অ্যামেরিকায় তেলের দাম শূন্যের নীচে
২১ এপ্রিল ২০২০আন্তর্জাতিক কূটনীতিবিদদের অনেকেই মনে করেন, বিশ্ব রাজনীতির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিষয় এখন তেল। গত কয়েক দশকে তেলের দখল নিয়ে আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে জলঘোলা হয়েছে অনেক। হয়েছে যুদ্ধ। অ্যামেরিকায় সেই তেলের দামই সোমবার শূন্যের নীচে নেমে যায়। তবে মঙ্গলবার তা সামান্য বেড়ে হয়েছে ০ দশমিক ৫৪ ডলার প্রতি ব্যারেল। ইতিহাসে এমন বিরল ঘটনা এই প্রথম। দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধের পরে একবারই শূন্যের নীচে নেমেছিল তেলের দাম। এ দিকে, করোনা সংক্রমণে বিশ্ব জুড়ে মৃতের সংখ্যা এক লাখ ৭০ হাজার ছাড়িয়ে গিয়েছে।
করোনা ভাইরাস সংক্রমণের ফলে বিশ্ব জুড়ে যাতায়াত কার্যত বন্ধ। লকডাউনে বন্ধ কলকারাখানা। ফলে তেলেরব্যবহার কমেছে। কিন্তু তেলের উৎপাদন সম্পূর্ণ বন্ধ করা যায়নি। গত দেড় মাসে বিশ্ব জুড়ে তেলের দাম কমেছে। কিন্তু সোমবার অ্যামেরিকায় যা ঘটলো তা অভূতপূর্ব। ২১ এপ্রিল সেখানে মে মাসের তেল কিনে নেওয়ার শেষ তারিখ ছিল। কিন্তু বাস্তবে দেখা যায়, তেল কিনতে রাজি নয় সংস্থাগুলি। কারণ, তেলের বিক্রি নেই। এই পরিস্থিতিতে বিশ্বের সব চেয়ে উন্নত অপরিশোধিত তেল রপ্তানি কেন্দ্র ওয়েস্ট টেক্সাস ইন্টারমিডিয়েট বুঝতে পারে, বিক্রি করতে না পারলে অপরিশোধিত তেল উপচে পড়বে। ফলে তেল কেনার জন্য ক্রেতাদের অর্থ সাহায্যের আশ্বাস দেওয়া হয়। অর্থাৎ, তেল কেনার জন্য ক্রেতাদের অর্থ খরচ করতে হবে না, উল্টে তাঁরা টাকা আয় করবেন। যার জেরে মুহূর্তে তেলের দাম শূন্যের নীচে চলে যায়। ২০ এপ্রিল এক সময় তেলের দাম ব্যারেল প্রতি মাইনাস ৪০ ডলারেরও নীচে চলে গিয়েছিল। পরে তা মাইনাস ৩৭ ডলারে গিয়ে দাঁড়ায়। মঙ্গলবার সকালে তা বেড়ে হয়েছে ০ দশমিক ৫৪ ডলার প্রতি ব্যারেল। বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, পরিস্থিতি এমনই থাকলে মে মাসে অ্যামেরিকায় তেলের উৎপাদন বন্ধ করে দিতে হতে পারে। কারণ, অপরিশোধিত তেল রাখার আর জায়গা থাকবে না।
বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, তেলের উৎপাদন সম্পূর্ণ বন্ধ করা যায়নি। কিন্তু ক্রেতারা তা কিনতে চাইছেন না। বিক্রি নেই। ফলে তেল উপচে পড়ছে। রাখার জায়গা পাওয়া যাচ্ছে না। এই সমস্যা মেটাতেই ক্রেতাদের বলা হয়, তেল কিনলে অর্থ সাহায্য করা হবে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প জানিয়েছেন, এই পরিস্থিতি সাময়িক। তেল যাতে নষ্ট না হয় এবং যথেষ্ট জমিয়ে রাখা যায়, সে কথা ভেবেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
