1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ঈদে ঢাকাই সিনেমার ব্যবসা

১৬ জুন ২০১৯

এবার ঈদে প্রেক্ষাগৃহে এসেছে তিনটি ছবি৷ মালেক আফসারীর ‘পাসওয়ার্ড’, সাকিব সনেটের ‘নোলক’ এবং অনন্য মামুনের ‘আবার বসন্ত’৷ আর প্রথমবারের মতো ইউটিউবে মুক্তি পেয়েছ কামরুজ্জামান কামুর ‘দ্য ডিরেক্টর’৷

https://p.dw.com/p/3KXUl
Bangladesh Cinema
ছবি: DW/M. Mamun

ছবির কাটতি নিয়ে সন্তুষ্ট চার নির্মাতা৷ ডয়েচে ভেলের সঙ্গে নিজ ছবির পাশাপাশি বাংলা চলচ্চিত্রের সংকট ও সম্ভাবনা  নিয়ে কথা বলেছেন তারা৷

মালেক আফসারী

পরিচালক, পাসওয়ার্ড

১৮০টি হলে মুক্তি পেয়েছে পাসওয়ার্ড৷ প্রথম দিন থেকেই দর্শকদের অভূতপূর্ব সাড়া পাচ্ছি৷ যা আমাদের প্রত্যাশাকেও ছাড়িয়ে গেছে৷ এতোটা সাড়া পাবো, আমরা ভাবিনি৷ এছাড়াও মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, আমেরিকা, কানাডা এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতেও ছবিটি মুক্তি দেয়ার কথা ভাবছি৷ শুরুতে মালয়েশিয়া ও সিঙ্গাপুরে মুক্তি দেয়া হবে৷ ছবিটি নির্মাণে খরচ হয়েছে পাঁচ কোটি টাকা৷ যা এসময়ের সবচেয়ে বড় বাজেটের ছবি৷ দেশে কোটি টাকা দিয়েই ছবি নির্মাণ সম্ভব৷ কিন্তু আমাদের আত্মবিশ্বাস ছিলো, বিনিয়োগ তুলে আনতে পারবো৷ ছবি মুক্তির আগেই লগ্নি করা অর্থ উঠে এসেছে৷ প্রথম চারদিনের বিক্রির পরিমাণ ১১কোটি টাকা ছাড়িয়েছে৷ এখনকার দর্শকরা ভালো মানের ছবি দেখতে চান৷ কারণ মোবাইল ইন্টারনেটের কারণে এখন বিশ্বের চলচ্চিত্র সবার হাতের মুঠোয়৷ সিনেমা হলের চেয়েও মানুষ এখন মোবাইলের ওপর নির্ভরশীল৷ ফলে মানসম্মত ছবি বানাতে হবে৷ আমি বলতে পারি, ‘পাসওয়ার্ড' যৌথ প্রযোজনার ছবির চেয়েও মানসম্মত৷ ব্যবসার দিকে অতীতের রেকর্ড ভাঙছে এই ছবি৷ শাকিব খান অভিনীত যৌথ প্রযোজনার ছবি শিকারী, নাকাব আর নবাবের রেকর্ড ভেঙে ফেলেছে প্রথম তিন দিনেই৷ দর্শক আসলে ছবি দেখে আনন্দ পেতে চান৷ তবে, একটা ‘পাসওয়ার্ড' দিয়ে এই অবস্থার পরিবর্তন হবে না৷ বছরে অন্তত বারোটা ভালো মানের ছবি প্রয়োজন৷ তাই সকল নির্মাতাকে এগিয়ে আসতে হবে৷ আমি নিজে খুব কম কাজ করি৷ ৪০ বছরের ক্যারিয়ারে এটা আমার ২৪তম ছবি৷ অনেকের ২০ বছরেই ৫০ পেরিয়ে গেছে৷ ছবির বিপণনে বিশেষ কোনো কৌশল নিতে হয় বলে আমি মনে করি না৷ ‘পাসওয়ার্ড'-এর সাফল্য তারই প্রমাণ৷ ছবির বিজ্ঞাপণ হবে মুখে মুখে৷ একজন দর্শকের ভালো লাগলে, অপরকে তিনি বলবেন৷ এভাবেই ছবির সাফল্য আসে৷

