কম বয়সে মেয়েদের বিয়ে দেওয়া কমছে সমাজে: সমীক্ষা
২০ মে ২০১২ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘সান দিয়েগো স্কুল অব মেডিসিন'-এর তরফে চালানো হয়েছিল একটি সমীক্ষা৷ যে সমীক্ষা জানাচ্ছে, ভারত বাংলাদেশ, পাকিস্তান আর নেপালে মেয়েদের কম বয়সে জোর করে বিয়ে দেওয়ার অস্বাস্থ্যকর প্রবণতা কমছে৷ যার ফলে সামগ্রিকভাবে মানুষের সাধারণ স্বাস্থ্যের উন্নতিতে তার প্রভাব পড়বে বলে উল্লেখ করা হয়েছে ওই সমীক্ষায়৷
বাংলাদেশ ১৯৯১ থেকে ১৯৯৪৷ সেই অতীতে প্রথমে ফেরা যাক৷ দেখা যাক পরিসংখ্যান৷ যে পরিসংখ্যান বলছে ৩৪ শতাংশ মেয়েদের বাংলাদেশে সে সময়ে বিয়ে দিয়ে দেওয়া হয়ে গিয়েছিল, যাদের গড় বয়স ছিল বড়জোর ১৪ বছর৷ এবার দেখা যাক, ২০০৫ থেকে ২০০৭ সালের পরিসংখ্যান৷ হিসেব বলছে, মাত্র ১৯ শতাংশ মেয়েকে ১৪ বছরের মধ্যে বিয়ে দেওয়া হয়েছে বাংলাদেশে এই সময়টায়৷ তার অর্থ হল, বাল্যবিবাহের উৎসাহে কিছুটা হলেও ভাটা তো পড়েছে! তবে সেই একই পরিসংখ্যান জানাচ্ছে, ১৬ থেকে ১৭ বছর বয়সী মেয়েদের বিয়ে হয়েছে সমান সমান হারে৷ অর্থাৎ, ৯১ থেকে ৯৪ তে যা ছিল, ০৫ থেকে ০৭-এ তাই রয়েছে৷
ভারত আর পাকিস্তানের ক্ষেত্রে এই ছবি একটু ভিন্ন৷ দেখা যাচ্ছে, ভারতে ১৯৯১ থেকে ১৯৯৪ সালের মধ্যে ১৪ বছরের ভিতর মেয়েদের বিয়ে দেওয়ার হার শতকরা ১০ শতাংশ নেমে গিয়েছিল৷ ২০০৫ থেকে ২০০৭ সালের মধ্যে সেটা আরও ছয় শতাংশ কমেছে৷ এই একই সময়ে পাকিস্তানে ১৪ বছরের মধ্যে মেয়েদের বিয়ে দেওয়ার হার কমেছে মাত্র তিন শতাংশ৷
বাংলাদেশ, ভারত, নেপাল আর পাকিস্তান, এশিয়ার এই চারটি দেশেই অল্প বয়সে মেয়েদের বিয়ে দিয়ে দেওযার প্রবণতা রয়েছে সামাজিক অভ্যাসের সঙ্গে সম্পর্কিত হয়ে৷ বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলে এই ধরণের বিয়ে নিত্য নৈমিত্তিক ঘটনা এই আজকের দিনেও৷ গণমাধ্যম থেকে সরকারি প্রচার, বিভিন্ন উপায়ে পূর্বের তুলনায় সচেতনা বড়লেও মানুষের আবহমানকালের সংস্কারের দাসত্ব আজও বহমান৷ প্রসঙ্গত, ভারত, বাংলাদেশ আর নেপালে মেয়েদের বিয়ের আইনস্বীকৃত ন্যুনতম বয়স হল ১৮৷ একমাত্র পাকিস্তানের ক্ষেত্রেই বিয়ের আইনস্বীকৃত বয়স ১৬ বছর৷ যে সমস্ত এনজিও এইসব দেশগুলিতে সক্রিয়, তাদের অভিজ্ঞতা এবং কেস স্টাডি জানাচ্ছে, গ্রামাঞ্চলে আইনের অনুশাসনকে আদৌ পরোয়া করা হয়না এই তিনটি দেশের কোথাওই৷
ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সান দিয়েগো স্কুল অফ মেডিসিনের এই সমীক্ষা যাঁরা পরিচালনা করেছেন, তাঁদেরই একজন অনীতা রাজ সংবাদসংস্থা রয়টার্সকে তাঁদের সমীক্ষার ফলাফল জানাতে গিয়ে বলেছেন, এই চারটি দেশে ১৯৯১ সাল থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত যাবতীয় তথ্য উপাত্ত এবং কেস স্টাডি তাঁরা ব্যবহার করেছেন এই সমীক্ষা পরিচালনা করতে৷ দক্ষিণ এশিয়ার এই চারটি দেশে কম বয়সে বিয়ে যত কম হবে, ততই জনস্বাস্থ্যের জন্য তা মঙ্গলজনক৷ কারণ অল্প বয়সে বিয়ে হলে মাতৃত্বের জন্য পুরোপুরি প্রস্তুত নয় এমন শরীরের অধিকারী একটি মেয়ের গর্ভে যে সন্তান আসে, সচরাচর সেই সন্তান অপুষ্ট আকারে জন্ম নেয়৷ কিংবা দেখা যায় পরবর্তীতে সেই সন্তানের শরীরে সহজেই রোগ বাসা বাঁধে৷ কারণ অপরিপুষ্ট মায়ের গর্ভে জন্মানো সন্তানের শরীরে প্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকে৷ সেক্ষেত্রে সামাজিক সংস্কারের বশবর্তী হয়ে কম বয়সে মেয়েদের বিয়ে দেওয়া যত কমবে, সমাজের পক্ষে তা ততই মঙ্গলজনক৷
প্রতিবেদন: সুপ্রিয় বন্দ্যোপাধ্যায়
সম্পাদনা: দেবারতি গুহ