শিক্ষা ক্ষেত্রে সমস্যায় প্রতিবন্ধীরা
১ জুলাই ২০১৪প্রতিবন্ধীবিষয়ক নীতিমালায় স্বাক্ষর দেওয়ার পর থেকে জার্মানিতে স্কুলের ক্ষেত্রে অন্তর্ভুক্তি নিয়ে আলোচনা চলছে৷ অন্যদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় সাত শতাংশ শিক্ষার্থী কম-বেশি প্রতিবন্ধকতা নিয়ে পড়াশোনা করছেন৷ অনেকে ডক্টরেটও করছেন৷
ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে প্রতিবন্ধকতা
৪০ বছর বয়সি সেবাস্টিয়ান সাবেক পূর্ব জার্মানিতে বসবাসকারী আফ্রিকানদের জীবন নিয়ে গবেষণা করছেন৷ এক্ষেত্রে হামবুর্গের ‘জার্মান ইন্সটিটিউট অফ গ্লোবাল অ্যান্ড এরিয়া স্টাডিস', সংক্ষেপে জিআইজিএ এক উপযুক্ত শিক্ষালয়৷ মাস ছয়েক ধরে এই ইন্সটিটিউটে লাইব্রেরিয়ান হিসাবে কাজ করছেন তিনি৷ তাঁর গবেষণার জন্য এই লাইব্রেরি যেন এক রত্মভাণ্ডার৷
শিগগিরই বার্লিনের হুমবোল্ট ইউনিভার্সিটির ‘ইন্সটিটিউট ফর ইউরোপীয় এথনোলজিতে' ডক্টরেটের কাজ শুরু করবেন সেবাস্টিয়ান৷ সেখানে তিনি মাস্টার কোর্সও করেছেন৷ গুরুতর ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ায় ঠিকমত চলাফেরা করতে পারেন না তিনি৷ অনেকদিন আগেই কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণা সহকারী পদের জন্য আবেদন করেছিলেন৷ কিন্তু সফল হননি৷ বৃত্তি পাওয়ার চেষ্টাও ব্যর্থ হয়৷ অবশেষে একটি ক্ষেত্রে সাফল্যের মুখ দেখা গেলো৷ প্রতিবন্ধী অ্যাকাডেমিকদের জন্য বিশেষ উদ্যোগ ‘প্রোমোশন ইনক্লুসিভ' – ‘পিআরওএমআই' বা ‘প্রমি'-র পক্ষ থেকে সহায়তা পাবেন সেবাস্টিয়ান৷
কয়েক গ্রুপে ভাগ করা হয়েছে
সব মিলিয়ে ৪৫ জন গবেষককে সহায়তা দিচ্ছে ‘প্রমি'৷ প্রথম গ্রুপের ১৫ জনের মধ্যে সেবাস্টিয়ান একজন৷ এরপর অন্য দুই গ্রুপকে আনা হবে সাহায্যের আওতায়৷ তাঁরা সবাই তিন বছর ধরে গবেষণা সহকারী হিসাবে ১৪টি সহযোগী বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো একটিতে কাজ করবেন৷
আসলে সেবাস্টিয়ান ২০০৯ সালে মাস্টার্স করার পর ডক্টরেট শুরু করতে চেয়েছিলেন৷ কিন্তু খরচ চালাবার জন্য তাঁর প্রয়োজন ছিল গবেষণা সহকারীর কাজ বা বৃত্তি৷ কিন্তু দুই বছর কেটে গেলেও কোনোটারই মুখ দেখতে পাননি তিনি৷
জার্মানির শিক্ষার্থীদের মধ্যে খুব কম সংখ্যকই কোনো বৃত্তি নিয়ে পড়াশোনা করছেন৷ এর মধ্যে কতজন ডক্টরেট করছেন তা বলা যায় না৷ কেননা এক্ষেত্রে কোনো পরিসংখ্যান নেই৷ বৃত্তিদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলি মনে করে এ ব্যাপারে সবারই সমানাধিকার থাকা উচিত৷
