1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

এক মাসের মধ্যে ১ জুলাই-১৫ আগস্টের জাতিসংঘ প্রতিবেদন

৩০ অক্টোবর ২০২৪

মানবাধিকার প্রতিষ্ঠায় বাংলাদেশকে জাতিসংঘ সব ধরনের সহায়তা দেবে বলে জনিয়েছেন জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার ফলকার টুর্ক৷

https://p.dw.com/p/4mPIG
ফলকার টুর্ক দুই দিনের সফরে মঙ্গলবার ঢাকা আসেন৷ ঢাকায় দুই দিনে তিনি আইন উপদেষ্টা, পররাষ্ট্র উপদেষ্টা, স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টাসহ বেশ কয়েকজন উপদেষ্টা, প্রধান বিচারপতি ও মানবাধিকার সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন৷ তিনি প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গেও দেখা করেন বুধবার বিকালে৷
প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাত করেছেন জাতিসংঘের মানবাধিকার প্রধান ফলকার টুর্কছবি: Bangladesh CA press team

বুধবার তার সঙ্গে এক বৈঠক শেষে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন বলেন, ‘‘জুলাই ১ থেকে ১৫ আগস্ট পর্যন্ত বাংলাদেশে যেসব মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটেছে, সেটির স্বাধীন ও নিরপেক্ষ তদন্ত করার দায়িত্বে দেয়া হয়েছে জাতিসংঘ মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনের অফিসকে৷ তারা এক মাস পরে প্রতিবেদন দেবে বলে জানিয়েছে৷''

ফলকার টুর্ক দুই দিনের সফরে মঙ্গলবার ঢাকা আসেন৷ ঢাকায় দুই দিনে তিনি আইন উপদেষ্টা, পররাষ্ট্র উপদেষ্টা, স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টাসহ বেশ কয়েকজন উপদেষ্টা, প্রধান বিচারপতি ও মানবাধিকার সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন৷ তিনি প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গেও দেখা করেন বুধবার বিকালে৷ 

‘তারা আইন সংস্কারের কথাও বলছে’

কূটনৈতিক সূত্রগুলো জানাচ্ছে, তার এই সফরের প্রধানত চারটি উদ্দেশ্য- ১. মানবাধিকার প্রতিষ্ঠায় সহায়তা ২. জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনের একটি অফিস ঢাকায় খোলা ৩. সংস্কার কাজে সহায়তা করা এবং ৪. জুলাই-আগস্ট গণহত্যার তদন্ত সহায়তা ও তার বিচার পর্যক্ষেণ৷

মঙ্গলবার তিনি বৈঠক করেন আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুলের সঙ্গে৷ বৈঠকের পর ফলকার টুর্ক বলেন, ‘‘জুলাই গণহত্যার বিষয়ে ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং কমিটি কাজ করছে৷ আমরা বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করছি৷ আমাদের হেড অফিস পুরো বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করছে৷''

‘‘আইন উপদেষ্টার সঙ্গে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা এবং মানবাধিকার ইস্যু নিয়ে কথা বলেছি৷ এই দুটি বিষয় একে অপরের সঙ্গে সম্পৃক্ত'' বলেন তিনি৷

জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার বলেন, ‘‘বর্তমান সরকার বিভিন্ন ক্ষেত্রে যে সংস্কারের উদ্যোগ নিয়েছে, সেক্ষেত্রে মানবাধিকার যেন নিশ্চিত করা হয়- সেটা বলেছি৷''

বৈঠকে গণহত্যার বিচারে মৃত্যুদণ্ড বাতিলে ফলকার টুর্কের দেয়া প্রস্তাবের বিষয়ে আইন উপদেষ্টা মঙ্গলবার সাংবাদিকদের বলেন, ‘‘এটা বর্তমান বাস্তবতায় সম্ভব না৷ কারণ, আমাদের পেনাল সিস্টেম ও শত বছরের জাস্টিস সিস্টেমে মৃত্যুদণ্ডের বিধান রয়েছে৷ যে ফ্যাসিস্টদের হাতে হাজার হাজার তরুণ নিহত হয়েছে, তাদের হত্যার বিচারকে সামনে রেখে হঠাৎ করে মৃত্যুদণ্ডের বিধান বাতিল করার প্রশ্নই আসে না৷''

