করোনাই ঠিক করবে মমতা মুখ্যমন্ত্রী থাকবেন কি না
৫ জুলাই ২০২১দলকে বিপুলভাবে জিতিয়ে আনলেও মমতা নিজে এবার নন্দীগ্রাম থেকে জিততে পারেননি৷ হেরে গেছেন তারই একসময়ের লেফটন্যান্ট শুভেন্দু অধিকারীর কাছে। ফলে মমতা মুখ্যমন্ত্রী হলেও বিধানসভার সদস্য নন৷ নিয়মানুযায়ী, ছয় মাসের মধ্যে তাকে বিধানসভার সদস্য হতে হবে। তার জন্য ভবানীপুর কেন্দ্র থেকে পদত্যাগ করেছেন শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়। তার পুরনো কেন্দ্র ভবানীপুর থেকেই উপনির্বাচনে লড়বেন মমতা৷
কিন্তু সমস্যা অন্য জায়গায়। একাধিক রজ্যে বিধানসভা ও লোকসভার উপনির্বাচন বাকি আছে। কিন্তু দেশের করোনা পরিস্থিতির কথা মাথায় রেখে কোনো রাজ্যেই উপনির্বাচন করায়নি নির্বাচন কমিশন। জনপ্রতিনিধি আইন অনুসারে বিধানসভার কোনো আসন খালি হলে তার ছয় মাসের মধ্যে উপনির্বাচন করাতে হবে নির্বাচন কমিশনকে। অবশ্য সেই পদের মেয়াদ যদি এক বছর বা তার কম হয়, তা হলে সেই বাধ্যবাধকতা নেই। অথবা নির্বাচন কমিশন ও কেন্দ্রীয় সরকার যদি মনে করে পরিস্থিতি ভোট করানোর মতো নয়, তা হলেও উপনির্বাচন না করানো যেতে পারে৷
সম্প্রতি উত্তরাখণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী তিরথ সিং রাওয়াত পদত্যাগ করছেন। বিজেপি-র তরফ থেকে বলা হচ্ছে, রাওয়াত লোকসভার সদস্য ছিলেন। তাকে সেপ্টেম্বরের মধ্যে বিধানসভার সদস্য হতে হতো। কিন্তু নির্বাচন কমিশন এখনো উপনির্বাচন করানোর কোনো উদ্যোগ নেয়নি। তাই রাওয়াত পদত্যাগ করেছেন। বিরোধীরা অবশ্য বলছেন, উত্তরাখণ্ডে বিজেপি-র গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব এত বেশি যে, রাওয়াতকে এই কথা বলে সরিয়ে দিলো বিজেপি। কারণ, তার জয় নিয়েও না কি সন্দেহ ছিল।
কিন্তু এখানেই সিঁদুরে মেঘ দেখছে তৃণমূল। তাদের আশঙ্কা, যদি পশ্চিমবঙ্গেও নভেম্বরে উপনির্বাচন না হয়৷ মুখ্যমন্ত্রী ইতিমধ্যেই বার কয়েক উপনির্বাচন করানোর কথা বলেছেন৷
কিন্তু কলকাতা সহ পশ্চিমবঙ্গে এখনো করোনার কড়াকড়ি পুরোপুরি ওঠেনি। আগের থেকে পরিস্থিতি ভালো হলেও করোনার প্রকোপ এখনো আছে৷ গত ২৪ ঘণ্টায় এক হাজার ২৯৭ জন আক্রান্ত হয়েছেন৷ মারা গেছেন ২০ জন। তাই অনেক ক্ষেত্রেই বিধিনিষেধ বহাল আছে। উত্তরখণ্ডে তো রোববার ৭৮ জন করোনায় আক্রন্ত হয়েছেন, দুই জন মারা গেছেন৷ সেখানেও নির্বচন কমিশন এখনো উপনির্বাচনের উদ্যোগ নেয়নি৷
প্রবীণ সাংবাদিক শুভাশিস মৈত্র ডয়চে ভেলেকে বলেছেন, ‘‘নভেম্বরের মধ্যে উপনির্বাচন হবে কি না, সেই প্রশ্নটা উঠতে শুরু করেছে। রাজ্যের বিজেপি নেতারাও এনিয়ে কথা বলতে শুরু করেছেন। করোনা পরস্থিতি অনেকটা ভালো হয়ে গেলে উপনির্বাচন না করনোর কোনো প্রশ্ন নেই। তখন না করালে বিরূপ প্রতিক্রিয়া হবে৷’’
বিশেষজ্ঞদের একাংশ আগেই সাবধানবাণী শুনিয়ে রেখেছেন, ভারতে সেপ্টেম্বর-অক্টোবর নাগাদ করোনার তৃতীয় ঢেউ আসতে পারে। সেটা সত্যি হলে, তখন উপনির্বাচনের কোনো প্রশ্নই নেই। ফলে অনিশ্চয়তা একটা থেকেই যাচ্ছে। যদি উপনির্বাচন না হয়, তা হলে ছয়মাস মুখ্যমন্ত্রী থাকার পর মমতাকে পদত্যাগ করতে হবে। প্রবীণ সাংবাদিক সৌম্য বন্দ্যোপাধ্যায় ডিডাব্লিউকে জানিয়েছেন, ‘‘এস আর চৌধুরী বনাম পাঞ্জাব সরকার মামলায় সুপ্রিম কোর্ট ২০০১ সালে রায় দিয়েছে, একবার ছয় মাসের মেয়াদ শেষ হয়ে গেলে, তারপর আর না জিতে এসে মন্ত্রী বা মুখ্যমন্ত্রী হওয়া যাবে না। ফলে উপনির্বাচন সময়ে না হলে মমতাকে পদত্যাগ করে অন্য কাউকে মুখ্যমন্ত্রী করতে হবে।’’
তাই করোনার উপরই এখন নির্ভর করছে, মমতা মুখ্যমন্ত্রী থাকতে পারবেন কি না৷