এতোটা সাড়া পাবো, আমরা ভাবিনি: মালেক আফসারী

সাকিব সনেট

প্রযোজক, নোলক

প্রতিটি জেলায় অন্তত ২/৩টি মাল্টিপ্লেক্স নির্মাণ করা দরকার: সাকিব সনেট

নোলক নিয়ে মানুষের আগ্রহ আমার প্রত্যাশার চেয়েও বেশি৷ একসঙ্গে ৭৭টি হলে চলছে ছবিটি৷ দ্বিতীয় সপ্তাহে গিয়ে হল সংখ্যা আরো বাড়তে পারে৷ কৌশলগত কারণে ছবির বিনিয়োগ সম্পর্কে বলতে চাই না৷ তবে এটা বলতে পারি, দেশের চলচ্চিত্র ইতিহাসের ব্যয়বহুল ছবিগুলোর একটি ‘নোলক'৷ ভারতের বিভিন্ন স্থানে ছবিটির চিত্রায়ণের কাজ হয়েছে, পোস্ট প্রোডাকশনের কাজটাও দেশের বাইরে করিয়েছি, তাই আমাদের খরচও হয়েছে অনেক৷ তবে বিনিয়োগ উঠে আসবে বলে, আমি দৃঢ়ভাবে আশাবাদী৷ এখন হলের পাশাপাশি, অর্থ তুলে আনার জন্য আরো কিছু কৌশল তো আছেই৷ স্পন্সর, পার্টনারশিপ, ডিজিটাল রাইট--সব মিলিয়ে লাভের আশা করছি৷ ছবির প্রচারণায় নতুন নতুন কৌশল নেওয়া খুব জরুরি৷ টিমের ইচ্ছে অনুযায়ী ছবির প্রয়োজনে ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মকে ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে৷ চলচ্চিত্রের সুদিন ফেরাতে হলে, গল্পের মৌলিকত্ব, অভিনয় শিল্পীদের দক্ষতা, পারিবারিক মূল্যবোধ থাকাটা খুব জরুরি৷ আর অবকাঠামোগত উন্নয়নও খুব জরুরি৷ এজন্য সরকারের এগিয়ে আসা প্রয়োজন, প্রয়োজন পৃষ্ঠপোষকতা৷ প্রতিটি জেলায় অন্তত ২/৩টি মাল্টিপ্লেক্স নির্মাণ করা দরকার৷ তাহলে দেশে ভালো ছবি তৈরি হবে, দর্শকরাও ভালো মানের ছবি পাবে৷

