করোনার দ্বিতীয় ঢেউ ভুল ধারণা
২৯ জুলাই ২০২০এক বিখ্যাত দার্শনিক বলেছিলেন, মানব সমাজ ঘটমান বর্তমানে বাস করে। এর কোনও অতীত বা ভবিষ্যৎ নেই। করোনা মহামারির কালে প্রায় তেমনই কথা বললেন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এক গুরুত্বপূর্ণ আধিকারিক। তাঁর বক্তব্য, করোনার প্রথম এবং দ্বিতীয় ঢেউ বলে যা প্রচার করা হচ্ছে, তার কোনও অর্থ নেই। করোনা ঘটমান বর্তমান। গত কয়েক মাসে একবারের জন্যও তা মিলিয়ে যায়নি। প্রকোপ কখনও বেড়েছে, কখনও কমেছে। ফলে দ্বিতীয় ঢেউ শব্দটি অর্থহীন।
গত মে-জুন মাসে জার্মানি সহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশ থেকে ধীরে ধীরে করোনার প্রকোপ কমতে শুরু করে। স্বাভাবিক জীবনযাপনও শুরু হয়। দোকানপাট খুলে দেওয়া হয়। স্কুল-কলেজও খোলার প্রস্তুতি শুরু হয়। তবে সেই সময় থেকেই দ্বিতীয় ঢেউয়ের কথা প্রকাশ্যে আসতে শুরু করে। একদল বিশেষজ্ঞ বলতে শুরু করেন, আপাতত করোনার প্রকোপ কমলেও তার দ্বিতীয় ঢেউ ফিরে আসবে ইউরোপে। নতুন করে আক্রান্ত হবেন ইটালি, স্পেন, ফ্রান্স, জার্মানি সহ গোটা ইউরোপের নাগরিক।
বিষয়টি নিয়ে একদিকে যেমন আশঙ্কা তৈরি হয়েছে, তেমনই বহু মানুষ বিষয়টিকে ততটা গুরুত্ব দেননি। গরম উপভোগ করতে অনেকেই বেড়াতে গিয়েছেন। এরই জেরে জুলাইয়ের মাঝামাঝি সময় থেকে নতুন করে করোনা সংক্রমণের সংখ্যা বাড়তে শুরু করেছে ইউরোপে। অনেকে বলছেন, এটাই ভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউ। কিন্তু বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার আধিকারিকের দাবি, একে দ্বিতীয় ঢেউ বললে ভুল হবে। কারণ, কমলেও করোনা নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়নি ইউরোপ থেকে। মানুষের বিশৃঙ্খল জীবনযাপনের জন্যই তার প্রকোপ বেড়েছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বক্তব্য, মানুষ যে ভাবে বাঁচতে ভালোবাসে, করোনার তা পছন্দ। সাধারণ মানুষ যত একসঙ্গে থাকার চেষ্টা করবেন, বেড়াতে যাবেন, আরও বেশি লোকের সঙ্গে মিশবেন, করোনারও ছড়াতে তত সুবিধা হবে। এই বছরটা সকলকে স্বাভাবিক জীবনযাপন পরিত্যাগ করতেই হবে। টিকা না বেরনো পর্যন্ত নিয়ম মেনে চলতেই হবে। কারণ, করোনা যায়নি এবং আগামী কয়েক মাসের মধ্যে চলে যাবে, এমন ভাবারও কোনও কারণ নেই।
শুধু ইউরোপ নয়, গোটা পৃথিবীতেই করোনার দ্বিতীয় ঢেউ নিয়ে বিস্তর আলোচনা চলছে। অ্যামেরিকাতেও এ নিয়ে বিস্তর বিতর্ক হচ্ছে। যদিও মার্কিন বিশেষজ্ঞরা একাধিকবার বলেছেন, অ্যামেরিকা করোনার প্রথম ঢেউয়ের ধাক্কাই কাটিয়ে উঠতে পারেনি। এখনও পর্যন্ত গোটা বিশ্বে প্রায় এক কোটি ৬৯ লাখ মানুষ করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। মৃত্যু হয়েছে ছয় লাখ ৬৩ হাজার জনের। শুধু অ্যামেরিকাতেই আক্রান্তের সংখ্যা ৪৫ লাখ। উত্তর থেকে দক্ষিণ মার্কিন বিশ্বের সর্বত্র ছড়িয়ে পড়েছে সংক্রমণ।
চীনেও দ্বিতীয় দফায় করোনার প্রকোপ শুরু হয়েছে। গত এপ্রিল থেকে ধরলে মঙ্গলবার সেখানে সব চেয়ে বেশি মানুষ নতুন করে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। ১০১ জনের মধ্যে সংক্রমণ ছড়িয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, চীনে আক্রান্তের সংখ্যা আরও বাড়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে।
ভারতের পরিস্থিতিও তথৈবচ। ১৫ লাখ মানুষ এখনও পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছেন। সম্প্রতি প্রকাশিত এক রিপোর্ট বলছে, গ্রামে এবং বস্তি এলাকায় সংক্রমণ সব চেয়ে বেশি ছড়াতে শুরু করেছে। এর অর্থ, দেশে গোষ্ঠী সংক্রমণ শুরু হয়ে গিয়েছে। আইসিএমআর এর মতো বিশেষজ্ঞ সংস্থাও জানিয়েছে, দেশে গোষ্ঠী সংক্রমণের লক্ষ্যণ স্পষ্ট।
এসজি/জিএইচ (রয়টার্স, পিটিআই)