ইন্টারনেটে আসক্তি কমাতে জার্মানিতে চলছে ভাবনা-চিন্তা
২৯ সেপ্টেম্বর ২০১১জার্মানিতে নাকি প্রায় ৫ লক্ষ মানুষ ইন্টারনেটের নেশায় বুঁদ হয়ে আছেন৷ অর্থাৎ লটারির নেশা যাদের রয়েছে, তাদের তুলনায় দ্বিগুণেরও বেশি এই সংখ্যা৷ তবে ইন্টারনেটের নেশায় কে ঠিক কতটা আসক্ত রয়েছে, তার মধ্যে হেরফের রয়েছে৷ তাছাড়া নির্ভরযোগ্য তথ্য-পরিসংখ্যান না থাকায় এক্ষেত্রে গবেষণাও এখনো পরিণত অবস্থায় পৌঁছয় নি৷ তবে জার্মানির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বিষয়টিকে মোটেই হাল্কাভাবে দেখছে না৷ তাই আধুনিক যুগের এই শক্তিশালী মাধ্যমের প্রভাব সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে তারাও তথ্য সংগ্রহ করতে আসরে নেমেছে৷ যেসব মানুষ ইন্টারনেটে আসক্ত হয়ে পড়েছেন বলে সন্দেহ করা হচ্ছে, তাদের আপাতত টেলিফোনে কিছু প্রশ্ন করা হচ্ছে৷ বিজ্ঞানীরা ভেবেচিন্তে প্রশ্নগুলি স্থির করছেন৷
তাদেরই একজন হান্স-ইয়ুর্গেন রুম্ফ৷ তিনি জানালেন, ‘‘যেমন আমরা জানার চেষ্টা করি, স্কুলে বা পেশার ক্ষেত্রে সামাজিক কার্যকলাপ খুব কম কি না৷ এটা অত্যন্ত জরুরি একটা বিষয়, কারণ এই ধরণের মানুষের ক্ষেত্রে আসক্তি মারাত্মক আকার ধারণ করে৷ তাদের চিকিৎসার প্রয়োজন হয়৷ আমরা শুধু জানি যে এই গোষ্ঠীর মধ্যে ইন্টারনেটে আসক্তির আশঙ্কা বেশি৷ তবে সেই আসক্তির মাত্রা সম্পর্কে আমাদের এখনো স্পষ্ট ধারণা নেই৷''
আসক্তি সংক্রান্ত গবেষকরা এই ধরণের মানুষের একটা চিত্র স্থির করেছেন৷ যে কোনো সময় এদের দেখলেই মনে হয় এরা বড় ক্লান্ত৷ পোশাক-আশাক সম্পর্কে তারা উদাসীন, শরীরের যত্ন নেওয়ার কোনো লক্ষণও দেখা যায় না৷ এদের ঘরে চারিদিকে পিৎসা'র খালি বাক্স পড়ে থাকে৷ আশেপাশে কী হচ্ছে, তা নিয়ে এদের মাথাব্যথা নেই৷ কিছু বললে উল্টে চটে যেতে পারে৷ যারা মদের নেশায় চুর হয়ে থাকে, তাদের কাছ থেকে মদের বোতল কেড়ে নেওয়া যায়৷ কিন্তু ইন্টারনেটে আসক্ত মানুষের ক্ষেত্রে তা করা যায় না৷
রুম্ফ এবিষয়ে বললেন, ‘‘আমার মনে হয় ইন্টারনেট এমন এক মাধ্যম, যা পেশাগত কারণেও আমাদের প্রয়োজন হয়৷ ইন্টারনেট'কে এমন সব কাজে লাগানো হয়, যা মোটেই আসক্তির কারণ হতে পারে না৷ অ্যালকোহলের দাম বাড়িয়ে আসক্ত মানুষের নাগালের বাইরে রাখা যায় বটে, কিন্তু ইন্টারনেটের ক্ষেত্রে এই কৌশল চলতে পারে না৷''
জার্মান সরকারের মাদকাশক্তি মোকাবিলার দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জানালেন, সরকারের পক্ষ থেকে এক নির্দেশিকা প্রকাশ করা হয়েছে, যাতে ইন্টারনেট ব্যবহারের বিভিন্ন সুফল ও কুফল তুলে ধরা হয়েছে৷ অর্থাৎ যারা নিজের অজান্তেই ইন্টারনেটের প্রতি আসক্ত হয়ে পড়তে পারে, তাদের আগেভাগেই সতর্ক করে দিতে উদ্যোগ নিচ্ছে সরকার৷ তাছাড়া আসক্ত মানুষদের জন্য বিশেষ চিকিৎসারও ব্যবস্থা রয়েছে৷ তাদের পুরোপুরি ইন্টারনেট থেকে দূরে রাখা হয় না, বরং ইন্টারনেট ব্যবহারের উপর নিয়ন্ত্রণ চাপানো হয়৷ যেমন তাদের গেমস খেলতে দেওয়া হয় না বা বিশেষ কিছু কার্যকলাপ থেকে বিরত রাখা হয়, যা তাদের আটকে রাখতে পারে৷
জার্মানিতে সাম্প্রতিক সমীক্ষায় আশ্চর্যজনক ফলাফল পাওয়া গেছে৷ যেমন প্রায় ১৫,০০০ ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর মধ্যে ১৪ থেকে ১৬ বছর বয়সী মেয়েদের মধ্যে সমবয়সী ছেলেদের তুলনায় প্রায় ৫ শতাংশ বেশি আসক্তি লক্ষ্য করা গেছে৷
সমস্যাটা জার্মানির একার নয়, আন্তর্জাতিক স্তরেও এবিষয়ে নানারকম ভাবনা-চিন্তা চলছে৷ গবেষকরা বৈজ্ঞানিক ও চিকিৎসাগত দিক থেকে এমন এক কাঠামো সৃষ্টি করার চেষ্টা করছেন, যার আওতায় এই সমস্যার মোকাবিলা করা যায়৷ রাতারাতি কোনো সাফল্যের আশা না করলেও দীর্ঘমেয়াদী ভিত্তিতে এক্ষেত্রে উন্নতির আশা করছেন হান্স-ইয়ুর্গেন রুম্ফ৷ তিনি বললেন, ‘‘আমরা নেদারল্যান্ডস'এর গবেষকদের সঙ্গে মিলে মূল্যায়ন করেছি৷ সবাই এক্ষেত্রে একটি সাধারণ মানদণ্ড সৃষ্টি করতে আগ্রহী৷ তবে এটা সময়ের প্রশ্ন৷ আরও অনেক গবেষণার প্রয়োজন রয়েছে, যাতে আমরা পুরোপুরি নিশ্চিতভাবে সমস্যা সনাক্ত করতে পারি৷''
প্রতিবেদন: সঞ্জীব বর্মন
সম্পাদনা: দেবারতি গুহ