আন্তর্জাতিক বাজারেও তেলের দাম চোখে পড়ার মতো কমেছে। এক সময় ব্যারেল প্রতি যে তেলের দাম ১০০ ডলারেরও বেশি ছিল, কমে তা ২০ ডলারের নীচে চলে এসেছে। বিশেষজ্ঞরা অবশ্য বলছেন, এই পরিস্থিতি সাময়িক। বিভিন্ন দেশ থেকে লকডাউন উঠে গেলে এবং বিমান পরিষেবা স্বাভাবিক হলেই তেলের দাম আবার উঠতে শুরু করবে। যদিও গত কয়েক মাসে তেলের দামের এই পতন আন্তর্জাতিক অর্থনীতিতে প্রভাব ফেলবে বলেও তাঁরা আগাম সতর্ক করেছেন।
তেলের দামের এই পতন নিঃসন্দেহে উদ্বেগের বিষয়। তার চেয়েও উদ্বেগজনক অ্যামেরিকার করোনা পরিস্থিতি। কিন্তু মার্কিন প্রেসিডেন্টের অভিব্যক্তিতে তার ছিটেফোঁটাও দেখা যাচ্ছে না। সোমবারেও দেশের বিভিন্ন রাজ্যের গভর্নরদের বিরুদ্ধে তোপ দেগে বিতর্ক জারি রেখেছেন প্রেসিডেন্ট। বস্তুত, গভর্নরদের সঙ্গে ট্রাম্পের বিতর্ক অনেক দিন ধরেই চলছিল। নিউ ইয়র্ক, মেরিল্যান্ডের গভর্নররা অভিযোগ করছিলেন, যথেষ্ট টেস্ট কিট তাঁদের দেওয়া হচ্ছে না। কেন্দ্রকে ভরসা করতে না পেরে তাঁদের নিজেদেরই কিটের ব্যবস্থা করতে হচ্ছে। শুধু তাই নয়, লকডাউন তোলা নিয়েও ট্রাম্পের সঙ্গে বিতর্ক চলছে তাঁদের। এই পরিস্থিতিতে সোমবার ট্রাম্প বলেছেন, মেরিল্যান্ডের রিপাবলিকান গভর্নর বাস্তব পরিস্থিতি ঠিক বুঝে উঠতে পারছেন না। আর ইলিনয়ের গভর্নর নিজের সীমার বাইরে কথা বলছেন। শুধু ডেমোক্র্যাট নয়, রিপাবলিকান গভর্নরদের বিরুদ্ধেও এ ভাবে মুখ খোলায় দলের ভিতরেও সমালোচিত হচ্ছেন ট্রাম্প।
করোনা ঘিরে রাজনীতির পারদ চড়ছে। তবে মৃত্যু বন্ধ হচ্ছে না। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসেব অনুযায়ী মঙ্গলবার সকাল পর্যন্ত সারা বিশ্বে এক লাখ ৭০ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে সোমবার জাতি সংঘে সাধারণ সভা বসেছিল। ১৯৩ টি দেশের সম্মতিতে সেখানে একটি প্রস্তাব পাশ হয়। বলা হয়, করোনার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সমস্ত দেশ এক হয়ে লড়াই করবে। করোনার ভ্যাক্সিন আবিষ্কার হলে সব দেশ তা একই রকম ভাবে নিতে পারবে। কোনও দেশ পক্ষপাতিত্ব করতে পারবে না। শুধু তাই নয়, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার কাজের প্রশংসা করে তাদের আরও সাহায্য করার প্রস্তাবও নেওয়া হয়। প্রস্তাবে সই করেছে অ্যামেরিকাও। যদিও সোমবারও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বিরুদ্ধে অভিযোগের সুর চড়িয়েছেন ট্রাম্প। এক মাস আগে জার্মানির একটি সংস্থার কাছ থেকে করোনা ভাইরাসের ভ্যাক্সিনের পেটেন্ট কুক্ষিগত করার চেষ্টা করেছিল ট্রাম্প প্রশাসন। যদিও শেষ পর্যন্ত তা সফল হয়নি।
সূত্র জানিয়েছে, জাতি সংঘের প্রস্তাবের খসড়া তৈরি করেছিল মেক্সিকো। করোনা পরিস্থিতিতেও ড্রাগ মাফিয়াদের নিয়ে বিপর্যস্ত অ্যামেরিকার প্রতিবেশী রাষ্ট্রটি। দেশের কুখ্যাত ড্রাগ মাফিয়া এল চ্যাপো। আপাতত তিনি জেলে। রোববার তার মেয়ে সাধারণ মানুষের কাছে খাবার বিলি করেছেন বলে শোনা গিয়েছে। খাবারের বাক্সে বাবার ছবি ছাপা ছিলো। বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন স্বয়ং মেক্সিকোর প্রধানমন্ত্রী।
এসজি/জিএইচ (রয়টার্স, এপি)