ইচ্ছামৃত্যু: মৃত্যু বরণের ‘মানবাধিকার’
৬ নভেম্বর ২০১৪নিজের ইচ্ছায় মৃত্যু হলেও সাধারণভাবে আমরা যাকে ‘আত্মহত্যা' বলি, ঠিক সেরকম নয় বলে ইচ্ছামৃত্যুর একেক দেশে একেক নাম৷ যুক্তরাষ্ট্রে এর নাম হয়েছে ‘ডেথ উইথ ডিগনিটি'৷ যুক্তরাষ্ট্রের মাত্র পাঁচটি রাজ্যেই শুধু দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত ব্যক্তি নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে মৃত্যুকে বরণ করে নিতে পারেন৷ ইচ্ছামৃত্যু বরণ করতে ইচ্ছুকদের আন্তর্জাতিক সংগঠনও রয়েছে, নাম ‘ওয়ার্ল্ড ফেডারেশন অফ রাইট টু ডাই সোসাইটিজ'৷ অবাক লাগে৷ খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা, চিকিৎসা, নিরাপত্তা, মানসম্মান – এ সব অধিকারের জন্য যুগ যুগ ধরে লড়ছে মানুষ৷ এখন মরার জন্যও লড়ছে৷
বাঁচার লড়াইয়ের চেয়ে অনেক কঠিন সে লড়াই৷ একটা মানুষ জেনে গেছে তাঁর ধুঁকে ধুঁকে মৃত্যু অনিবার্য এবং অচিরেই আসবে ওপারের ডাক৷ এই পৃথিবীকে, প্রিয় পরিজনকে তিনিও ভালোবাসেন৷ ভালোবাসার এ বন্ধন ছিন্ন হবে৷ তার আগে যন্ত্রণা টেনে টেনে নেবে মৃত্যুর দিকে৷ ওই যন্ত্রণা থেকে বাঁচতেই মৃত্যুকে তাড়াতাড়ি কাছে টেনে নেওয়া৷ যিনি নেবেন, তিনি জানবেন৷ তাঁর মা-বাবা জানবেন, সন্তান তাঁদের ছেড়ে যাচ্ছে স্বেচ্ছায়৷ অন্যরাও জানবেন৷ এবং অনিচ্ছায় হলেও ইচ্ছামৃত্যুতে সায়ও দিতে হবে সবাইকে৷ একটি জীবনের ‘কাউন্টডাউন' একযোগে চলতে থাকবে সবার মনে৷ সাধারণ আইন এখানে অসহায়৷ মানবাধিকারের সাধারণ নিয়ম-নীতি অকেজো৷ চিকিৎসা বিজ্ঞান যেখানে বলছে রোগীর আর বাঁচার আশা নেই, রোগী নিজেও যেখানে মৃত্যুতেই খুঁজছেন ‘গৌরব', কে ঠেকাবে তাঁকে!
ব্রিটানি মেনার্ডকে ফেরানো যায়নি৷ মস্তিষ্কের ক্যানসার বাকশক্তি প্রায় কেড়ে নিয়েছিল৷ ধীরে ধীরে শরীরের অন্যান্য অঙ্গ-প্রত্যঙ্গও যেত৷ তাঁকেও যেতেই হতো৷
জীবন কখনো কখনো মূল্যহীন বোঝা হয়ে ওঠে৷ ক্যানসার জীবনের সব হাসি কেড়ে সেদিকেই নিচ্ছিল৷ তাই মাত্র ২৯ বছর বয়সেই তাঁরও মনে হয়েছে, ‘‘মরণ রে, তুঁহুঁ মম শ্যামসমান'৷ ওরিয়নের আইন তাঁকে দিয়েছে মৃত্যুকে স্বাগত জানানোর অধিকার, ডাক্তারকে দিয়েছে মৃত্যু ত্বরান্বিত করতে সহায়তার অধিকার৷ স্থানভেদে, বিশেষ পরিস্থিতিতে এ-ও ‘মানবাধিকার'৷ মানতেই হবে৷