ইরাক আগ্রাসনের ১৬ বছর
গত ২০ মার্চ পূর্ণ হলো যুক্তরাষ্ট্র নেতৃত্বাধীন যৌথ বাহিনীর ইরাক আগ্রাসনের ১৬ বছর৷ বিশ্ব রাজনীতিতে যার প্রভাব ছিল সুদূর প্রসারী৷
বুশ প্রশাসনের পরিকল্পনা
২০০২ সালের ১১ অক্টোবর প্রেসিডেন্ট জর্জ ডাব্লিউ বুশকে ইরাকের বিরুদ্ধে সামরিক শক্তি ব্যবহারের অনুমতি দেয় মার্কিন কংগ্রেস৷ সাদ্দাম হোসেনের কাছে গণবিধ্বংসী অস্ত্র আছে – এমন তথ্য দিয়ে এই যুদ্ধের অনুমতি চান বুশ প্রশাসন৷ ২০০৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইরাকের বিরুদ্ধে সামরিক হামলার জন্য জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে আন্তর্জাতিক সহযোগিতার আহ্বান জানান৷
শুরু হল আক্রমণ
২০ মার্চ ২০০৩ সালে যুক্তরাষ্ট্র নেতৃত্বাধীন সামরিক বাহিনী সাদ্দাম হোসেনকে উৎখাতে কুয়েত থেকে ইরাকের উপর হামলা শুরু করে৷ সপ্তাহ খানেকের মধ্যেই ইরাকের সামরিক আস্তানা তারা গুড়িয়ে দেয়৷
বাগদাদ দখল
আক্রমণ শুরুর ২০ দিনের মাথায় ইরাকের রাজধানী বাগদাদের পতন হয়৷ আত্মগোপন করেন সাদ্দাম হোসেন৷ আইন-শৃঙ্খলার ব্যাপক অবনতি হয় সেখানে৷ যা ফেরাতে ব্যর্থ হয় যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনী৷
যুদ্ধের সমাপ্তি
এক মে প্রেসিডেন্ট বুশ ‘ইরাক যুদ্ধের’ সমাপ্তি ঘোষণা করেন৷ তিনি বলেন, ‘‘এই যুদ্ধে আমরা এবং আমাদের মিত্ররা বিজয়ী হয়েছি৷’’ যুদ্ধে নিয়োজিত আব্রাহাম লিংকন এয়ারক্রাফট ক্যারিয়ার থেকে এই ঘোষণাটি দেন৷ ছবিতে ক্রদের সাথে তাঁকে বিজয় উদযাপন করতে দেখা যাচ্ছে৷
ধরা পড়লেন সাদ্দাম
১৩ ডিসেম্বর ২০০৩ সালে তিকরিতের কাছের একটি গুহা থেকে মার্কিন সৈন্যরা সাদ্দাম হোসেনকে আটক করে৷ এ সময় তার মুখ ভর্তি ছিল দাড়িতে৷ ১৪৮ জনকে হত্যার অভিযোগে দুই বছরের মাথায় তাকে ফাঁসিতে ঝোলানো হয়৷
আবু গারিব কাণ্ড
ইরাক দখলের পর বাগদাদের কাছের আবু গারিব কারগারকে বন্দীশালা হিসেবে ব্যবহার করে মার্কিন বাহিনী৷ ২০০৪ সালের এপ্রিলে এই কারাগারের বন্দীদের উপর মার্কিন সেনাদের অমানবিক আচরণের ছবি গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়৷ যার কারণে আন্তর্জাতিকভাবে ব্যাপক সমালোচনায় পড়ে যুক্তরাষ্ট্র৷
বিদ্রোহী গোষ্ঠীর উত্থান
মার্কিন বাহিনীর বিরুদ্ধে ইরাকে বিদ্রোহী গোষ্ঠীর উত্থান হয় ২০০৩ সালের শেষ থেকেই৷ ফাল্লুজা সহ সুন্নী মুসলিম অধ্যুষিত অঞ্চলগুলোতে ব্যাপক সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে৷ শুরু হয় আত্মঘাতি বোমা হামলা৷
সৈন্য প্রত্যাহার
১৭ নভেম্বর ২০০৮ সালে ইরাক এবং যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে সৈন্য প্রত্যাহারের চুক্তি হয়৷ সে অনুযায়ী, ২২ মে ২০১১ সালে ব্রিটিশ বাহিনী ইরাক ছাড়ে৷ একই বছরের ডিসেম্বরের ১৮ তারিখ মার্কিন সৈন্যরা ইরাক ত্যাগ করে৷
গণবিধ্বংসী অস্ত্র কোথায়?
যেই অজুহাতে ইরাক আক্রমণ করেছিল যুক্তরাষ্ট্র সেই গণবিধ্বংসী অস্ত্রের শেষ পর্যন্ত সন্ধান মেলেনি৷ ২০০৪ সালের ২৮ জানুয়ারিতেই মার্কিন অস্ত্র অনুসন্ধানকারী ডেভিড কে কংগ্রেসকে জানান ইরাকের গণবিধ্বংসী অস্ত্রের ব্যাপারে ‘‘আমরা সম্পূর্ণ ভুল ছিলাম’’৷
মানবিক বিপর্যয়
এই আগ্রাসণে কমপক্ষে ১,৩৪,০০০ বেসামরিক নাগরিকের মৃত্যু হয়েছে বলে গবেষণা তথ্য রয়েছে৷ সব মিলিয়ে মৃতের সংখ্যা ১,৭৬,০০০ থেকে ১,৮৯,০০০ হাজারে হতে পারে৷