ইরানের পরমাণু হুমকি
৬ জানুয়ারি ২০২০কাসিম সোলেইমানি হত্যার জের৷ আন্তর্জাতিক পরমাণু চুক্তি মানার দায়বদ্ধতা থেকে সরে আসছে ইরান৷ তেহরান সরকার পরিস্কারভাবে জানিয়ে দিয়েছে, ২০১৫ সালে পরমাণু চুক্তিতে যে সব শর্ত ছিল, বিশেষ করে হাতে কলমে পরীক্ষা করার ক্ষেত্রে যে বিধিনিষেধ ছিল, তা তারা আর মানবে না৷ ইউরেনিয়াম প্রক্রিয়াকরণের সীমাও তারা মানতে নারাজ৷ ইরানের এই সিদ্ধান্তের ফলে মধ্য প্রাচ্যে উত্তেজনা আরও বাড়তে বাধ্য৷ তার প্রধান কারণ অবশ্য আমেরিকার ড্রোন হানা এবং তাতে সুলেইমানির মৃত্যু৷
ইরানের সঙ্গে জাতিসংঘের পাঁচ স্থায়ী সদস্য আমেরিকা, রাশিয়া, চীন, গ্রেট ব্রিটেন ও ফ্রান্স এবং জার্মানির পরমাণু চুক্তি হয়েছিল৷ বছর দুয়েক আগে আমেরিকা একতরফাভাবে এই চুক্ত থেকে বেরিয়ে আসে৷ তারপর থেকে চুক্তি নিয়ে সমস্যা দেখা দিয়েছে। কিন্তু এ বার আমেরিকার হানায় সোলেইমানির মৃত্যুর পর ইরান কড়া অবস্থান নেওয়ায় চুক্তির ভবিষ্যৎ নিয়ে রীতিমতো সংশয় দেখা দিল৷ ইউরোপের দেশগুলি এখন চুক্তি বঁচানোর জন্য ইরানের সঙ্গে কথা বলতে চাইছে৷ ইরানের বিদেশমন্ত্রী মহম্মদ জাভেদ জারিফকেও ব্রাসেলস ডেকে পাঠানো হয়েছে৷ কিন্তু ইরানের এই অবস্থানের পর সেই চেষ্টায় কোনও ফল হবে কি না, তা নিয়েও সংশয় দেখা দিয়েছে৷
ইরানের তরফে বিবৃতি দিয়ে বলা হয়েছে, তাদের পরমাণু প্রকল্প আর কোনও সীমায় বাঁধা থাকবে না৷ ইউরেনিয়াম শোধনের ক্ষেত্রেই হোক, গবেষণা ও উন্নয়নের ক্ষেত্রেই হোক, কোনও বিধিনিষেধ তারা মানবে না৷ বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ''এখনও পর্যন্ত ইরানের পরমাণু প্রকল্প শুধুমাত্র প্রযুক্তি ভিত্তিক ছিল৷''
ইঙ্গিতটা স্পষ্ট। এতদিনের বন্ধন এ বার ছিন্ন করে পরমাণু অস্ত্র বানাবার দিকে এগোতে চাইছে ইরান। আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের আঘাত হানার সিদ্ধান্ত রীতিমতো নড়িয়ে দিয়েছে ইরানকে৷ এতদিন পর্যন্ত ইরানের অবস্থান ছিল তারা মাত্র পাঁচ শতাংশ ইউরোনিয়ামকে সমৃদ্ধ করার কাজ করত, সেটাও পারমাণবিক জ্বালানি তৈরি করার জন্য৷ পারমাণবিক শক্তি প্রকল্পের জন্য এই জ্বালানি দরকার৷ কিন্তু ইরান আর এই সীমার মধ্যে থাকতে রাজি নয়৷ এরপরই জার্মানি, ফ্রান্স, ব্রিটেন তাঁদের সংয়ত থাকার অনুরোধ করছে৷ জার্মান চ্যান্সেলার আঙ্গেলা ম্যার্কেল, ফরাসি প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাক্রোঁ, ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন একটি বিবৃতিতে বলেছেন, ''আমরা ইরানকে অনুরোধ করছি, তারা যেন এমন কিছু না করে য়া পরমাণু চুক্তি বিরোধী৷ ইরান যেন কোনও সহিংসতা না করে ও কোনওরকম হিংসায় মদত না করে৷ এখন উত্তেজনা কমানোটাই অত্যন্ত জরুরি৷ তই সবাইকে সযত থাকতে হবে৷''
প্রশ্ন হল, এই আবেদনে ইরান সাড়া দেবে কি, না কি তাঁরা আন্তর্জাতিক চাপের মুখে পিছু হঠবে?
জিএইচ/এসজি(রয়টার্স)