এখনও সংকটজনক। দিল্লিতে করোনা পরিস্থিতি এখনও সঙ্কটজনক। পুরো দিল্লি জুড়েই ছড়িয়ে রয়েছে হট স্পট। প্রতিদিনই নতুন করে করোনায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। তা সত্ত্বেও মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল বলেছেন, ''ধীরে ধীরে দিল্লিকে খুলে দেওয়া হবে। সময় এসেছে দিল্লিকে খুলে দেওয়ার। করোনাকে সঙ্গে নিয়ে চলার জন্য দিল্লি তৈরি।''
কেজরিওয়ালের এই মন্তব্যে বিভ্রান্তি ছড়িয়েছে। তার মূল কারণ, দিল্লির পরিস্থিতি। গত ২৪ ঘণ্টায় দিল্লিতে ৪২৭ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। সবমিলিয়ে চার হাজার ৫৪৯ জন আক্রান্ত হয়েছেন। মারা গিয়েছেন ৬৪ জন। দিল্লিতে চিকিৎসক, চিকিৎসাকর্মী, ডেলিভারি বয়, পাইকারি বাজারের বিক্রেতা, পুলিশ, সাধারণ মানুষ করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ও হচ্ছেন। ফলে পরিস্থিতি কোনওমতেই স্বাভাবিক হয়নি। কিন্তু কেজরিওয়ালের যুক্তি, ''কেউ করোনায় আক্রান্ত হলে তাঁর চিকিৎসার ব্যবস্থা করার মতো পরিকাঠামো সরকারের আছে। হাসপাতালগুলিও প্রস্তুত। তাই কেন্দ্রকে বলেছি, হট স্পট ছাড়া বাকি জায়গায় দোকানপাট খুলতে দিন। করোনা রোগীর সংখ্যা কিছুটা বাড়লেও আমরা তা সামলে নেব।'' তার মানে দিল্লিকে খুলে দিলে করোনার দাপট আরও বাড়বে জেনেও রাজধানীকে সচল করতে চাইছেন মুখ্যমন্ত্রী। তবে লকডাউনের ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয় কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। তারা এখনও কেজরিওয়ালের সুপারিশ মেনে দিল্লির জন্য কোনও বিশেষ নির্দেশ জারি করেনি। আর যানবাহন না চললে দিল্লি স্বাভাবিক হবে না। দিল্লিতে সরকারি বাস, মেট্রো, অটো, ট্যাক্সি চালানোর অনুমতি দেওয়া হয়নি।
করোনার প্রকোপ বেশি এমন ২০টি জায়গায় আবার কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি দল যাচ্ছে। এই এলাকাগুলির মধ্যে আছে কলকাতা, দিল্লি, আমদাবাদ, মুম্বই, থানে, ইন্দোর, ভোপালের মতো শহর। কয়েকদিন আগে পশ্চিমবঙ্গে কেন্দ্রীয় দল পাঠানো নিয়ে প্রবল বিতর্ক হয়েছিলো। এ বার বিতর্ক এড়াতে ঠিক হয়েছে, কেন্দ্রীয় দল রিপোর্ট রাজ্য সরকারকেই দেবে। কুড়িটি শহরের যে সব জায়গায় করোনা নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না, সেখানে কী করে করোনায় রাশ টানা যায়, তা নিয়েই সুপারিশ দেবে কেন্দ্রীয় দল।
দেশের বিভিন্ন রাজ্যে মদের দোকানও খুলছে। কর্ণাটক মদের দোকান খুলে দিয়েছে। অন্য রাজ্যেও মদের দোকান খোলার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। অনেক রাজ্যই হট স্পট ছাড়া বাকি এলাকায় মদের দোকান খুলতে দিচ্ছে। তবে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে মদ কিনতে হবে। অবশ্য এই সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার কথা বলা হয় ঠিকই, কার্যক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে, সবজি, ফলের পাইকারি বাজারে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা হচ্ছে না বা যাচ্ছে না। কলকাতার অনেক বাজারেও সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা যাচ্ছে না বলে অভিযোগ উঠেছে। মদের দোকানের ক্ষেত্রেও তা কতটা বজায় রাখা যাবে তা নিয়ে বিশেষজ্ঞদের সন্দেহ রয়েছে।
জিএইচ/এসজি(পিটিআই, এএনআই)