সেবাস্টিয়ান মনে করেন, প্রতিবন্ধী অ্যাকাডেমিকদের সমস্যাগুলি নিয়ে তেমন মাথা ঘামানো হয় না৷ ফর্ম পূরণ করার সময় এমন কোনো ঘর পাননি তিনি, যেখানে ক্রস দেওয়া যায়৷ তিনি প্রতিবন্ধী হিসাবে ‘বোনাস' চান না৷ কিন্তু তাঁর বায়োডাটায় ফাঁকটার ব্যাখ্যা দিতে চান৷
১২ থেকে ২৫ বছর বয়স পর্যন্ত সব মিলিয়ে দুই বছর হাসপাতালে থাকতে হয়েছে তাঁকে৷ অল্পবয়সে অস্থির ক্যানসারে আক্রান্ত হন সেবাস্টিয়ান, যার চিহ্ন এখনও রয়ে গিয়েছে৷
চলাফেরায় অসুবিধা
চলার সময় খুঁড়িয়ে হাঁটতে হয়৷ বসার সময় বা পা ভাজ করতে পারেন না৷ এই পায়েই টিউমারটা হয়েছিল৷ এক ধরনের বন্ধফলক বা স্প্লিন্ট দিয়ে পা-টির ভারসাম্য রক্ষা করার চেষ্টা করা হয়েছে৷
বেশিক্ষণ বসে থাকতেও অসুবিধা হয় তাঁর৷ কিন্তু এরপরেও থিসিসে মনোযোগ কমেনি এই অধ্যাবসায়ীর৷ আর তাই তো চাকরি ও বৃত্তির আবেদন নাকোচ হয়ে যাওয়ার পর জিআইজিএ-র গ্রন্থাগারে খণ্ডকালীন চাকরি শুরু করেন সেবাস্টিয়ান৷ পাশাপাশি চালিয়ে যান গবেষণার কাজ৷
অন্যদিকে হুমবোল্ট ইউনিভার্সিটিতে গবেষণা শুরু করার আগে বেশ কিছু কাজ সারতে হচ্ছে তাঁর প্রফেসর বেয়াটে বিন্ডারকে৷ কাজের জায়গাটি সেবাস্টিয়ানের শারীরিক প্রতিবন্ধকতার দিকে লক্ষ্য রেখে ঠিকঠাক করা হচ্ছে৷ উঁচু বা নীচু করা যায় এমন একটি টেবিলের অর্ডার দেওয়া হয়েছে ইতোমধ্যেই৷ প্রফেসর বিন্ডার জানান, ‘ইন্সটিটিউট ফর ইউরোপীয়ান এথনোলজি'-কে ২০ শতাংশ খরচ বহন করতে হয়৷ ‘‘এটা একটা অতিরিক্ত চাপ৷ কিন্তু তা আমরা সামলাতে পারব৷''
একটি শুভ উদ্যোগ
প্রতিবন্ধী অ্যাকাডেমিকদের জন্য বিশেষ এই প্রকল্পকে খুব ভালো বলে মনে করেন তিনি এবং এতে সহায়তা দিতেও আগ্রহী৷ তবে মাঝে মাঝে বাধার সম্মুখীনও হতে হয়৷ আরেক ডক্টরেটের ছাত্রীর শ্রবণযন্ত্র কেনার ব্যাপারে চেষ্টা চালিয়ে যেতে হচ্ছে তাঁকে৷ সংশ্লিষ্টদের পক্ষ থেকে আপত্তি জানিয়ে বলা হচ্ছে, ‘‘থিসিস লেখার জন্য তো শোনার প্রয়োজন নেই৷''
‘প্রমি'-র কাজটি পাওয়ায় সেবাস্টিয়ান এখন স্বস্তি পেয়েছেন৷ পাঁচ বছর ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করার পর পাওয়া গেল আর্থিক নিরাপত্তা৷ এখন পুরোপুরি থিসিসের কাজে মনোযোগ দিতে পারবেন এই গবেষক৷