1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

কট্টর অ্যামেরিকা বিরোধী হিসেবেই নাম কিনেছিলেন কাসিম

৩ জানুয়ারি ২০২০

হত দরিদ্র পরিবার থেকে তাঁর উত্থান৷ এই মুহূর্তে তিনিই ছিলেন ইরানের সব চেয়ে প্রভাবশালী ব্যক্তি৷ তাঁর হত্যা মধ্য প্রাচ্যের রাজনীতিতে বড় প্রভাব ফেলবে৷

https://p.dw.com/p/3VgHO
ছবি: Kalasnshahr

মঞ্চ তৈরি ছিল৷ অপেক্ষা ছিল বারুদে আগুন ধরার৷ ইরানের সেনা বাহিনীর অন্যতম জেনারেল এবং কুদস ফোর্সের প্রধান কাসিম সোলেইমানের মৃত্যু সংবাদ পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই জ্বলে উঠেছে ইরান৷ দিকে দিকে শুরু হয়েছে অ্যামেরিকা বিরোধী বিক্ষোভ৷ শুক্রবার মার্কিন বিমান হানায় নিহত হয়েছেন কাসিম৷

কে ছিলেন এই কাসিম? ইরান বিশেষজ্ঞদের কথায়, ধারে এবং ভারে তিনিই ছিলেন ইরানের সব চেয়ে প্রভাবশালী ব্যক্তি৷ সুপ্রিম নেতার পরেই যাঁর স্থান৷ দীর্ঘ দিন ধরে সমগ্র গাল্ফ অঞ্চলে ইরানের প্রভাব এবং প্রতিপত্তি তৈরির মূল কারিগর ছিলেন এই কাসিম৷ সিরিয়ায় ইসলামিক স্টেটের সঙ্গে যুদ্ধ থেকে শুরু করে লেবানন এবং ইরাকে সরকার বিরোধী শক্তিকে সামরিক এবং অর্থ সাহায্য-সব কিছুর পিছনেই ছিলেন কাসিম সোলেইমানি৷ এবং একই সঙ্গে সমগ্র অঞ্চলে অ্যামেরিকা বিরোধী হিসেবে তাঁর কণ্ঠস্বর ছিল সব চেয়ে জোরালো৷

উত্থান অবশ্য এক দিনে হয়নি৷ ৬২ বছরের সুলেইমানির জন্ম হয়েছিল ১৯৫৭ সালে এক গরিব কৃষক পরিবারে৷ আত্মজীবনীতে তিনি লিখেছেন, মাত্র ১৩ বছর বয়সে পরিবারের ঋণ শোধ করার জন্য তৎকালীন রাজ পরিবারের কাজে ঢুকে পড়েছিলেন৷ দিন আনি দিন খাই পরিস্থিতির মধ্যে কাটিয়েছেন বহু বছর৷ ১৯৭৯ সালে ইরানে রাজ পরিবারের পতন হয়৷ ক্ষমতায় আসেন আয়াতোল্লা আলী খোমেনি৷ খোমেনির বিপ্লবী সেনায় যোগ দেন কাসিম৷ দুই বছরের মধ্যে ইরাকের সঙ্গে যুদ্ধ হয় ইরানের৷ সম্মুখ সমরে নিজের যোগ্যতা প্রমাণ করেন কাসিম৷ এবং রাতারাতি একটি ব্রিগেডের দায়িত্ব পান৷ সেই শুরু তাঁর উত্থান৷ ইরাকে ঢুকে যুদ্ধ করতে গিয়ে তাঁর সেনা বাহিনীর বিপুল ক্ষয়ক্ষতি হয়েছিল বলে কথিত আছে৷ তিনি নিজেও আহত হয়েছিলেন৷ কিন্তু কখনও যুদ্ধক্ষেত্র ছেড়ে পালিয়ে আসেননি৷ বলা হয়, সেই সময়েই ইরাকের সরকার বিরোধী জঙ্গি গোষ্ঠীগুলির সঙ্গে যোগাযোগ শুরু কাসিমের৷ পরবর্তী কালে যা গোটা গাল্ফ অঞ্চলের কূটনীতি বদলে দেবে৷

২০০৩ সালে ইরাক যুদ্ধের সময় সাদ্দাম বিরোধী জঙ্গি গোষ্ঠীগুলিকেও মদত দিয়েছিলেন কাসিম৷ সরকারের পতনের পর এক দিকে যখন অ্যামেরিকা সেখানে নতুন সরকার গঠনের প্রস্তুতি নিচ্ছে, তখন গোটা দেশে ইরানের প্রভাব তৈরির মূল কারিগর ছিলেন কাসিম৷ এবং সফল ভাবে তা করতেও পেরেছিলেন৷ এতটাই যে, ইরাকের ভূখণ্ডেও মার্কিন ঘাটিতে হামলা হলে অ্যামেরিকা ইরানের বিরুদ্ধে ফুঁসে ওঠে৷ গত সপ্তাহে তেমনই এক ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে ইরানের সঙ্গে প্রক্সি যুদ্ধ শুরু হয়েছিল অ্যামেরিকার৷ যার জেরে নিহত হলেন কাসিম৷

বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, মধ্য প্রাচ্যে আজ ইরানের যে দাপট, তা একা হাতে তৈরি করেছেন কাসিম৷ ২০০৭-০৮ সালে সরাসরি মার্কিন প্রতিরক্ষা দফতরে চিঠি লিখে তিনি বলেছিলেন, 'ভুলে যাবেন না, এই ভূখণ্ডে এখনও কাসিম সুলেইমানি আছেন৷ তিনি শুধু ইরান নয়, ইরাক, লেবানন, ইরাক এবং সিরিয়ার পররাষ্ট্র নীতিও দেখভাল করেন৷ গাজা, প্যালেস্তাইন পর্যন্ত তাঁর যাতায়াত আছে৷' ২০০৮ সালে অ্যামেরিকা কাসিমকে 'সব চেয়ে বড় শয়তান' বলে চিহ্নিত করে৷

কাসিম সুলেইমানিকে হত্যা করতে পারা অ্যামেরিকার সাময়িক জয় তো বটেই৷ বহু দিন ধরেই তিনি মার্কিন লক্ষ্য ছিলেন৷ কিন্তু তাঁর মৃত্যু মধ্য প্রাচ্যে অ্যামেরিকার প্রভাব বাড়াতে পারবে কি? বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, অদূর ভবিষ্যতে কী হবে বলা মুশকিল৷ তবে সুলেইমানির হত্যা সহজে ভুলবে না ইরান এবং পার্শ্ববর্তী রাষ্ট্রগুলির ইরান প্রভাবিত গোষ্ঠীগুলি৷ অ্যামেরিকার বিরুদ্ধে এর বদলা তারা নেবেই৷ যা আর প্রক্সি যুদ্ধ নয়, বড় সড় যুদ্ধের সম্ভাবনা তৈরি করবে৷ আন্তর্জাতিক কূটনীতি তা কী ভাবে থামাতে পারে, সেটাই এখন দেখার৷

এসজি/কেএম (দ্য গার্ডিয়ান, রয়টার্স, আল জাজিরা)