বুধবার পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেনের সঙ্গে বৈঠকের পরও ফলকার টুর্ক সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন৷ বৈঠকের পর সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ফলকার টুর্ক বলেন, ‘‘বৈঠকে বেশ কিছু বিষয়ে আলোচনা হয়েছে৷ বাংলাদেশের মানবাধিকারবিষয়ক নানা চ্যালেঞ্জ নিয়ে আলোচনা হয়ছে৷ পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে বাংলাদেশকে সহায়তা করবে মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশন৷'' 

‘আমাদের আরো সতর্ক থাকতে হবে’

পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন বলেন, ‘‘জুলাই ১ থেকে ১৫ আগস্ট পর্যন্ত বাংলাদেশে যেসব মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটেছে, সেটির স্বাধীন ও নিরপেক্ষ তদন্ত করার দায়িত্বে দেয়া হয়েছে জাতিসংঘ মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনের অফিসকে৷ তারা এক মাস পরে প্রতিবেদন দেবে বলে জানিয়েছে৷''

বাংলাদেশে জাতিসংঘ মানবাধিকার হাইকমিশনের অফিস খোলার আগ্রহ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘‘এটি নিয়ে আলোচনা চলছে, অথবা এটি পরীক্ষা করে দেখা হচ্ছে৷ এখন পর্যন্ত বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি৷ আমরা পরীক্ষা করে দেখছি৷''

জাতিসংঘ লিখিত প্রস্তাব দিয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘‘লিখিতভাবে কোনো প্রস্তাব দেয়নি৷ তবে এটি নিয়ে কথা হয়েছে৷''

মানবাধিকার লঙ্ঘনের তদন্ত এবং বাংলাদেশে জাতিসংঘ মানবাধিকার হাইকমিশনের অফিস খোলার মধ্যে সম্পর্ক আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘‘আমি এ দুটোর মধ্যে কোনো সম্পর্ক দেখছি না৷ আমরা তাদের নির্দিষ্ট একটি কাজ করার জন্য আমন্ত্রণ জানিয়েছি৷ সার্বিকভাবে মানবাধিকার নিয়ে একটি সমস্যা ছিল এবং এগুলোর সমাধান চাই৷ বিশেষ করে বর্তমান সরকার যে কাজ করছে, সেটির অন্যতম লক্ষ্য হচ্ছে মানবাধিকার যেন লঙ্ঘিত না হয়৷''

বিশ্লেষকরা যা বলছেন

মানবাবিধকার কর্মী এবং গুম বিষয়ক তদন্ত কমিশনের সদস্য নূর খান মনে করেন, বাংলাদেশে মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিচার, মানবাধিকার রক্ষায় টুর্কের এই সময়ে ঢাকা সফর খুবই গুরুত্বপূর্ণ৷ ঢাকায় মানবাধিকার কমিশনের অফিস হলে এখানকার মানবাধিকারের ওপর নজর আরো বাড়বে৷ তিনি বলেন, ‘‘জুলাই আগস্ট গণহত্যা ছাড়াও গত ১৫ বছর এখানে মানবাবিধকারের ব্যপক লঙ্ঘন হয়েছে৷ এটা নিয়ে কথা হলেও বাস্তবে তেমন কোনো কাজ হয়নি৷ পরিবর্তিত প্রেক্ষাপটে এখন সময় এসেছে মানবাধিকার সুরক্ষায় কাজ করার৷''

তিনি বলেন, ‘‘এই সফরের মধ্য দিয়ে জাতিসংঘ মানববাধিকারের ব্যাপারে যেমন একটা বার্তা দিচ্ছে৷ তেমনি আমরাও তাদের তথ্য দিচ্ছি৷'' 

