ম্যার্কেলের চীন সফর
২৯ অক্টোবর ২০১৫এক সপ্তাহ আগে চীনের প্রেসিডেন্ট শি চিনপিং যুক্তরাজ্য সফর করে এলেন৷ তাঁকে রাখা হয়েছিল বাকিংহ্যাম প্যালেসে, যে কারণে ম্যার্কেলকে বেইজিংয়ে বলতে শোনা গেছে, ‘‘জার্মানিতে তো আর আমাদের কোনো রানি নেই৷'' স্বভাবতই উপস্থিত জনতা রসিকতাটি উপভোগ করেছেন৷
শি-র ব্রিটেন সফরে চীন এবং ব্রিটেনের বিভিন্ন কোম্পানির মধ্যে প্রায় ৫৬ বিলিয়ন ইউরোর চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়৷ এবার ম্যার্কেলের চীন সফরে প্রায় সমপরিমাণ বাণিজ্যিক চুক্তি স্বাক্ষরিত হবার কথা শোনা যাচ্ছে৷ ম্যার্কেল ও চীনের প্রধানমন্ত্রী লি কোচিয়াংয়ের উপস্থিতিতে যে সব চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়, তাদের মধ্যে ছিল মোবাইল ফোন উৎপাদনকারী সংস্থা নোকিয়া ও চায়না মোবাইলের মধ্যে চুক্তি; এছাড়া ফল্কসভাগেন গাড়ি কোম্পানি ও চীনের আইসিবিসি ব্যাংকের মধ্যে একটি চুক্তি৷ ম্যার্কেল চীনের অর্থনীতিতে তাঁর পূর্ণ আস্থা ব্যক্ত করেন৷
আগামী সপ্তাহেই ফরাসি প্রেসিডেন্ট ফ্রঁসোয়া ওলঁদ চীন সফরে যাচ্ছেন, প্যারিস সম্মেলনে সম্ভাব্য একটি জলবায়ু চুক্তিতে চীনের সমর্থন পাওয়ার আশায়৷ কাজেই বৃহস্পতিবার চীনের প্রধানমন্ত্রী লি কোচিয়াংকে প্রশ্ন করা হয়, চীনের মন জয় করার জন্য ইইউ-তে একটি ‘বিউটি কনটেস্ট' চলেছে কিনা৷ ম্যার্কেল তখন লি-র পাশে দাঁড়িয়ে৷ উত্তরে লি বলেন, ‘‘ওটাকে প্রতিযোগিতা বলা উচিৎ নয়... আমরা সকলেই সহযোগিতার সম্ভাবনা খুঁজছি৷''
আসল উদ্বেগ সম্ভবত এই যে, জার্মানি ইউরোপীয় ইউনিয়নে চীনের মুখ্য অর্থনৈতিক সহযোগীর মর্যাদা খোয়াতে পারে৷ সে সম্পর্কে ম্যার্কেল সাংবাদিকদের বলেন, ‘‘চীনে জার্মানির অবস্থান খুব শক্ত এবং আমি আস্থাবান৷'' তার প্রমাণ হিসেবে বলা যেতে পারে, ২০১৪ সালে চীন-জার্মান বাণিজ্য একটা নতুন রেকর্ড পর্যায়ে পৌঁছেছে৷ ম্যার্কেল তাঁর চলতি সফরে এ যাবৎ মানবাধিকার নিয়ে কোনো কথা বলেননি৷ তবে গতবছর তিনি বেইজিংয়ে বলেছিলেন, ‘‘সফল অর্থনৈতিক বিকাশ এবং সুশীল সমাজ ও মানবাধিকারের বিকাশ পরস্পরের সঙ্গে যুক্ত৷''
ম্যার্কেল দৃশ্যত এবার জার্মানির সরকারি কর্মকর্তাদের একটি পুরাতন পন্থা অনুসরণ করে চলেছেন: দেশের সমস্যা নিয়ে বিদেশে কোনো মন্তব্য করা চলবে না৷ অথচ স্বদেশে তিনি তাঁর রাজনৈতিক জীবনে সম্ভবত এই প্রথম ঝড়ের সম্মুখীন৷ জার্মানিতে বিপুল সংখ্যক উদ্বাস্তুর আগমন নিয়ে ম্যার্কেলের জনপ্রিয়তা কিছুটা হ্রাস পেয়েছে৷ বিশেষ করে তাঁর সিডিইউ দলের জোড়োয়া সিএসইউ দল ও তাদের নেতা হর্স্ট জেহোফার ম্যার্কেলের উদ্বাস্তু নীতির বিরুদ্ধে সোচ্চার৷ এমনকি জেহোফার ম্যার্কেলকে চরমপত্র দিতেও দ্বিধা করেননি৷ জেহোফার চান, রবিবারের মধ্যে একটা সমাধান৷ সমাধান তো দূরের কথা, এমনকি ম্যার্কেলকে সমস্যার অঙ্গ হিসেবেই দেখতে শুরু করেছেন বিশ্লেষকরা৷
ম্যার্কেল দৃশ্যত চীন সফরেও সেই সমাধান নিয়ে কাজ করছেন৷ বিশ্লেষকরা বলছেন, সিরিয়ার পরিস্থিতির উন্নতির জন্য চীন রাশিয়ার সঙ্গে তার সুসম্পর্কের সুযোগ নিতে পারে এবং ম্যার্কেল সম্ভবত বেইজিংয়ে ঠিক সেই অনুরোধই জানিয়েছেন৷
এসি/এসিবি (ডিপিএ, এএফপি, রয়টার্স)