ইবোলার টিকা?
১৩ জানুয়ারি ২০১৫ক্যানাডায় এক হাই সিকিউরিটি ল্যাবে জার্মানির এক ভাইরোলজিস্ট-এর অংশগ্রহণে ইবোলার টিকা তৈরি হয়েছিল৷ প্রাণীর উপর তা পরীক্ষাও করা হয়েছে৷ বিপজ্জনক এই ভাইরাস সংক্রমণের আগে তাদের টিকার মাধ্যমে সুরক্ষা দেওয়া হয়েছিল৷ অথচ ১০ বছর পরেও সিয়েরা লিওন ও অন্যান্য ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার মানুষ এই ভাইরাসের সামনে অসহায় হয়ে পড়েছে৷ কারণ সেই টিকা আর পরীক্ষা করা হয়নি৷ ব্যয়বহুল এই প্রক্রিয়ার জন্য বাজারও যথেষ্ট বড় ছিল না৷ ফলে এখন রোগ শনাক্ত করা ছাড়া অন্য কোনো উপায় নেই৷
পরীক্ষায় ভাইরাস ধরা পড়লে জানতে হবে যে ইবোলা মানুষের কোষে তার জিনোম প্রবেশ করিয়ে বংশবৃদ্ধি ঘটাতে পারে৷ টিকা মানুষের শরীরকে এই ভাইরাসের বিরুদ্ধে সংগ্রামে শক্তিশালী করে তুলতে পারে৷
লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়ের পিটার পায়ট প্রায় ৪০ বছর আগে অন্যান্য গবেষকদের সঙ্গে এই ভাইরাস আবিষ্কার করেছিলেন৷ তিনি বলেন, ‘‘ইবোলা ভাইরাস সব ইন্দ্রিয় আক্রমণ করলে এবং সব ইন্দ্রিয় ‘ফেল' করলে রক্তপাত হতে পারে৷ তবে সব সময়ে নয়৷ তাই একে ‘হেমোরব়্যাজিক ফিভার' বলা হয়৷ সাধারণত লক্ষণ দেখা দেবার এক সপ্তাহ পর মৃত্যু ঘটে৷''
এই রোগ সারিয়ে তোলার কোনো ওষুধ নেই৷ গোটা বিশ্বে ১০টি এমন ওষুধ তৈরির চেষ্টা চলছে৷ কিন্তু সেগুলি এখনো ছাড়পত্র পাবার প্রক্রিয়া পেরোতে পারছে না৷ তবে কিছু রোগীর উপর এর পরীক্ষামূলক প্রয়োগ ঘটছে৷ কখনো কখনো সাফল্যও আসছে৷ একটি ওষুধ সম্পর্কে বিশেষজ্ঞরা আশাবাদী৷
একাধিক ওষুধের এই প্যাকেজ ভবিষ্যতে ইবোলা ভাইরাসকে হয়ত ছড়িয়ে পড়তে দেবে না৷ এর মধ্যে রয়েছে ক্যানাডায় তৈরি টিকার ৮০০ অ্যামপিউল৷ অবশেষে মানুষের উপরও তা পরীক্ষা করা হচ্ছে৷ এর সুবিধা হলো ইবোলা সংক্রমণের দুই দিন পরেও এই ওষুধ কাজ করতে পারে৷ ক্যানাডায় তৈরি টিকা ও অন্য একটি ওষুধ ছাড়পত্র পাবার দৌড়ে সবচেয়ে বেশি এগিয়ে রয়েছে৷ দ্বিতীয়টি তৈরি করেছে ওষুধ কোম্পানি গ্ল্যাক্সো স্মিথ ক্লাইন৷
দুটি টিকার তথাকথিত প্রথম পর্যায়ের পর্যবেক্ষণের ফলাফল ইতিবাচক হলে আগামী বছরের শুরুতে কয়েক লক্ষ বোতল বাজারে আসতে পারে৷ এছাড়া আরও টিকা তৈরির প্রক্রিয়া চলছে৷ রাশিয়া ও চীনেও কাজ চলছে৷
ইবোলার বিরুদ্ধে সংগ্রামের ক্ষেত্রে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা কোনো বিলম্ব চাইছে না৷ ডাব্লিউএইচও-র মারি পল কিয়েনি বলেন, ‘‘চলমান ফেজ ওয়ান ক্লিনিকাল ট্রায়ালের ফলাফলের জন্য অপেক্ষা না করে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলিতে ডিসেম্বর মাসেই সব সহযোগীরা পরীক্ষা শুরু করছে৷''
বর্তমান মহামারির ক্ষেত্রে এই টিকা অবশ্য আর কাজে লাগবে না৷ রোগের প্রসার রুখতে ক্ষতিগ্রস্ত দেশের মানুষকে সঠিক আচরণ শিখতে হবে৷ যেমন ইবোলা রোগীদের অন্যান্য রোগীদের কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন রাখতে হবে এবং কোয়ারেন্টাইন করে তাদের চিকিৎসা করতে হবে৷