ঐক্যফ্রন্ট কেন নির্বাচনের তফসিল পেছাতে মরিয়া?
৬ নভেম্বর ২০১৮ঐক্যফ্রন্টের এই সমাবেশ থেকে সরকারের বিরুদ্ধে কঠোর আন্দোলনের হুমকিও এসেছে৷ জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের মুখপাত্র এবং বিএনপি মহাসচিব আরো বলেন, ‘‘আগামীকাল
(৭ নভেম্বর) সংলাপ হবে৷ আমরা শান্তি চাই৷ কিন্তু সংলাপ নিয়ে কোনো নাটক করলে হবে না৷''
আর বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, ‘‘জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের ৭ দফা দাবি পূরণ না হলে বাংলাদেশেকোনো নির্বাচন হবে না৷ আমরা দাবি আদায় করবো৷''
ঐক্যফ্রন্টের আহ্বায়ক ড. কামাল হোসেন সভাপতির বক্তব্যে বলেন, ‘‘দেশের মালিক কোনো মহারানি-মহারাজা নন৷ এই দেশের মালিক জনগণ৷ জনগণের দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার জন্য আপসহীনভাবে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন চালিয়ে যাবো৷''
তিনি বলেন, ‘‘সরকারের কথার এক পয়সার দামও নেই৷ সেটা গত ৫ বছরে প্রমাণিত হয়েছে৷ সংবিধান ষোল আনা উপেক্ষা করা হয়েছে৷''
ড. কামাল হোসেন বলেন, ‘‘আমরা দেশের মালিক হিসেবে ঐক্যবদ্ধ থাকবো৷ ঐক্যবদ্ধ হয়ে সিদ্ধান্ত নেবো৷ সুষ্ঠু নির্বাচন হতে হবে৷ ভোটকেন্দ্রে পাহারা দিতে হবে৷''
ঐক্যফ্রন্টের অন্যতম নেতা ও নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না বলেছেন, আগামীকাল (৭ নভেম্বর) যে সংলাপ হবে, সে সংলাপে শুধু মুখে নয়, লিখিত অঙ্গীকার করতে হবে প্রধানমন্ত্রীকে৷
কাদের সিদ্দিকী ঐক্যফ্রন্টে যেগ দেয়ার পর মঙ্গলবারই প্রথম সমাবেশে বক্তব্য দেন৷ তিনি বলেন,‘‘বিএনপির বিরুদ্ধে অভিযোগ তারা রাজাকারের গাড়িতে বাংলাদেশের পতাকা তুলে দিয়েছে৷ এই অভিযোগ সত্য নয়৷ আওয়ামী লীগই প্রথম রাজাকার নুরুর গাড়িতে পতাকা তুলে দিয়েছে৷ রাজাকার মহিউদ্দিনের গাড়িতে পতাকা তুলে দিয়েছে আওয়ামী লীগ৷ আশিকুর ররহমানের গাড়িতেও আওয়ামী লীগ পতাকা তুলে দিয়েছে৷''
জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতাদের উদ্দেশে কাদের সিদ্দিকী বলেন, ‘‘আমি বিএনপিতে যোগ দেইনি৷ ড. কামাল হোসেনের ঐক্যফ্রন্টে যোগ দিয়েছি৷ জিততে হলে জয় আপনাদের হাতে৷ হারতে চাইলেও তা আপনাদের হাতে৷ শেখ হাসিনা কিছু করতে পারবেন না৷ নির্বাচন পর্যন্ত বিএনপিকে ভুলে হিমাদ্রির মতো সোজা হয়ে দাঁড়ান৷''
ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গে সরকার, তথা আওয়ামী লীগের প্রথম সংলাপ হয় গত বৃহস্পতিবার৷ ওই সংলাপের পর একটি সিদ্ধান্তে আসার জন্য ছোট আকারে আরেকটি সংলাপের কথা বলা হয়েছিল৷ সেই সংলাপ হবে বুধবার ( ৭ নভেম্বর)৷ জানাগেছে, সংবিধানের মধ্যে থেকেই কিভাবে নির্দলীয়, নিরপেক্ষ সরকার গঠন করা যায়, তার একটি ফর্মূলা বের করেছে ঐক্যফ্রন্ট৷ সেটাই বুধবার প্রধানমন্ত্রীর কাছে তারা তুলে ধরবে৷ আর তারা মনে করে, এই সরকারের মেয়াদ শেষ হওয়ার পরের তিন মাসে নির্বাচন হলেই ওই ফর্মূলা কাজে আসবে৷ এ কারণে তারা নির্বাচন কমিশনে চিঠি দেয়ার পরও সোমবার কমিশনের সঙ্গে দেখা করে সংলাপ শেষ না হওয়ার আগে নির্বাচনের তফসিল ঘোষনা না করার দাবি জানিয়েছে৷ মঙ্গলবারের সমাবেশেও তাদের এই দাবিটিই মূখ্য হয়ে উঠেছে বিভিন্ন বক্তার মুখে৷ কিন্তু প্রধান নির্বাচন