এবার এনপিআর বিতর্ক
২৪ ডিসেম্বর ২০১৯Main Story- ভারত সরকারের কর্মকাণ্ডে বিতর্ক পিছু ছাড়ছে না৷ জাতীয় নাগরিকপঞ্জি ও নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন নিয়ে গোটা দেশে যখন ধুন্ধুমার, তখন নতুন করে জাতীয় জনসংখ্যা পঞ্জি বা ন্যাশনাল পপুলেশন রেজিস্টারে ছাড়পত্র দিল সরকার৷ যা ২০২১-এর নির্ধারিত জনগণনার প্রাথমিক ধাপ৷ এজন্য বিপুল অঙ্কের অর্থ বরাদ্দে অনুমোদন দিয়েছে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা৷ যা নিয়ে নতুন করে বিরোধ দেখা দিয়েছে৷ সাম্প্রতিক বিক্ষোভ, আন্দোলনের জেরে আগেই এনপিআর তৈরির কাজ বন্ধ করে দিয়েছে পশ্চিমবঙ্গ, কেরলের রাজ্য সরকার৷ অনেকের আশঙ্কা, এনপিআর করে এনআরসি-র পথ সুগম করা হচ্ছে নাতো!
যদিও এনপিআর কোনও নতুন বিষয় নয়৷ জাতীয় জনসংখ্যা পঞ্জি হল দেশে বসবাসকারীদের সম্পূর্ণ তালিকা৷ যা দেশের হাতে থাকেই৷ আপডেট করতে হয়৷ নিয়ম অনুযায়ী, জনগণনা কমিশনের অধীনে দেশে ১০ বছর অন্তর আদমশুমারি বা জনগণনা হয়৷ এই কাজে কমিশন নিযুক্ত প্রতিনিধিরা প্রত্যেক বাড়িতে গিয়ে নাগরিকদের তথ্য সংগ্রহ করেন৷ এজন্য কোনও নথিপত্রের প্রয়োজন হয় না৷ নাগরিকদের মৌখিক তথ্যের ভিত্তিতেই জাতীয় জনসংখ্যা পঞ্জি আপডেট হয়৷ জনগণনার আগে জাতীয় জনসংখ্যাপঞ্জি আপডেটের লক্ষ্যে তথ্য সংগ্রহ করাই রীতি৷ অতীতেও ২০১১ সালের জনগণনার আগে ২০১০ সালে এনপিআরের তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছিল৷ আগামী ২০২১ সালে আবার জনগণনা হবে৷ যথারীতি তার আগে ২০২০ সালে এনপিআর তৈরি হবে৷ আগামী ১ এপ্রিল থেকে ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত উত্তর-পূর্বের রাজ্য অসম ছাড়া গোটা দেশের সবকটি রাজ্যে এনপিআর হবে৷ এতে ১৪টি আবশ্যিক প্রশ্ন জানতে চাওয়া হবে৷ পিতামাতার জন্মস্থান জানতে চাওয়া হবে৷ কোনো ব্যক্তি কোনো নির্দিষ্ট জায়গায় ছ'মাস ধরে বসবাস করলে বা কোনো এলাকায় পরবর্তী ছ'মাস ধরে বসবাসের পরিকল্পনার কথা জানালে, তাঁকে সেই অঞ্চলের বাসিন্দা হিসেবে ধরে নেওয়া হবে৷
২০১২ সালের জনগণনার জন্য মোট ৮,৭৫৪.২৩কোটি টাকা ব্যয় ধার্য করেছে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা৷ তার আগে এনপিআর আপডেট করতে বরাদ্দ হয়েছে ৩,৯৪১.৩৫ কোটি টাকা৷ রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন, এনআরসি এবং নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনের বিরোধিতার আবহে নতুন করে অশান্তি ডেকে আনতে পারে এনপিআর৷ তাঁরা প্রশ্ন তুলছেন, দেশের অর্থনৈতিক দুরবস্থার মধ্যে বিপুল অর্থ বরাদ্দের ঝুঁকি সত্যিই কতটা জরুরি ছিল?
মোদী সরকার এনপিআর এবং এনআরসি-কে মিলিয়ে দিতে চাইছে কিনা তা নিয়ে সংশয়ে রয়েছেন স্বরাষ্ট্র বিষয়ক সংসদীয় কমিটির সদস্য পশ্চিমবঙ্গের কংগ্রেস নেতা প্রদীপ ভট্টাচার্য নিজেই৷ ডয়চে ভেলেকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন, ‘‘এনপিআর নতুন কিছু নয়৷ সাধারণ বিষয়৷ এখন দেখার, কী পদ্ধতিতে এনপিআর করা হবে৷ নাগরিকপঞ্জির প্রথম ধাপ হিসেবে এনপিআর-কে কাজে লাগানো হবে কিনা৷ এই সরকারের মাথায় যাঁরা রয়েছেন, তাঁরা জানেন না ঠিক কী চাইছেন৷ আসলে দেশে মাথামোটা সরকার চলছে৷''
এমনিতেই দেশজুড়ে ব্যাপক গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়েছে যে, এনআরসি করার আগে এনপিআর করে জনগণের তথ্য সংগ্রহ করতে চাইছে কেন্দ্রীয় সরকার৷ এবারই প্রথম এনপিআরে বায়োমেট্রিক তথ্য নেবে সরকার৷ যা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিল নানা মহল৷ তবে, কেন্দ্রীয় তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী প্রকাশ জাওড়েকর স্পষ্ট করেছেন, এনপিআরে বায়োমেট্রিক নেওয়া হবে না৷ কোনো নথি বা পরিচয়পত্র দেখতে চাওয়াও হবে না৷ বিরোধী দলগুলির দাবি, জনগণের মনে সংশয় তৈরি হয়েছে৷ এনপিআর ও এনআরসির সম্পর্ক স্পষ্ট করা হোক৷