দুনিয়ার মাথাব্যথা উত্তর কোরিয়া
১৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৩উত্তর কোরিয়ার তথাকথিত আণবিক বোমাটি যে কী, অথবা কী হতে পারে, সে সম্পর্কে বিশ্বের নানা গুপ্তচর বিভাগকে একটা আধা-সঠিক আন্দাজ দিল উত্তর কোরিয়া৷ প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা যখন তাঁর স্টেট অফ দ্য ইউনিয়ন ভাষণ দিচ্ছেন, ঠিক তখনই বিস্ফোরণটি ঘটিয়ে পিয়ংইয়াং আরো জানান দিল, তাদের এই বোমার বার্তা কিংবা হুমকিটা কার জন্য৷
এক কথায়, উত্তর কোরিয়া এমন একটি ছোট আণবিক বোমা তৈরি করা প্রচেষ্টা করছে, যা রকেটে বসিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের দিকে নিক্ষেপ করলে, তা অন্তত অ্যামেরিকার পশ্চিম উপকূলে কোনো লক্ষ্যবস্তুর উপর আঘাত হানতে পারবে৷ এই বিস্ফোরণটা আগের দু'টোর মতো প্লুটোনিয়াম দিয়ে ঘটানো হয়েছে, না উত্তর কোরিয়া সত্যিই ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধিকরণে সফল হয়েছে, তা বুঝতে কয়েক দিন সময় লেগে যাবে৷ সর্বশেষ বিস্ফোরণের পর দক্ষিণ কোরিয়া তার বিমান ও জাহাজ পাঠিয়ে, এবং জাপান জঙ্গিজেট উড়িয়ে বাতাসের নমুনা সংগ্রহ করার চেষ্টা করেছে, যাতে উত্তর কোরিয়া বোমা তৈরির পথে কতোটা এগিয়েছে, সেটা বোঝা যায়৷
মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা সঙ্গে সঙ্গে উত্তর কোরিয়ার ‘‘অতিমাত্রায় প্ররোচনামূলক পদক্ষেপের'' কথা বলেছেন৷ কিন্তু তিনিও জানেন, চীন যদি আরো কড়া পন্থা না ধরে, তাহলে শুধু আন্তর্জাতিক শাস্তিমূলক ব্যবস্থার ভয় দেখিয়ে উত্তর কোরিয়াকে নিরস্ত করা যাবে না৷ তবে বেইজিং'এর ধৈর্যও ফুরিয়ে আসছে, এমন লক্ষণ দেখা দিয়েছে৷ ওদিকে চীনের সোশ্যাল মিডিয়ায় ইউজাররা কর্তৃপক্ষের তুলোধোনা করেছে তাদের নরম প্রতিক্রিয়ার জন্য৷
ধরা যাক উত্তর কোরিয়া একটা ‘‘ছোট আণবিক বোমার'' বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে৷ কিন্তু সেটা কি রকেটের মাথায় ‘ওয়ারহেড' হিসেবে লাগানোর মতো ছোট? বিশেষজ্ঞদের কাছে সেটা স্পষ্ট নয়৷ আবার বোমাটা যদি ইউরেনিয়ামের হয়, তাহলে আরো একটা সমস্যা হবে এই যে, প্লুটোনিয়াম ফেসিলিটিগুলি বড় এবং সেগুলি থেকে বড়মাপের তেজস্ক্রিয়তা নির্গত হয়, যা ধরা সহজ৷ কিন্তু ইউরেনিয়াম সেন্ট্রিফিউজগুলি গুহা, সুড়ঙ্গ ইত্যাদি গোপন স্থানে লুকিয়ে রাখা সম্ভব৷
কাজেই যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে উত্তর কোরিয়ার এই সর্বাধুনিক পারমাণবিক বিস্ফোরণ সেদিক থেকে ঝুঁকি কিংবা বিপদের একটা আলাদা পর্যায় হয়ে উঠতে পারে৷ উত্তর কোরিয়া থেকে অ্যামেরিকার দূরত্ব ইরানের থেকে অ্যামেরিকার দূরত্বের অনেক কম৷ সাধে কি প্রেসিডেন্ট ওবামা রকেট প্রতিরক্ষা সংক্রান্ত গবেষণায় আরো বেশি টাকা ঢালার কথা ভাবছেন৷
ওদিকে উত্তর কোরিয়া কী বলতে চাইছে, সেটাও বিশেষজ্ঞদের কাছে স্পষ্ট৷ উত্তর কোরিয়া বলছে, তার পরমাণু বোমা কিংবা ক্ষেপণাস্ত্র সংক্রান্ত ইস্যুগুলির সমাধান শাস্তিমূলক ব্যবস্থা দিয়ে নয়, একমাত্র মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে উচ্চপর্যায়ের আলাপ-আলোচনার মাধ্যমেই সম্ভব৷ এখন তা যতোই অসম্ভব বলে মনে হোক না কেন, এ'বছরে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে উত্তর কোরিয়ার কূটনৈতিক আলাপ-আলোচনার সম্ভাবনা বাড়ল৷
এসি / এসবি (এপি, এএফপি)