কমিশনার মঙ্গলবারও বলেছেন, সব দল এক না হলে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা পিছিয়ে দেয়া সম্ভব নয়৷ নির্ধারিত দিনেই ( ৮ নভেম্বর) তফসিল ঘোষণা করা হবে৷ এদিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বৃহস্পতিবার সকালে ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গে সংলাপ শেষ করে পরে ওইদিনই সংবাদ সম্মেলন করবেন৷ সেখানে তিনি কী বলেন সবাই এখন সেটাই দেখার অপেক্ষায়৷
বর্তমান সরকার দায়িত্ব নেয় ২০১৪ সালের ১২ জানুয়ারি৷ আর সংসদ সদস্যরা শপথ নেন ৯ জানুয়ারি৷ ২৯ জানুয়ারি সংসদের অখিবেশন বসে৷ বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট আহমেদ আজম খান ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘নির্বাচনের তফসিল না পেছানো হলে নানা জটিলতার সৃষ্টি হবে৷ আমরা চাই এই সরকারের মেয়াদ শেষে নির্বাচন হোক৷ সংসদ রেখে এবং নির্বাচিত সরকার রেখে নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্ভব নয়৷ সরকারের মেয়াদের পরবর্তী তিন মাসে যদি নির্বাচন হয় তাহলে সবাই হবে অনির্বাচিত৷ তখন সংবিধানের মধ্যে থেকেই নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকার প্রতিষ্ঠা সম্ভব৷ সেই সরকারে সব দল থেকেই প্রতিনিধি থাকতে পারবেন৷ এসব কারণেই আমরা নির্বাচনের তফসিল এখন ঘোষনা না করার দাবি করছি৷''
তিনি আরো বলেন, ‘‘আমরা মনে করি, দু-একটি সংলাপের মাধ্যমে সমস্যার সমাধান হবে না৷ আরো আলেচনা প্রয়োজন হবে৷ তাই সংলাপের মাধ্যমে একটি সমঝোতামূলক ফল আসার আগ পর্যন্ত তফসিল ঘোষণা করা হলে তা কোনো শুভ ফল বয়ে আনবে না৷''
আর ঐক্যফ্রন্টের অন্যতম নেতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আমাদের তো নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে সময় দিতে হবে৷ আমরা এতদিন কোনো মিছিল মিটিং করতে পারিনি৷ আমাদের কথা তো জনগণের কাছে পৌঁছানোর সুযোগ দিতে হবে৷ তাই আমরা তফসিল পেছানোর দাবি করছি৷ আর জানুয়ারি পর্যন্ত তো সময় আছে৷ তিন সপ্তাহ আগে তফসিল ঘোষণা করলেই হবে৷''
তবে আওয়ামী লীগ আগামী ৯ নভেম্বর শুক্রবার থেকে মনোনয়নপ্রত্যাশীর মধ্যে ফরম বিরতণ শুরু করবে৷ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এ তথ্য জানিয়েছেন মঙ্গলবার সন্ধ্যায়৷ কথা বলে জানা গেছে, আওয়ামী লীগ তার সরকারের মেয়াদের মধ্যেই নির্বাচন করবে৷ মেয়াদের পরবর্তী তিন মাসে নির্বাচনের কোনো পরিকল্পনা তাদের নেই৷ তারা সেভাবেই প্রস্তুতি নিয়েছে৷ তারা কোনো ঝুঁকির মধ্যে যেতে চায় না৷
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মঙ্গলবার মন্ত্রিসভার বৈঠকে তাঁর চার জন টেকনোক্রেট মন্ত্রীকে পদত্যাগ করতে বলেছেন৷ তাঁরা পদত্যাগ শুরুও করেছেন৷ তাঁরা হলেন ধর্মমন্ত্রী অধ্যক্ষ মতিউর রহমান, প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রী নুরুল ইসলাম বিএসসি, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক মন্ত্রী ইয়াফেস ওসমান এবং ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তফা জব্বার৷ জানা গেছে, যদি বিরোধীরা রাজি হন, তাহলে তাদের মধ্য থেকে চারজন মন্ত্রী নিতে এই ব্যবস্থা করা হয়েছে৷ কিন্তু সরকারে আর কোনো পরিবর্তন আনার চিন্তা নেই৷