অনন্য মামুন

পরিচালক, আবার বসন্ত

ছবি মুক্তির পর থেকে দর্শক সাড়া যেভাবে মিলেছে, তাতে আমি এবং আমাদের টিম বেশ সন্তুষ্ট৷ দর্শকের আগ্রহ দেখে মনে হয়েছ ছবি নির্মাণ সার্থক হয়েছে৷ এখন পর্যন্ত সাতটি হলে মুক্তি পেয়েছে ‘আবার বসন্ত'৷ চাহিদা থাকলে আরো বেশি হলে ছবিটি পৌঁছে দেয়ার ইচ্ছে আছে৷ ‘আবার বসন্ত' নির্মাণে ৭০ লাখ টাকার মতো ব্যয় হয়েছে৷ আশার কথা হচ্ছে, লগ্নির বেশিরভাগ অর্থ সপ্তাহান্তে তুলে আনতে পেরেছি৷ কিছুদিনের মধ্যে লাভের বিষয়ে আশাবাদী আমরা৷ তবে, অর্থ লাভের চেয়েও ভালো মানের ছবি বানানোর চেষ্টা করছি৷ আমার মনে হয়, বাংলা চলচ্চিত্রের উন্নয়নে দেশি বিনিয়োগকারীদের পাশাপাশি, প্রবাসী বাঙালিদেরও এগিয়ে আসা দরকার৷ বাংলাদেশি ছবি দেশের বাইরে মুক্তি দেয়ার বিষয়েও প্রবাসী বাঙালিরা ভূমিকা রাখতে পারে৷ তাতে, দেশের সংস্কৃতি ভিনদেশিদের কাছে তুলে ধরা সম্ভব হবে৷ একটি চলচ্চিত্রকে সবার কাছে পৌঁছে দিতে হলে সিনেমাহল দরকার৷ আমাদের দেশে ৬৪টি জেলা আছে, কিন্তু প্রতি জেলায় মাল্টিপ্লেক্স নেই৷ জেলা শহরগুলোতে অন্তত একটি করে মাল্টিপ্লেক্স নির্মাণ করা উচিত৷ এজন্য সরকারের পাশাপাশি ব্যবসায়ীদেরও এগিয়ে আসা প্রয়োজন৷ একইসঙ্গে আত্ম-উন্নয়ন এবং আন্তর্জাতিক অঙ্গণে দেশের ছবি কিভাবে প্রদর্শন করা যায়, সেদিকে দৃষ্টি দেয়া দরকার৷ ইদানিং, চলচ্চিত্রে অর্থলগ্নি করতে অনেকে আগ্রহ দেখাচ্ছেন৷ কিন্তু ছবির সাফল্যের জন্য বিপণন খুব জরুরি৷ সময়ের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে এগিয়ে যেতে, ছবি ডিজিটালাইজেশন ও ই-টিকেটিংয়ের ব্যবস্থা রাখা দরকার৷

অর্থ লাভের চেয়েও ভালো মানের ছবি বানানোর চেষ্টা করছি: অনন্য মামুন

কামরুজ্জামান কামু

পরিচালক, দ্য ডিরেক্টর

ইউটিউবে নিজের চ্যানেল থেকে ছবিটি মুক্তি দিয়েছি: কামরুজ্জামান কামু

ইউটিউবে নিজের চ্যানেল থেকে ছবিটি মুক্তি দিয়েছি৷ আমার চ্যানেল অতোটা জনপ্রিয় না হলেও, বেশ ভালো সাড়া পাচ্ছি৷ ভাইরাল হয়ে যাওযার মতো অবস্থা তৈরি হয়েছে৷ আর তাতে, নতুন করে ছবি তৈরির বিষয়ে আমি অনুপ্রাণিত হচ্ছি৷ হয়তো এই ছবিতে আমাকে আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়তে হবে৷ আবার দীর্ঘমেয়াদে ইউটিউবে ভিউ বেড়ে গেলে, অর্থ উঠেও আসতে পারে৷ খবুই কম বাজেটের ছবি এটি৷ এতো কমে ছবি কেউ বানায় না৷ তবে ছবির নির্মাণে কতো টাকা খরচ হয়েছে, সেই হিসেবটা এখন আর আমার কাছে নেই৷ কিন্তু, এই ছবিকে প্রতিষ্ঠিত করতে আমার যে অর্থ ব্যয় হয়েছে, তার একটা হিসেব আমার কাছে আছে৷ আন্দোলন করা, দিনের পর দিন কাজ না করা-এসব কিছু মিলিয়ে আমার প্রায় লাখ ত্রিশেক টাকা খরচ হয়েছে৷ ভালো ছবির জন্য সেন্সর একটা বড় সমস্যা৷ সেন্সর বোর্ডে যারা কাজ করে তাদের আরো পরিণত হওয়া উচিত৷ বৈচিত্র্যপূর্ণ ছবি নির্মাণ করা হতে পারে, কিন্তু সেসব ছবি সেন্সর বোর্ডের পছন্দ হবে না বলে ছাড় দেবে না, এটা হতে পারে না৷ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে চলচ্চিত্র পাঠ্যক্রম অন্তর্ভূক্ত হওয়ায়, সিনেমার প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাটা দেশে তৈরি হয়েছে৷ এর হাত ধরে চলচ্চিত্রে সুফল আসবে৷ আরো ভালোমানের প্রযোজক  দরকার৷ যারা মেধার মূল্যায়ন করে, নতুনদের ছবি বানানোর সুযোগ করে দিতে এগিয়ে আসবে৷

টিএম/কেএম