পরমাণু চুক্তি থেকে বের হবেন ট্রাম্প?
৮ মে ২০১৮ব্রিটেন, ফ্রান্স ও জার্মানি ইরানের সঙ্গে আন্তর্জাতিক সমাজের পরমাণু চুক্তির পক্ষে জোরালো সওয়াল করে ট্রাম্প প্রশাসনকে প্রভাবিত করার চেষ্টা করে এসেছে৷ কিন্তু ট্রাম্প তাদের সেই যুক্তি মেনে কমপক্ষে এ যাত্রায় তাঁর হুমকি থেকে সরে আসবেন কিনা, তা মঙ্গলবারই জানা যাবে৷
ট্রাম্প এই নির্বাচনি প্রতিশ্রুতি পালন করতে বদ্ধপরিকর৷ তাঁর মুখরক্ষা হয়, এমন কোনো বিকল্প পথ পেলে তবেই তিনি পরমাণু চুক্তি মেনে চলবেন, এমনটাই ধরে নেওয়া হচ্ছে৷
ট্রাম্প প্রশাসন শুরু থেকেই চারটি অভিযোগ করে আসছে৷ তাদের ধারণা, পরমাণু চুক্তি সত্ত্বেও সে দেশ আন্তর্জাতিক ইনস্পেক্টরদের ফাঁকি দিয়ে গোপনে অস্ত্র কর্মসূচি চালু রেখেছে৷ যদিও এই অভিযোগের সপক্ষে কোনো অকাট্য প্রমাণ পেশ করা হয়নি৷ চুক্তির মেয়াদ শেষ হলে ইরান কার্যত আবার আগের পথে ফিরে যেতে পারে – এমন ‘সানসেট ক্লজ' নিয়েও ওয়াশিংটনের আপত্তি রয়েছে৷ কোনো রাখঢাক না করে ইরান দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছে৷ তাছাড়া ইরাক, সিরিয়া, লেবানন, ইয়েমেনের মতো দেশে নানাভাবে প্রভাব বিস্তার করে আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা বিপন্ন করছে৷ ইউরোপীয় সহযোগীরা শেষোক্ত দুই যুক্তি কার্যত মেনে নিলেও তারা পরমাণু চুক্তির সাফল্য থেকে সরে আসতে প্রস্তুত নয়৷ বরং বাড়তি পদক্ষেপের মাধ্যমে ইরানের প্রভাব-প্রতিপত্তি খর্ব করার প্রচেষ্টা চালিয়ে তারা ট্রাম্প প্রশাসনের দুশ্চিন্তা দূর করতে চায়৷
ট্রাম্প শেষপর্যন্ত চুক্তি বাতিল করলে ইউরোপের সঙ্গে অ্যামেরিকার কৌশলগত সহযোগিতা বড় ধাক্কা খাবে বলে ধরে নেওয়া হচ্ছে৷ সে ক্ষেত্রে ইরানও চুক্তি পুরোপুরি বাতিল করার হুমকি দিয়েছে৷ অর্থাৎ সে দেশ কোনো রকম বাধ্যবাধকতা ছাড়াই ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ ও পরমাণু অস্ত্র তৈরির পথে এগোতে পারবে৷ সোমবার অবশ্য প্রেসিডেন্ট হাসান রোহানি পরমাণু চুক্তি মেনে চলার ইঙ্গিত দিয়েছেন৷ তিনি বলেন, ইরান যে কোনো পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুত৷
অ্যামেরিকা চুক্তি বাতিল করলেও ইউরোপের ৩ দেশ, চীন ও রাশিয়া এই চুক্তি মেনে চলতে প্রস্তুত৷ ইরানও চুক্তি মেনে চললে নতুন করে নিষেধাজ্ঞা এড়িয়ে চলতে পারবে৷ সে ক্ষেত্রে দেশের অর্থনীতি নতুন করে কোনো সংকটের মুখে পড়বে না৷ তাছাড়া তেহরান এই প্রশ্নে অ্যামেরিকা ও ইউরোপের মধ্যে বিভাজনের ফায়দা তোলার চেষ্টা করতে পারে৷
তবে ইরান মরিয়া হয়ে চুক্তি বাতিল করলে গোটা অঞ্চলে পরমাণু অস্ত্র প্রতিযোগিতা ও তার জের ধরে যুদ্ধের আশঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না৷ বিশেষ করে সৌদি আরব সেই পথে চলতে পারে৷ ইসরায়েলও কোনো গোপনীয়তা ছাড়াই পরমাণু অস্ত্রধর দেশ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে৷