ইসলামাবাদের সঙ্গে শান্তি আলোচনায় তালেবান
২২ নভেম্বর ২০১১পাকিস্তানের উগ্র ইসলামপন্থি জঙ্গি দল তেহরিক-ই-তালেবান'এর শীর্ষস্থানীয় কম্যান্ডারের এহেন দাবি বেশ চমকে দিয়েছে রাজনীতিকদের৷ বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানায়, দেশটির বিতর্কিত দক্ষিণ ওয়াজিরিস্তান এলাকায় শান্তি স্থাপন বিষয়ে কয়েক মাস যাবত কথা বলছে জঙ্গি তালেবান এবং পাকিস্তান৷ জানা গেছে, আল-কায়েদা'র ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত তেহরিক-ই-তালেবান পাকিস্তান বা তালেবান মুভমেন্ট অব পাকিস্তান (টিটিপি) – দক্ষিণ ওয়াজিরিস্তানে শান্তি স্থাপনের শর্ত হিসেবে ইতিমধ্যেই তাদের মূল দাবিগুলি উপস্থাপন করেছে৷ এদের মধ্যে পাকিস্তানে আটক বেশ কয়েকজন জঙ্গিকে মুক্তি দেওয়ার কথাও আলোচিত হয়েছে বলে প্রকাশ৷
পাকিস্তান অবশ্য, খুব স্বাভাবিকভাবেই এ ব্যাপারে এখনও পর্যন্ত কোনো সরকারি বিবৃতি দেয় নি৷ যদিও, কয়েক মাস আগেও পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইউসুফ রাজা গিলানি বলেছিলেন যে, তাঁর সরকার হাক্কানি নেটওয়ার্কসহ তালেবান জঙ্গিদের সব গ্রুপের সঙ্গেই শান্তি আলোচনার জন্য প্রস্তুত৷
এদিকে পাকিস্তানে বিদ্রোহী তৎপরতার অবসান ঘটাতে, জঙ্গিদের সঙ্গে বিরোধ মীমাংসার চেষ্টার কথা আগেই বলে আসছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র৷ শুধু দক্ষিণ ওয়াজিরিস্তানেই নয়, অ্যামেরিকা চাইছিল উত্তরের পরিস্থিতিরও একটি শান্তিপূর্ণ সমাধান৷ অথচ সে সময়, পাকিস্তানের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রেহমান মালিক বলেছিলেন, তালেবান জঙ্গিরা অস্ত্র সমর্পণ করার পরই কেবল ইসলামাবাদ তাদের সঙ্গে শান্তি আলোচনা করবে৷ তিনি বলেন, ‘‘যে কোনো ধরনের শান্তি আলোচনার জন্য প্রথমে অস্ত্র ত্যাগ করতে হবে তালেবানকে৷ তারা যদি মনে করে হামলা অব্যাহত রাখবে এবং আলোচনাও করবে – তাহলে তা কখনোই হবে না৷''
অথচ বার্তা সংস্থা রয়টার্স-এর রিপোর্ট অনুযায়ী, তেহরিক-ই-তালেবান পাকিস্তান'এর সঙ্গে এর মধ্যেই গোপনে তিন দফা আলোচনা করেছে ইসলামাবাদ৷ কিন্তু এই গোপনীয়তা রক্ষার কারণ কী? টিটিপি কম্যান্ডারের কথায়, ‘‘এই শান্তি আলোচনায় আমরা কোনো বিদেশি হস্তক্ষেপ চাইছিলাম না৷ তাছাড়া, পাকিস্তান সরকার বিভিন্ন ক্ষেত্রে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সহযোগিতা করার ফলে, আমরা যুদ্ধ করতে বাধ্য হয়েছিলাম৷''
এর আগেও শান্তি আলোচনায় তৃতীয় পক্ষ হিসেবে অ্যামেরিকা নয়, আরব বিশ্বের কথা উঠে আসে৷ তবে সমস্যা হচ্ছে, জঙ্গি দমনে এখনও যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে বিরাট পরিমাণ অর্থ সাহায্য হিসেবে পেয়ে থাকে পাকিস্তান৷ তাই এবার, তাদের অগোচরে পাকিস্তান এধরনের শান্তি আলোচনা চালানোয় – যুক্তরাষ্ট্র যে সেটাকে ঠিকভাবে দেখবে না – তা বলাই বাহুল্য!
উল্লেখ্য, তেহরিক-ই-তালেবান পাকিস্তান ২০০৭ সালের ডিসেম্বরে গঠিত হয়৷ পাকিস্তানে চালানো বেশ কয়েকটি আত্মঘাতী হামলার জন্য টিটিপি'কে দায়ী করে আসছে সরকার৷ ঐ সব হামলায় বহু মানুষ হতাহত হয়৷ এমনকি গত বছর, টিটিপি'কে বিদেশি সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে তালিকাভুক্ত করে এর দু'জন শীর্ষ নেতাকে ধরিয়ে দেওয়ার জন্য পুরস্কারও ঘোষণা করে যুক্তরাষ্ট্র৷
প্রতিবেদন: দেবারতি গুহ
সম্পাদনা: আব্দুল্লাহ আল-ফারূক