পরমাণু আলোচনা শুরু
১৫ অক্টোবর ২০১৩পশ্চিমা বিশ্বের ধারণা, ইরানের পরমাণু কর্মসূচির উদ্দেশ্য পারমাণবিক অস্ত্র নির্মাণ৷ আর সে কারণেই জেনেভার এই বৈঠক৷ যেখানে নিরাপত্তা পরিষদের পাঁচ স্থায়ী সদস্য যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, চীন, ব্রিটেন, ফ্রান্স এবং জার্মানির প্রতিনিধিরা অংশ নিচ্ছেন৷
ইরানের পক্ষে নেতৃত্ব দিচ্ছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোহাম্মদ জাওয়াদ জারিফ স্বয়ং৷ তবে উদ্বোধনী অনুষ্ঠান ছাড়া বাকি আলোচনার দায়িত্বে থাকছেন উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাকচি৷ আর অনুষ্ঠানটির সঞ্চালনার দায়িত্বে আছেন ইউরোপীয় ইউনিয়নের শীর্ষ কূটনীতিক ক্যাথরিন অ্যাশটন৷
সমৃদ্ধকরণ কর্মসূচিতে বিরোধ
পশ্চিমা বিশ্বের সবচেয়ে বেশি মাথাব্যথা ইরানের পরমাণু সমৃদ্ধকরণ কর্মসূচি৷ সেটাই আলোচনার মূখ্য বিষয়বস্তু৷ ইরান প্রথম থেকেই জানিয়েছে যে, একমাত্র জ্বালানি উৎপাদন এবং গবেষণার জন্যই তাদের এই কর্মসূচি৷ তবে এটাও ঠিক যে, এই সমৃদ্ধকরণের মাধ্যমে পরামাণবিক অস্ত্র নির্মাণও সম্ভব৷ তেহরানের অবশ্য দাবি যে, তারা সে পর্যায়ে সমৃদ্ধকরণ কর্মসূচি চালাচ্ছে না৷ তারা শুধুমাত্র নিম্ন মাত্রায় কয়েক টন ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করছে৷ যদিও এই ইউরোনিয়াম বারংবার সমৃদ্ধ করতে থাকলে দীর্ঘ সময় পর তা পরমাণু অস্ত্র তৈরির পদার্থে পরিণত হতে পারে৷
বিশেষজ্ঞদের মতে, ইরান এমন একটি পারমাণবিক চুল্লিতে কাজ করছে, যেটা সম্পন্ন হলে এক বছরে একটি বা দুটি পারমাণবিক অস্ত্রের জন্য প্লুটোনিয়াম উৎপাদন সম্ভব৷ তেহরানের যুক্তি, ঐ চুল্লিতে চিকিৎসা বিজ্ঞানের জন্য ‘আইসোটোপ' বানানো হচ্ছে, যে কাজ আগামী বছরের মধ্যে সম্পন্ন হবে৷ ওদিকে জাতিসংঘের আনবিক শক্তি সংস্থা বলছে, প্লুটোনিয়ামকে পরিবর্তনের মাধ্যমে পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি সম্ভব৷ তবে প্লুটোনিয়াম পরিবর্তনের মতো কোনো ব্যবস্থা ইরানের কাছে আদৌ আছে কিনা – সে সম্পর্কে কোনোরকম তথ্য-প্রমাণ তাদের হাতে নেই৷
অবস্থানের ভিন্নতা
ইরান চাইছে এই আলোচনার মাধ্যমে তাদের উপর তেল রপ্তানি ও বাণিজ্যের যে নিষেধাজ্ঞা আছে তা উঠিয়ে নেয়া হবে৷ ইরানের প্রস্তাব, অস্ত্র তৈরির জন্য ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করতে হয় কমপক্ষে ২০ ভাগ, যা বন্ধ করতে ইরান প্রস্তুত৷ এমনকি, ইরানের পরমাণু স্থাপনাগুলি পরিদর্শনের ব্যাপারে জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞদের বিশেষ অনুমতি দেওয়ারও ইঙ্গিত দিয়েছে তারা৷
এতেও কিন্তু সন্তুষ্ট নয় পশ্চিমা বিশ্ব৷ তাদের দাবি, ইরানের পরমাণু সমৃদ্ধকরণ কর্মসূচি পুরোপুরি বন্ধ করতে হবে৷ এমনকি পরবর্তিতে অস্ত্রে রূপান্তর সম্ভব এমন সমৃদ্ধজাত ইউরেনিয়াম সরিয়ে ফেলার আহ্বানও জানিয়েছে তারা৷
আরাকচি বলেছেন, তেহরান পরমাণু সমৃদ্ধকরণের জন্য ব্যবহৃত পদার্থ অন্যত্র পাঠাবে না৷ ওদিকে, ছ'টি দেশ ইরানের অন্যতম পারমাণবিক চুল্লিটি বন্ধের দাবি জানিয়েছে৷ তাদের ধারণা, সেখানেই ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করে তেহরান পারমাণবিক অস্ত্র নির্মাণ করতে পারে, যা ধ্বংস করা বেশ কঠিন৷ এমনকি যে চুল্লিতে প্লুটোনিয়াম তৈরি হবে, সেটার নির্মাণ কাজ বন্ধ রাখার প্রস্তাব দেয়া হয়েছে৷
ইসরায়েলের শর্ত
অন্যদিকে, আলোচনা শুরুর মাত্র কয়েক ঘণ্টা আগে ইরানের ওপর যে অবরোধ আছে তা শিথিল না করার জন্য আলোচনায় অংশগ্রহণকারী দেশগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছে ইসরায়েল৷ অবরোধ শিথিলের জন্য ইসরায়েলের চারটি শর্ত হলো, ইরানের সব ধরনের পরমাণু সমৃদ্ধকরণ কর্মসূচি বন্ধ করা, তেহরান থেকে সমৃদ্ধ সব ইউরেনিয়াম সরিয়ে ফেলা, কোমে ভূ-গর্ভস্থ পারমাণবিক কর্মসূচি বন্ধ করা এবং প্লুটোনিয়াম চুল্লির নির্মাণ কাজ বন্ধ করা৷
১৯৭৯ সালের পর গত মাসে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা ও ইরানের প্রেসিডেন্ট হাসান রোহানির মধ্যে টেলিফোনে প্রথম সরাসরি আলোচনা হয়৷ তাই এবারের আলোচনা ফলপ্রসূ হতে পারে বলে আশা করছেন বিশ্লেষকরা৷
এপিবি/ডিজি (এপি/এএফপি/রয়টার্স)