ইসকন নিষিদ্ধের দাবি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের
২৭ নভেম্বর ২০২৪বাংলাদেশ সময় বেলা সাড়ে ১১টায় চট্টগ্রামের জামিয়াতুল ফালাহ জামে মসজিদে নিহত আইনজীবী সাইফুল ইসলামের দ্বিতীয় জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। এতে অংশ নেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আবদুল্লাহ ও জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক সারজিস আলম।
এরপর এক বিক্ষোভ সমাবেশে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাদের পক্ষ থেকে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের সংগঠন ইসকন নিষিদ্ধের দাবি তোলা হয়।
হাসনাত আবদুল্লাহ বলেছেন, "আমাদের দেশে সব ধর্মের সহাবস্থান থাকবে। আমরা সবার অধিকার রক্ষায় কাজ করব। কিন্তু ধর্মের দোহাই দিয়ে উগ্রবাদী সংগঠন পরিচালনা করলে বাংলাদেশে এক হাত জায়গাও দেওয়া হবে না। আমার ভাই সাইফুলকে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়েছে। এই ইসকনকে সন্ত্রাসী গোষ্ঠী হিসেবে নিষিদ্ধ করতে হবে।"
ইসকনের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগ এবং ভারতের সহায়তায় কাজ করার অভিযোগ তুলে হাসনাত বলেন, "আমরা ভুলে যাইনি, কীভাবে এই ইসকন স্বৈরাচারী আওয়ামী লীগের সহায়তায় ভারতের প্রেসক্রিপশনে বাংলাদেশে অশান্তি সৃষ্টি করছে। ভারতে বসে যতই ষড়যন্ত্রের চেষ্টা করা হোক, আমরা বাংলাদেশের মানুষ সেই ষড়যন্ত্র রুখে দেব। বিদেশে বসে এই আওয়ামী ফ্যাসিবাদী শক্তি দেশকে অশান্ত করার জন্য ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছে। আমরা বলে দিতে চাই, আওয়ামী লীগের পুনর্বাসন এই বাংলাদেশে হবে না।"
আরেক বক্তা সারজিস আলম বলেন, "আমরা সব ধর্মের প্রতি সহানুভূতিশীল। কিন্তু কেউ যদি সহানুভূতিকে দুর্বলতা মনে করে, তাহলে ছাড় দেওয়া হবে না। এই চট্টলায় ইসকনের জায়গা হবে না। আমরা ১৬ বছরের খুনি হাসিনাকে দেশছাড়া করেছি। এমন জঙ্গি ইসকনকে দেশছাড়া করা আমাদের কাছে হাতের ময়লা।"
‘ছাত্রলীগকে দেখা গেলেই গণপিটুনি দেয়া হবে'
চট্টগ্রামে সংঘর্ষে নিহত আইনজীবীর জন্য দোয়া ও সম্প্রীতির ডাক দিয়ে রাজধানী ঢাকার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে আরেকটি সমাবেশ করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। সেখানেও ইসকনকে 'জঙ্গু' ও 'সন্ত্রাসী' সংগঠন আখ্যায়িত করে বক্তব্য দেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা।
মুখ্য সংগঠক আবদুল হান্নান মাসউদ। বলেন, "শেখ হাসিনা মোদিকে নিয়ে আমার বাংলার মাটির দিকে হাত বাড়াচ্ছে। এই দেশের মানচিত্রের দিকে দিল্লি থেকে কেউ হাত বাড়ালে সেই হাত ভেঙে গুটিয়ে রেখে দেওয়া হবে। সেটা চিন্ময় কৃষ্ণ, ইসকন, আনসার লীগ—যে রূপেই হোক, দেশের মানুষ সেই হাত ভেঙে দেওয়ার জন্য প্রস্তুত।"
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সভায় 'যেখানেই সন্ত্রাসী ছাত্রলীগকে দেখা যাবে, সেখানেই গণপিটুনি গিয়ে পুলিশে সোপর্দ করা হবে', ২৫ তারিখের সভায় এমন সিদ্ধান্ত হয়েছে বলেও জানিয়েছেন আবদুল হান্নান মাসউদ।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নির্বাহী কমিটির সদস্য মাহিন সরকার ইসকনকে ‘জঙ্গি সংগঠন' আখ্যা দিয়ে বলেন, "ইসকনের নেতৃত্বে যেভাবে আইনজীবী সাইফুল ইসলামকে হত্যা করা হয়েছে, অতিদ্রুত তার বিচার কার্যকর না করা হলে ধরে নেব, ভারতীয় আগ্রাসনের সমর্থকেরা সরকারে বসে আছে। যেসব গণমাধ্যম এখনো ভারতীয় বয়ান প্রচার করছে, তাদের জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে।"
আইনজীবী হত্যায় সন্দেহভাজন ৬ জন আটক
আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফ হত্যার ঘটনায় সন্দেহভাজন অন্তত ছয়জনকে আটক করেছে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার ভেরিফাইড ফেসবুক পেইজ থেকে দেয়া এক পোস্টে জানানো হয়েছে, ভিডিও ফুটেজের মাধ্যমে এই ছয়জনকে শনাক্ত করা হয়েছে। তবে তাদের পরিচয় প্রকাশ করা হয়নি।
এছাড়া ২৬ নভেম্বর আদালত চত্বরে সংঘর্ষ চলাকালে ভাঙচুর ও পুলিশের ওপর হামলার অভিযোগে ২১ জনকে আটক করা হয়েছে। দেশীয় ইম্প্রোভাইজড এক্সপ্লোসিভ (ককটেল) সহ আওয়ামী লীগ ও নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগের ছয় সদস্যকে গ্রেপ্তারের কথাও জানিয়েছে প্রধান উপদেষ্টার দপ্তর।
এডিকে/এসিবি (প্রথম আলো, ডেইলি স্টার)