ইন্টারনেট আইন কঠিন হলো
৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ইন্টারনেট সংক্রান্ত বিলটি নিয়ে বুধবার রাতে পার্লামেন্টে কয়েক ঘণ্টা তুমুল বিতর্ক হয় সরকার ও বিরোধী দলের সদস্যদের মধ্যে৷ পরে ৫৫০ সদস্যের মধ্যে ৩১৯ জন এই প্রস্তাবের পক্ষে মত দেন৷ পার্লামেন্টে বিরোধীদের বক্তব্য ছিল, এই আইনটি এক ধরনের ‘সেন্সরশিপ'৷ কিন্তু প্রধানমন্ত্রী রেচেপ তাইয়িপ এর্দোয়ানের ক্ষমতাসীন জাস্টিস এবং ডেভেলপমেন্ট পার্টির (একেপি) সংখ্যাগরিষ্ঠতার কারণে তাদের প্রতিরোধ ধোপে টেকেনি৷
এই আইনের ফলে কোনো ব্যক্তি কাউকে অসম্মান করলে বা ব্যঙ্গ করলে আদালতের নির্দেশ ছাড়াই ইন্টারনেট সুবিধা বা ওয়েবসাইট বন্ধ করে দেয়ার ক্ষমতা থাকছে সরকারি সংস্থা টেলিকমিউনিকেশনস কমিউনিকেশনস প্রেসিডেন্সি ‘টিআইবি'-র৷ এমনকি অবাধ নজরদারির ক্ষমতাও দেয়া হয়েছে টিআইবিকে৷
ইস্তানবুলের বিলগি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনের অধ্যাপক ইয়ামান আকদেনিজ জানান, টিআইবিকে এই ক্ষমতা দেয়া ‘অরওয়েলিয়ান', অর্থাৎ মুক্ত চিন্তা ও বাক স্বাধীনতার লঙ্ঘন৷ আকদেনিজ সংবাদ সংস্থা এএফপিকে আরো জানান, টিআইবি-র যদি মনে হয় কোনো ব্যক্তি এমন কোনো ছবি বা পোস্ট দিয়েছেন যা অন্যের জন্য অসম্মানজনক, তবে ঐ ব্যক্তি যে কোম্পানির গ্রাহক তাকে অনুরোধ করা হবে অন্তত দুই বছরের জন্য তাঁর সমস্ত সেবা বন্ধ করে দিতে
তিনি একথাও জানান যে, এই আইন বাস্তবায়নের ফলে ইউরোপীয় ইউনিয়নের ইন্টারনেট নীতির শর্ত থেকে বেরিয়ে আসবে তুরস্ক, আর চীনের দিকে একধাপ এগিয়ে যাবে৷ কেননা চীনেও একই ধরনের ইন্টারনেট নীতি বহাল আছে৷
তুরস্কের বিরোধী দলের নেতা হাসান ওরেন এর্দোয়ানকে হিটলারের সঙ্গে তুলনা করে বলেছেন, এর্দোয়ান যখন ক্ষমতায় এসেছিলেন, তখন বলেছিলেন তুরস্কে গণতন্ত্রের বিস্তার ঘটাবেন, কিন্তু তার বদলে তিনি দেশে ফ্যাসিবাদ চালু করছেন৷ তাঁর মনে রাখা উচিত হিটলার যখন ক্ষমতা পেয়েছিলেন, তখন তিনি একই পদ্ধতি প্রয়োগ করেছিলেন৷
তবে ২০০৭ সাল থেকেই তুরস্কে ইন্টারনেট ব্যবহারের ক্ষেত্রে হস্তক্ষেপ শুরু হয়৷ ব্যক্তিগত নীতির লঙ্ঘণ করায় তখন ব্লগিং টুল ওয়ার্ডপ্রেস এবং ভিডিও শেয়ারিং সার্ভিসেস ডেইলিমোশন এবং ভিমিও আদালতের নির্দেশে সাময়িকভাবে বন্ধ করা হয়েছিল৷
ইউরোপের অর্গানাইজেশন ফর সিকিউরিটি অ্যান্ড করপোরেশন বা ওএসসিই জানিয়েছে, টিআইবিকে এই নতুন ক্ষমতা দেয়ার অর্থ কোনো রকম আইনগত বাধ্যবাধ্যকতা ছাড়াই ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের তথ্য সংগ্রহ করতে সমর্থ হবে তারা৷ যেখানে ব্যবহারকারীরা কেউই জানতে পারবেন না, কখন কিভাবে তাঁদের তথ্য সরকারের হাতে গেল৷
সরকারের পক্ষ থেকে অবশ্য বলা হয়েছে, এটা কোনো ইন্টারনেট সেন্সরশিপ নয়৷ অন্য অনেক দেশের তুলনায় তাদের দেশে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা আছে এবং তারা মুক্ত চিন্তায় বিশ্বাসী৷
তবে ইন্টারনেট বিষয়ক এই নতুন আইনের ফলে তুরস্কে মত প্রকাশ ও বাক স্বাধীনতা সীমিত হয়ে পড়বে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা৷ সেই সঙ্গে সরকারের পক্ষ থেকে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা আরো বেড়ে যাবে বলেই আশঙ্কা তাঁদের৷
এপিবি/ডিজি (এএফপি, ডিপিএ, রয়টার্স)