ইটালির ভূমিকম্পে নিহতদের রাষ্ট্রীয় শেষকৃত্য অনুষ্ঠান
১০ এপ্রিল ২০০৯হাজার-হাজার শোকার্তদের চোখের সামনে ফুল এবং নিহতদের ছবি দিয়ে সাজানো কফিন সারি দিয়ে রাখা রয়েছে পাহাড়ী শহর লাকিলা'র একটি পুলিশ প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের কুচকাওয়াজের মাঠে৷ সোমবারের ৬.৩ শক্তির ভূমিকম্পে সর্বাধিক ক্ষতিগ্রস্ত লাকিলা এবং তার পার্শ্ববর্তী অঞ্চলের প্রায় কোনো গির্জাই অক্ষত নেই৷ থাকলেও তাদের কোনোটিতেই এতোগুলি মরদেহ অথবা এতো শোকার্ত ধরত না৷
বাবা-মা'য়েদের কফিনের উপর ছোটদের কফিন
একেবারে ছোটদের দেহগুলি ছোট ছোট সাদা কাস্কেটে করে তাদের বাবা'মায়ের কফিনের উপর রাখা ছিল৷ কোনো কোনো কাস্কেটের উপর রাখা ছিল চলে যাওয়া ছোট্ট মানুষটির প্রিয় খেলনা৷ তাদের মধ্যে যে সবচেয়ে ছোট, একটি পাঁচ মাস বয়সের শিশু, সে মারা গেছিল তার মা'য়ের সঙ্গে৷
শোকার্তদের অনেকেই কফিন চুম্বন করেন, ইতালীর প্রধানমন্ত্রী সিলভিও বার্লুস্কোনি তাদের সান্ত্বনা দেন৷ ভ্যাটিকানের দ্বিতীয় সর্ব্বোচ্চ যাজক কার্ডিনাল টার্সিসিও বের্তোনি ক্যাথলিক প্রার্থনাসভাটি পরিচালনা করেন৷ পোপ ষোড়শ বেনেডিক্টের একটি বার্তা পড়ে শোনানো হয়, যা'তে পোপ বলেন, যে তিনি আত্মিকভাবে শোকার্তদের মধ্যে উপস্থিত রয়েছেন এবং তাদের ব্যথাবেদনার অংশ নিচ্ছেন৷ দিনটি জাতীয় শোক দিবস ঘোষিত হওয়ায় সারা দেশে পতাকা অর্ধনমিত, বেশ কিছু দোকানপাট বন্ধ, এমনকি এক মিনিট নীরবতা পালনের সময় বিমানবন্দরগুলিতেও উড়াল বন্ধ রাখা হয়৷
সর্বশেষ পরিস্থিতি
ভূমিকম্পের পাঁচদিন পরে উদ্ধারকর্মীরা এখনও ইঁট-কাঠ-পাথর সরিয়ে চলেছেন৷ গতরাত্রেও এক ৫৩ বছর বয়সী মহিলা ও তাঁর কিশোরী কন্যাকে মৃত অবস্থায় তাদের বাড়ীর ধ্বংসাবশেষে খুঁজে পাওয়া গেছে৷ নয়তো নিখোঁজ ব্যক্তিদের অনুসন্ধান প্রায় সমাপ্ত হতে চলেছে৷ দমকলকর্মীরা কিছু মানুষকে তাদের বাড়ীতে ফিরে ব্যক্তিগত জিনিষপত্র সংগ্রহ করতে দিয়েছে৷ অপরদিকে পুলিশ লুটতরাজের উপর চোখ রাখছে৷ ভূমিকম্প পরবর্তী পর্যায়ক্রমে ভূকম্পন এখনও বন্ধ হয়নি৷ ১৭,০০০ মানুষ ত্রাণশিবিরের তাঁবুতে দিন কাটাচ্ছে, হোটেলে রাখা হয়েছে আরো অনেককে৷ বহু নতুন বাড়ী ভেঙে পড়ার কারণ বাজে মালমশলা হতে পারে, ইতালীর প্রেসিডেন্ট গিয়র্গিও নাপোলিতানো স্বয়ং এই সন্দেহ প্রকাশ করার পর সরকার ব্যাপারটি তদন্তের নির্দ্দেশ দিয়েছেন৷
কিন্তু খৃষ্টানদের পবিত্র ঈস্টার পরবের প্রায়াহ্নে কার্ডিনাল বের্তোনি তাঁর ভাষণে বলেন, ধ্বংসস্তূপের নীচে আবার নবসূচনার, পুনর্নির্মাণের এবং নতুন স্বপ্নের আভাস পাওয়া যাচ্ছে৷ অপরদিকে জার্মানী প্রায় পুরোপুরি ধ্বংসপ্রাপ্ত ওন্না গ্রামের অষ্টাদশ শতাব্দীর গির্জাটি নতুন করে গড়ে তুলতে সাহায্য করবে বলে জানিয়েছে৷
প্রতিবেদক: অরুণ শঙ্কর চৌধুরী, সম্পাদনা: আবদুল্লাহ আল-ফারুক