ইরানে নির্বাচন
১৭ মে ২০১৩দেশের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ নিয়ে ইরানে বিরাজ করছে চরম অনিশ্চয়তা৷ যে রক্ষণশীল শক্তিরা দেশ চালাচ্ছে, তাদের নিজেদের মধ্যেই দ্বন্দ্ব, কোন্দল৷ প্রায় প্রতি সপ্তাহেই প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আহমেদিনেজাদের শিবির আর রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতোল্লার অনুসারী সনাতনপন্থি রক্ষণশীলদের মধ্যে কোনো না কোনো বিষয় নিয়ে কাজিয়া লেগে যায়৷
খামেনেই-এর উদ্দেশ্য হলো, ক্ষমতার উপর একচেটিয়া দখল কায়েমি করা৷ আহমেদিনেজাদ তার বিরোধী৷ এর ফলে যাদের হঠাৎ একটা নতুন সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে, তারা হলেন ইরানের সংস্কারপন্থিরা৷
সবুজ আন্দোলন
ইরানে সংস্কারপন্থিদের দিন ফুরিয়েছে বলেই মোটামুটি ধরে নেওয়া হচ্ছিল৷ ২০০৯ সালে আহমেদিনেজাদ যখন দ্বিতীয় কর্মকালের জন্য নির্বাচিত হন, তখন সংস্কারপন্থিরা ‘‘সবুজ আন্দোলন'' নাম দিয়ে তাঁর বিরুদ্ধে প্রতিবাদের আয়োজন করেছিলেন৷ সংস্কারপন্থিদের দুই মুখ্য নেতা ছিলেন সাবেক সংসদ সভাপতি মেহদি কারুবি ও ইরানের সর্বশেষ প্রধানমন্ত্রী মির হোসেইন মুসাভি – ইরানে প্রধানমন্ত্রী পদটি ১৯৮৯ সালেই সরকারিভাবে তুলে দেওয়া হয়৷
২০০৯ সালে আহমেদিনেজাদ সরকারিভাবে জেতেন বটে, কিন্তু বহু ইরানির কাছে সেটা ছিল ব্যাপক নির্বাচনি কারচুপির ফল৷ সেজন্যই লক্ষ লক্ষ মানুষ পথে নামেন এই ধ্বনি তুলে: ‘‘আমার ভোট গেল কোথায়?'' পুলিশ সে আন্দোলন অংশত নির্মম বলপ্রয়োগের মাধ্যমে দমন করে৷ মাত্র ছ'মাসের মধ্যে গণ অভ্যুত্থানের রেশ যেন বাতাসে মিলিয়ে যায়৷ দুই বিরোধী নেতা মুসাভি ও কারুবিকে গৃহান্তরীণ করা হয়৷ দু'টি বৃহত্তম সংস্কারপন্থি রাজনৈতিক দল – ইসলামি ইরানের অংশীদারি ফ্রন্ট ও ইসলামি বিপ্লবের মুজাহিদিন সংগঠন – উভয়কেই নিষিদ্ধ করা হয়৷
অচলাবস্থা
বহু বিরোধী রাজনীতিক ও আন্দোলনকারী, এছাড়া ব্লগার ও সাংবাদিকদের দ্রুত বিচার প্রক্রিয়ার মাধ্যমে দণ্ডদান করে জেলে পাঠানো হয়েছে৷ যুগপৎ ইরানে অর্থনৈতিক পরিস্থিতি আরো খারাপের দিকে গেছে, যার একটা কারণ আন্তর্জাতিক শাস্তিমূলক ব্যবস্থা হলেও, অপরটি হলো সরকারি নীতির ভুলভ্রান্তি৷
এই অচলাবস্থার পটভূমিতে সংস্কার আন্দোলন জুনের নির্বাচনে অংশ নেবার কথা ভাবছে৷ তাদের স্লোগান হবে: ‘‘আশা, আস্থা এবং স্থায়িত্বের সরকার''৷ তাদের পছন্দের প্রার্থী হলেন প্রেসিডেন্ট পদে আহমেদিনেজাদের পূর্বসুরী মোহাম্মদ খাতামি৷ সম্প্রতি ৯১ জন রাজনীতিক, আন্দোলনকারী ও কারাবন্দি বিরোধী রাজনীতিকদের আত্মীয়স্বজন একটি খোলাচিঠিতে খাতামির প্রতি বিরোধীদের প্রার্থী হবার আহ্বান জানিয়েছেন৷ খাতামির নাকি বিপুল ভোটে জেতার সম্ভাবনা আছে৷
তা বলে সংস্কারপন্থিদের সব সমর্থক যে ভোট দিতে যাবেন, এমন নয়৷ তাদের মধ্যে একাংশের ধারণা, ভোটে অংশগ্রহণ করার অর্থ, ‘‘এই একনায়কতন্ত্রকে বৈধতা দেওয়া'' – বিশেষ করে যখন এ নির্বাচনেও ভোটে কারচুপির আশঙ্কা রয়েছে৷ ধর্মীয় নেতা আয়াতোল্লা খামেনেই তাঁর রাজনীতি না বদলানো অবধি নির্বাচনে অংশ নেওয়ার কোনো অর্থ হয় না, বলে তাদের মত৷
প্রার্থীদের অংশগ্রহণও অনিশ্চিত
খাতামি অথবা অন্যান্য সংস্কারপন্থিদের প্রার্থী হবার সরকারি অনুমতি দেওয়া হবে কিনা, তাও নিশ্চিত নয়৷ ‘প্রহরা পরিষদ' প্রার্থী বাছাই ও অনুমোদনের দায়িত্বে৷ ছ'জন মৌলানা আর ছ'জন আইনজ্ঞ এই পরিষদের সদস্য৷ ২০০৯ সালে এই প্রহরা পরিষদ ৪৭৫ জন আবেদনকারীর মধ্য থেকে মাত্র চারজনকে প্রার্থী হবার অনুমতি দেয়৷ কোনো মহিলার প্রার্থী হওয়ার তো কোনো প্রশ্নই ওঠে না৷
তবে এবার কিছু সংস্কারপন্থি প্রার্থী রাখা হতে পারে শুধুমাত্র এই নির্বাচনকে বৈধতার একটা মেকি আবরণ দেবার জন্য – বলছেন বিশেষজ্ঞরা৷ তবে যিনি জিতবেন, তাঁর সংস্কারপন্থি হলে চলবে না৷ অথবা সে ধারণাটাও হয়ত ভুল! খাতামি স্বদেশে জনপ্রিয়, বিদেশে তাঁর যথেষ্ট সুনাম আছে৷ তিনি প্রেসিডেন্ট হলে অর্থনীতির হাল ফিরবে, ইরানের উপর আন্তর্জাতিক চাপ কমবে৷ আয়াতোল্লার পক্ষে সেটা খারাপ কেথায়?