‘টুর্কের এই সময়ে ঢাকা সফর খুবই গুরুত্বপূর্ণ’

‘‘এখানে মানবাধিকার কমিশনের অফিস হলে তা মানবাধিকার রক্ষায় ভালো কাজে দেবে বলে আমি মনে করি৷ এখানে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটলে জাতিসংঘ তখন সরাসরি সেটা পর্যবেক্ষণ এবং ব্যবস্থা নিতে পারবে৷ এখন যা হচ্ছে, কোনো ঘটনা ঘটলে অ্যাডভোকেসি করতে হতো, তাদের জানাতে হতো, এটা সময়সাপেক্ষ৷

সাবেক রাষ্ট্রদূত মেজর জেনারেল (অব.) শহীদুল হক বলেন, ‘‘জাতিসংঘ বাংলাদেশে শুরু হওয়া গণহত্যার বিচার পর্যবেক্ষণ করছে৷ এর আগে যুদ্ধাপরাধের বিচারের সময় ট্রাইব্যুনাল নিয়ে অনেক সমালোচনা ছিল, সেই জায়গাগুলো তারা দেখছে৷ তারা আইন সংস্কারের কথাও বলছে৷ আইন উপদেষ্টাকে টুর্ক মৃত্যুদণ্ড বাতিলের কথা বলেছেন৷ তিনি বলেন,‘‘ জুলাই আগস্ট গণহত্যার তদন্তে তারা সাহায়তা করছে৷ এর বিচারে মানবাধিকারের দিকগুলোও দেখছে৷ সেটা সফল হলে আমরা সমালোচনার মুখে পড়বো না৷ এটা ইতিহাসের জন্যও ভালো'' তিনি মনে করেন, ‘‘গণঅভ্যুত্থানের সময় হামলা, পুলিশ হত্যা এই বিষয়গুলো থেকে ঢালাও দায়মুক্তি দিলে মানবাধিকারের প্রশ্ন উঠতে পারে৷ তাই তদন্ত করে কেস টু কেস সিদ্ধান্ত নেয়া ঠিক হবে৷''

সাবেক রাষ্ট্রদূত মো. হুমায়ূন কবির বলেন, ‘‘বাংলাদেশে গণঅভ্যুত্থানের সময়ই বড় মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটেছ৷ তারা যেহেতু তদন্তে সহায়তা করছে, একই সঙ্গে বিচারকাজ পর্যবেক্ষণ করবে৷ ফলে এখানে স্বচ্ছতা ও দায়বদ্ধতা নিশ্চিত হওয়ার আশা করা যায়৷ তারা তথ্যানুসন্ধানে যে সহায়তা করছে, তাতে দায়বদ্ধতা নিশ্চিত করা আমাদের জন্য সহজ হবে৷''

মানবাধিকার কমিশনের ঢাকায় অফিস স্থাপন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘‘অফিস হলে জাতিসংঘ বাংলাদেশে মানবাধিকারের ব্যাপারে ইকিবাচক ভূমিকা রাখতে পারবে৷ তবে আমাদের আরো সতর্ক থাকতে হবে৷ এটা হলে নাগরিকদের ভালো হবে, তবে অনেকে তো এখানে অফিস হোক তা চায় না৷''

পররাষ্ট্র উপেদেষ্টা তৌহিদ হোসেন বলেছেন, ‘‘বাংলাদেশে জাতিসংঘ মানবাধিকার হাইকমিশনের অফিস খুলতে দিলেই সব ঠিক হয়ে যাবে এবং না দিলে কিছু হবে না-এটি মনে করার কোনো কারণ নেই৷ খুব অল্প কিছু দেশেই তাদের অফিস আছে৷ আমরা দেখছি যে, আমাদের প্রয়োজন আছে কিনা৷''

জোরপূর্বক গুমের শিকার মাইকেল চাকমা বিচার চান